মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে
ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় বগুড়ায় বেশকিছু মানুষ লাভজনক মনে করে গবাদিপশু পালনের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে আশা করা হচ্ছে এবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত গবাদি পশুতেই মিটবে কোরবানিতে গবাদিপশুর চাহিদা। কোরবানির বাজার ধরবেন বলে গবাদিপশু পালন করেছেন এমন একজনের নাম সাখাওয়াত হোসেন, বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার নিমাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা তিনি। জীবিকার প্রয়োজনে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন। বছরের সবসময় হাতে কাজ থাকে না তাদের মত মানুষের। যে পরিমাণ জমি আছে তাতে সারা বছরের খাদ্য চাহিদাও মেটে না। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় চাল কিনে খেতে হয়। অভাবের সংসার। তারপরও কোরবানির হাটকে টার্গেট করে অনেক কষ্টে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ৪টি বাছুর গরু (গরুর বাচ্চা) কেনেন ১ লাখ ১০ হাজার টাকায়। মাস ছয়েকের মধ্যেই গরুগুলোকে লালনপালন করে বেশ মোটাতাজা করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল কোরবানির হাটে সেগেুলো বিক্রি করা। সাখাওয়াত হোসেন তার লক্ষ্যে পৌঁছুতে পেরেছেন। ইতোমধ্যেই ২টি গরু তিনি বিক্রি করেছেন ৯৫ হাজার টাকা। অন্য দুটোও সম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তিনি গরুগুলো লালনপালন করেছেন। এক্ষেত্রে মোটাতাজাকরণের জন্য আলাদা কোন টিকা বা ট্যাবলেট ব্যবহার করেননি তিনি। এবার ভালো লাভ হওয়ায় তিনি খুশি। আগামী বারের জন্য তিনি আরো বেশি গরু পালন করবেন বলেও জানান। একই ভাবে ছোট খামারি আখের ম-ল, তোফাজ্জল হোসেনের সাথেও কথা হয়। তারাও মূলত গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ। বিভিন্ন সময় কাজ করে উপার্জিত টাকা সঞ্চয় করে তারা এবার কয়েকটি গরু কিনেছিল। বর্তমান বাজারে ওই গরুগুলো এখন বিক্রি করলে মোটা অঙ্কের টাকা পাবেন। তারা জানান, পাইকাররা ইতোমধ্যেই তাদের বাড়িতে এসে গরুর দরদাম করছে। সুবিধামত সময় এবং কাক্সিক্ষত মূল্য পেলেই তারা গরু বিক্রি করবে। বগুড়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ে সূত্রে জানা যায়, এবার ঈদুল আজহায় বগুড়ায় প্রায় ৬ লাখ বিভিন্ন জাতের গবাদিপশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত আছে। জেলার মোট ১২টি উপজেলার ১৮ হাজার ৯৯ জন খামারি ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৫শ ৬৩টি গবাদিপশুকে কোরবানি যোগ্য করে তুলেছেন। বগুড়া সদর উপজেলায় ৮৮ হাজার ৯শ ৫৯টি, দুপচাঁচিয়ায় ১৯ হাজার ৭শ ৩৭টি, আদমদীঘিতে ১৯ হাজার ৯শ ২৪টি, সারিয়াকান্দিতে ৫০ হাজার ২২০টি, গাবতলীতে ৫২ হাজার ৬০৯টি, শাজাহানপুর উপজেলায় ৪২ হাজার ৬শ’টি, সোনাতলায় ৫৪ হাজার ২শ ৯৪টি, শিবগঞ্জে ৫৪ হাজার ১শ ১০টি, কাহালুতে ৫২ হাজার ৩শ ৪৭টি, নন্দীগ্রামে ৩২ হাজার ৪শ ৮০টি, শেরপুরে ৫৮ হাজার ৭শ ৯৫টি ও ধুনটে ৪৮ হাজার ৪শ ৮৮টি গবাদিপশু রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪শ ৩৯টি গরু, ৬শ ৮০টি মহিষ, ৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩শ ২৪টি ছাগল ও ৩১ হাজার ১শ ২০টি ভেড়া। খামারিরা তাদের পালিত এসব গরু, মহিষ, ছাগল ভেড়া জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে তুলছে। এদিকে শহরের ক্রেতাদের বাসায় পশু রাখার জায়গা না থাকায় তারা এখনো কেনা শুরু করেনি। তবে হাটবাজারগুলোতে ধারণা নেয়ার জন্য অনেকেই যাচ্ছে। শহরের বাইরের ক্রেতারা ইতোমধ্যেই কেনা শুরু করেছে। তাদের ধারণা শেষ সময়ে এসে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যাবে। জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, গত বছরের তুলনায় বগুড়ায় এবার খামারির সংখ্যা এবং পশুর সংখ্য অনেক বেড়েছে। এবারে ঈদে বগুড়ার স্থানীয়ভাবে পালিত পশু দিয়েই চাহিদা পূরণ হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন