বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মুক্তাঙ্গন

হজ কীভাবে উম্মাহর চেহারা পাল্টে দিবে

প্রকাশের সময় : ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ ইয়ামিন খান
যারা নিজেদের মুসলিম উম্মাহর সদস্য বলে মনে করেন তাদের প্রত্যেকেরই উচিত এই জাতির সমস্যার সমাধান নিয়ে বেশি চিন্তা করা। বিশেষ করে যখন এই উম্মাহ অতিক্রম করছে এক ঘোর অন্ধকারময় ক্রান্তিকাল। একটি জীবন্ত জাতি হিসেবে মুসলিম উম্মাহর নেতা যখন জাতিকে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক জাতিকে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা জানিয়ে গেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো জাতির দৃষ্টি যখন অন্ধ হয় তখন সব দিক দিয়ে অন্ধ হয়ে যায়। কোনদিকের পথই সে তখন দেখতে পায় না। এটা লানতের চিহ্ন। লানতের আরো একটি চিহ্ন আছে এই যে, “যেখানে সমাধানের পথ নেই সেখানে সমাধানের পথ খোঁজা।” তাই দেখি আল্লাহ মুমিনদের যেসব ব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছেন মুমিন দাবিদার এই জাতি সেখানেই মাথা খুটে মরছে সমাধানের আশায়। আল্লাহ যাদের সাথে বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করার আদেশ দিয়েছেন, তারা তাদের সাথেই বন্ধুত্ব করায় ব্যস্ত। শুধু ব্যস্তই নয় বরং কে কার চাইতে বেশি নিজেকে বন্ধুত্বে উজাড় করে দিতে পারে তার প্রতিযোগিতা করছে।
বাস্তবতা হচ্ছে, যেখানে তোমার জিনিস হারিয়ে গেছে সেখানেই তাকে খুঁজতে হবে। অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না। দৃষ্টিভ্রম হলেই তা সম্ভব। এই জাতির স্রষ্টা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল জাতির সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিকভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য সমস্ত উপকরণ তৈরি করে রেখেছেন। যেমন- যদি দুইজন সদস্যের মধ্যে কোন সমস্যা দেখা দেয় বা মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয় তাহলে একই দিনে অন্তত পাঁচবার সময় রয়েছে মসজিদে মিলিত হয়ে সমাধান করে নেয়ার। কেউ যদি জামাত ধরতে ব্যর্থ হয় তার জন্য তিনদিন সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে হাজির হয়ে মিটমাট করে নেয়ার। আর কারও অবস্থান যদি মসজিদ থেকে দূরবর্তী স্থানে হয় তাহলে সে সপ্তাহের একদিন অর্থাৎ শুক্রবার জুমার দিন সালাতে হাজির হয়ে পারস্পরিক সমস্যা মিটমাট করে নিবে। এই ক্রমধারার আন্তর্জাতিক রূপ হচ্ছে প্রতি বছর কাবার প্রাঙ্গণে, বায়তুল্লায় হজের জন্য হাজির হওয়া। এদিন পৃথিবীর নানা প্রান্ত হতে নেতাগণ হাজির হয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সমস্যা মিটমাট করে নিবেন। এমনকি মুসলিম উম্মাহর কোথায় কোন সমস্যা, কোথায় কোন অভাব তা পূরণ করতে হবে কাবার প্রাঙ্গণে হাজির হয়ে।
অন্যদিকে উম্মাহর সামরিক ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্তও এখান থেকে নেওয়া হবে। তাই হজের এই নির্ধারিত দিনগুলোতে এই জাতির স্রষ্টা আল্লাহ অমুসলিমদের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছেন। দীর্ঘ চৌদ্দশ’ বছর পরেও সে আদেশ বলবৎ আছে। সারা আরবে অন্যজাতিরা প্রবেশ করলেও এমনকি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে সক্ষম হলেও মক্কায় প্রবেশ করতে পারেনি। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যদি একবার একটিমাত্র হজ করতে সক্ষম হতো জাতি তাহলে এ জাতির কোন সমস্যা থাকতো না। কারণ এ এক অব্যর্থ ওষুধ। এটা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দেওয়া ওষুধ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই জাতি এই ওষুধ গিলতে নারাজ। তারা বিদেশি মোশরেক প্রভুদের প্রেসক্রাইব করা ওষুধ গিলতে চায়। প্রকৃতপক্ষে তাই যদি হয় তাহলে তারা কেন পবিত্র কাবার প্রাঙ্গণে যান? যে উদ্দেশ্যে যা তৈরি করা হয়েছে তাকে দিয়ে যদি তা না করা হয়, তাহলে ওই জিনিসের দাম কী থাকতে পারে? হজের মাঠে মিলিত হয়ে যদি জাতি তার ঐক্যই ফিরে না পায়, শিয়া-সুন্নির ব্যবধান বজায় রেখে যার যার মতো আনুষ্ঠানিকতা করার মধ্য দিয়ে হজ পালন করেন তাহলে মুসলিম জাতির ঐক্য আসবে কী করে? বর্তমানের এই হাজীদের প্রতি আমার একটা আবেদন আপনারা যদি সত্যিকার অর্থে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তুষ্টি চান, এ জাতির ঐক্য চান তাহলে সেই হজ করুন যা দিয়ে সমস্ত মুসলিম জাতি তাদের ভেদাভেদ ভুলে এক জাতি হয়ে যায়, রাসূলুল্লাহর ঐ বাণী মোতাবেক এমন জাতি হয়ে যায় পৃথিবীর একপ্রান্তের একজনের কোন সমস্যায় অপরপ্রান্তের একজন ঝাঁপিয়ে পড়ে, একজন নেতার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর আদেশ বাস্তবায়নে নিজেকে কোরবান করতে শিখে। তাই আজ সময় এসেছে অনৈক্যের বিষবাষ্প থেকে বেরিয়ে আসার।
ষ লেখক : পিসিকালচার, হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা থেকে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন