কুয়াকাটা-সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ১৬টি ট্রলারডুবির ঘটনায় ১৯৬ জেলে নিখোঁজ ও তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে নিজামপুর কোস্ট গার্ডে দায়িত্বরত লে. শাফিউল কিঞ্জর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত শুক্রবার দুপুর থেকে ১০টা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটে। অপরদিকে বরগুনার পাথরঘাটা থেকে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ৪০০ জেলেসহ ৪১টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্তত ১৫০ জেলেসহ ১০টি মাছধরার ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩৪ জন জেলে। এদিকে নিম্নচাপের কারণে গত বৃহস্পতিবার থেকে সাগর উত্তাল থাকায় বেশ কিছু ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে নিখোঁজ ট্রলার মালিকদের বরাত দিয়ে বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুম মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে বরগুনার পাথরঘাটা পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুজন হাওলাদারের মালিকানাধীন এফবি হাওলাদার নামের একটি ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটলেও তাদের ১৭ জেলেকে অন্য একটি ট্রলার উদ্ধার করে পাথরঘাটা বিএফডিসি ঘাটে নিয়ে এসেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ট্রলার মালিক, ট্রলার ও জেলেদের নাম জানা যায়নি।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জেলেদের সন্ধানে বেশ কয়েকটি ট্রলার উদ্ধার অভিযানে কাজ করে যাচ্ছে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে জেলেসহ ট্রলারগুলো সাগরে ডুবে যেতে পারে। বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. পাথরঘাটা আনছার খানের মালিকানাধীন ট্রলারের মাঝি ইসমাইল হোসেন ডুবে যাওয়া ট্রলারের জেলেদের ভাসতে দেখে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছে। উদ্ধারকৃত জেলেরা সুস্থ আছেন। তবে এখন পর্যন্ত ডুবে যাওয়া সেই ট্রলারের সন্ধান পাওয়া যায়নি। হঠাৎ করে প্রচণ্ড ঝড় শুরু হওয়ার পর ওই ট্রলারগুলো নিখোঁজ হয়। এ কারণে ট্রলারগুলো ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কেএম শাফিউল কিঞ্জর বলেন, গত ২ দিন ধরে নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় অনেক ট্রলার ডুবি ও জেলে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা শুনেছি। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে পাথরঘাটা, হাতিয়া, চরফ্যাশন, নিজামপুর, পায়রা পোর্টসহ মোট ৬টি টিম গভীর সমুদ্রে জেলেদের উদ্ধার অভিযানে রয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে এ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে যা সারাদিন চলমান থাকবে। তিনি বলেন, ট্রলার মালিক সমিতি থেকে বলা হয়েছে ৪১টি ট্রলার নিখোঁজ রয়েছে। তবে আমরা ট্রলারের জেলেদের নাম সংগ্রহ করার কাজ করছি। আমাদের কাছে নাম আসছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৮২ জন নিখোঁজ জেলের নাম আমাদের হাতে এসেছে।
জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে পটুয়াখালীর ১১টি মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় ২১ জেলে নিখোঁজ রয়েছে। এ ছাড়া জেলার পাঁচ শতাধিক জেলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ৩০টি ট্রলারের। এরই মধ্যে প্রায় ১২৯ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত জেলেরা কুয়াকাটা ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল ও মহিপুর উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ বিষয়ে লে. শাফিউল কিঞ্জর জানান, এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬টি ট্রলার নিখোঁজের সংবাদ পেয়েছি। হাতিয়া উপজেলায় তিনজনের লাশ ও অন্যান্য এলাকায় ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬ জন জেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে অন্তত ১৫০ জেলেসহ ১০টি মাছধরা ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এখনো নিখোঁজ রয়েছে ৩৪ জন জেলে। গত শুক্রবার দুপুর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্টে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আলীপুর-কুয়াকাটা মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা ও মহিপুর আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি রাজু আহমেদ রাজা। এদিকে আবহাওয়ার খারাপ থকায় সহশ্রাধিক মাছধরা ট্রলার শিববাড়িয়া নদীতে আশ্রয় নিয়েছে।
উদ্ধারকৃত জেলেরা জানান, সাগরের অস্বাভাবিক ঢেউ এবং ঝড়ের কবলে পরে তাদের ট্রলারগুলো ডুবে যায়। এসময় পাশে থাকা অন্য ট্রলারের মাধ্যমে অন্তত ১১৬ জেলে উদ্ধার হলেও নিখোজ হয় ৩৪ জেলে। নিজামপুর কোষ্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার মো. সেলিম মন্ডল জানান, সাগরে ট্রলার ডুবির খবর পেয়েছি। আমাদের টহল টিম সাগরে রয়েছে এবং উদ্ধার অভিযান অব্যাহত আছে। এদিকে বঙ্গোপসাগরের চালনার বয়া এলাকা থেকে ডেউয়ে ট্রলারের তলা ফেটে ডুবে যাওয়া কক্সবাজারের এফবি আমজাদ নামের একটি ট্রলারের ১৭ জেলে উদ্ধার। গত শুক্রবার বিকেল চালনাবয়া এলাকা থেকে ফিরে আসা অন্য একটি ট্রলার এফ বি সাগর কন্যা তাদেরকে গতকাল শনিবার বিকেলে মৎস্য বন্দর মহিপুরে নিয়ে আসে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন