চারদিকে শুধুই ধ্বংসের চিহ্ন। বাতাসে পোড়া গন্ধ। অন্যদিকে বিভিন্ন বাড়িতে কান্নার রোল। গত ৩ দিনের কর্মসূচিকে ঘিরে ভয়াবহ অরাজকতা সৃষ্টি হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। হেফাজত নেতারা জানিয়েছেন, পুলিশ ও বিজিবির গুলিতে এ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫ জন নিহত হয়েছে। আর পুলিশের পক্ষ থেকে ১৩ জনের মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে।
ব্যাপক ভাঙচুরের পর কেপিআইসহ সরকারি বেশ কিছু স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এর মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশন, জেলা পরিষদ, পুলিশ সুপার কম্পাউন্ড, পৌরসভা, পৌর মিলনায়তন, আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন, শিল্পকলা, শহর সমাজ সেবা প্রকল্প কার্যালয, সদর উপজেলা ভূমি অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারের অফিস, বাসভবন ও তার শ্বশুর বাড়ি, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বাস ভবন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের সদর দফতরের গাড়ি গ্যারেজ, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, আশুগঞ্জ টোল প্লাজার পুলিশ ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়া হয়।
জানা যায়, ২৮ মার্চ হরতালের পূর্বে বিকেলে শহরে জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশটি বিক্ষোভে রূপ নেয়ার পরই দ্রæত বদলে যায় পরিস্থিতি। বিক্ষোভ মিছিলটি প্রধান সড়ক টিএ রোড অতিক্রম করার সময় মিছিলের পেছনের অংশ থেকে জেলার প্রধান মাদরাসা জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদরাসায় রোডে হামলা চালায় কয়েকজন। এসময় অর্ধশত ককটেলের বিষ্ফোরণ ঘটে। পরক্ষনই মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেয়া হয় মসজিদ-মাদরাসা রক্ষার। ঘোষণার পর পর মাদদাসার ছাত্ররা রাস্তায় নেমে পড়ে। তাদের সাথে যোগ দেয় স্থানীয় লোকজন। রাত প্রায় ৮টায় মাদরাসা সড়কে বিজিবি ও পুলিশের সাথে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন হতাহত হয়। পরদিন হরতাল চলাকালে সকাল থেকে পুলিশ ও বিজিবি শহরের মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকে হেফাজতকর্মীদের শহরে প্রবেশ করার দৃশ্য। অদৃশ্য হয়ে যায় সড়কে শহরে অবস্থানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
পুলিশকে মাইকে ঘোষণা করতে শোনা যায়, আপনার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করুন। আামাদের কোন ক্ষতি করবেন না। থানার দিকে এগুবেন না। শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ লাইনে ৫ দফা হামলা চালিয়েছে হামলাকারীরা। জেলার অন্যতম কেপিআই প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডের সদর দফতরে ৫ দফা হামলার পর বিকেল ৪টার দিকে গাড়ির গ্যারেজে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে, পৌর নির্বাচনসহ গত ১০ বছরে প্রাপ্তিতা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মাঝে বিরোধের ঝালও এ হরতালে মেটানো হয়েছে। হেফাজত নেতাদের আড়ালে সরকার বিরোধী বিশেষ গোষ্ঠী ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ তান্ডব চালায়।
৮ টি মামলা দায়ের, আসামি ৮ হাজার : সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার ঘটনায় দুই থানায় আলাদা ৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাত অন্তত ৮ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ মামলাগুলোর তদন্ত কাজ শুরু করেছে। পুলিশের একটি সুত্র জানায়, ঘটনার সময় ভিডিও ফুটেজ, দেখে মোবাইলে ধারণ করা চিত্র দেখে তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিসি টিভির চিত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব দেখে তান্ডবের সময় কারা কি ভাবে ভাঙচুর চালায় তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সে সাথে ঘটনার উস্কানি দাতাদের শনাক্তের কাজ চলছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রহিম ৬টি মামলা ও আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাবেদ মাহমুদ ২টি মামলার বিষয়ে জানিয়েছেন। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে ১৪ জনকে।
হেফাজতের তান্ডবের ঘটনার সময় প্রশাসন ও পুলিশের ভ‚‚‚মিকা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে অভিযোগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র, আ, ম, উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি জানান।
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। গতকাল বুধবার দুপুরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন