আগামীকাল রোববার সারাদেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আহুত সকাল-সন্ধ্যা হরতালের বাধা দেয়া হলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। হাটহাজারী, বি-বাড়িয়া ও বায়তুল মোকাররমে বর্বরোচিত হামলায় হতাহতের ঘটনায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্ত্রী অনুষ্ঠান ম্লান হয়ে গেছে। মাদরাসার ছাত্রদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। কসাই নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। মোদির হাত মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত। মোদির আগমনকে এদেশের মানুষ বরদাশত করতে পারে না। আজ দুপুরে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেইটে হাটহাজারি, বি-বাড়িয়া, বায়তুল মোকাররম, যাত্রাবাড়ীসহ সারাদেশে দেশপ্রেমিক ছাত্র-জনতাকে হতাহতের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরী আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। এছাড়া হেফাজতে ইসলামের আহবানে আজ ৫০টি জেলায়ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে।

সংগঠনের মহানগরী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব আল্লামা নূরুল ইসলাম। মাওলানা আতাউল্লাহ আমিনের পরিচালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলামের নায়েবের আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক, মহানগরী মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন, মাওলানা মুসা বিন ইযহার, মাওলানা জোবায়ের আহমদ, মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, মাওলানা হাসান জামিল, জালাল উদ্দিন আহমেদ, কবি মুহিব খান, ফয়সাল আহমদ,অধ্যাপক আব্দুল জলিল ও মাওলানা সুলতান মহিউদ্দিন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার সফররত মোদিকে খুশী করার জন্যই গতকাল হাটহাজারি ও বি-বাড়িয়ায় নিরপরাধ ছাত্রদের হত্যা করেছে। মোদির দালালী করলে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে গিয়ে দালালী করুন। আগামীকাল হেফাজতে আহুত সকাল-সন্ধ্যা হরতালে বাধা দেয়া হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, মোদিকে খুশী করার জন্য সরকার যদি ছাত্রদের হত্যা করে রক্ত নিতে পারে তা’হলে আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে আমরাও রক্ত দিতে প্রস্তুত। নির্বিচারে ছাত্র হত্যার প্রতিশোধ নিবো না। আল্লাহর প্রতিশোধ আসমান থেকেই আসবে। বিনা ভোটের এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই। হরতালে বাধা দেয়া হলে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করা হবে বলেও নেতৃবৃন্দ হুশিয়ারি দেন। মাওলানা মামুনুল হক বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুসলমানদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। গতকাল বায়তুল মোকাররমে হাটহাজারি বি-বাড়িয়ায় সন্ত্রাসী তান্ডপ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সুবর্ণ জয়ন্তীকে ¤øান করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হেলম্যাট পড়ে কারা বায়তুল মোকাররমে হামলা চালিয়েছে তা’খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, কসাই মোদিকে এনে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। মাওলানা মামুনুল হক শহীদদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আগামীকালের সকাল-সন্ধ্যা হরতাল সফল করার আহবান জানান। মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, শান্তিকামী জনতার ওপর গুলি চালিয়ে সরকার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। আগামীকালের হরতালে গাড়ীর চাকা ঘুরবে না দোকান-পাট খুলবে না। হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশে হরতালের কোনো পরিকল্পনা ছিলো না। হাটহাজারিতে ৪ জন এবং বি-বাড়িয়ায় ১ জনকে শহীদ করা হয়েছে। এ জন্য হরতাল দিতে বাধ্য হয়েছি। তিনি বলেন, হরতালে বাধা দেয়া হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

উত্তরা জোনের সমাবেশ : এদিকে, হেফাজতে ইসলাম উত্তরা জোনের উদ্যোগে আজ সকাল ১০টায় উত্তরা পলওয়েল মার্কেটের সামনের রাস্তায় হাটহাজারিতে ৪ জন নিহত, বি-বাড়িয়ায় ১ জন নিহত এবং বায়তুল মোকাররমে জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মাওলানা নাজমুল হাসানের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরীর সভাপতি মাওলানা জুনায়েত আল হাবীব, উত্তরা জোনের সহসভাপতি মাওলানা ওয়াহিদুল আলম, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মাওলানা কেফায়েত উল্লাহ আজহারী, মাওলানা কামাল উদ্দিন, মাওলানা নূরুল ইসলাম, মাওলানা আনিসুর রহমান ও মাওলানা শহীদুল্লাহ। বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হতে পারলে একদিন হাটহাজারি ও বি-বাড়িয়ায় শহীদদের হত্যার বিচারও হবে ইনশাআল্লাহ। তারা আগামীকালের হরতাল সফল করার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলন : এদিকে, আজ বাদ আসর খিলগাওস্থ মাখজানুল উলূম মাদরাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মাওলানা নূরুল ইসলাম ও মহানগরী মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক আগামীকালের শান্তিপূর্ণ হরতাল সফল করতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা কামনা করেছেন। নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা সরকার বিরোধী হরতাল বা আন্দোলন করছি না। গতকাল হাটহাজারিতে ও বি-বাড়িয়ায় হতাহত এবং বায়তুল মোকাররমে ন্যাক্কার জনক হামলার প্রতিবাদে ঈমানী দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে আজ বিক্ষোভ ও আগামীকাল হরতালের ডাক দিয়েছি। আজ সারাদেশের ৫০টি জেলায় বিক্ষোভ প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। যাদের শহীদ করা হয়েছে তার বিচার, ক্ষতিপূরণ এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানানো হয়। নেতৃদ্বয় বলেন, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেয়া হবে না। আগামীকালের শান্তিপূর্ণ হরতালে কোনো প্রকার অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটলে তার দায় দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।