শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি মানুষের হাহাকার

খাদ্য, স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির তীব্র সমস্যা বেড়িবাঁধের ক্লোজারে কাজ শুরু

জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৫ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০২ এএম

আশাশুনি উপজেলা সদরে ভেঙে যাওয়া রিং বাঁধ আটকানো সম্ভব হলেও পাউবো’র মূল বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজ সম্ভব হয়নি। প্লাবিত এলাকার পানিবন্ধী মানুষ সুপেয় পানি সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, স্যানিটেশন ও বসবাসের সমস্যা জর্জরিত রয়েছে। উপজেলার আরও ১০/১২ পয়েন্টে বেড়িবাঁধের অবস্থা শোচনাীয় হয়ে পড়েছে।

গত ৩০ মার্চ খোলপেটুয়া নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত এলাকার শান্তনা হিসাবে বৃহত্তর এলাকাকে রক্ষার্থে দেয়া রিং বাঁধ ভেঙে যায়। সুপার সাইক্লোন আম্পানের তুলনায় ১০ থেকে ২০ সে.মি উঁচু জোয়ারের চাপে গত মঙ্গল ও বুধবার দু’দিনে ৬টি পয়েন্টে রিং বাঁধ ভেঙে জেলেখালী, দয়ারঘাট, আশাশুনি পূর্বপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দুর্গাপুর গ্রাম এলাকা প্লাবিত হয়। শতাধিক মৎস্য ঘের, অসংখ্য সাদা মাছ চাষের পুকুর, বসতবাড়ি, গবাদি পশুসহ আধাপাকা ও কাঁচা বোরো ধানের কৃষি জমি নিমজ্জিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত কয়েকদিন প্রাণপণ পরিশ্রম করে রিং বাঁধ রক্ষার কাজ করা হয়। পাউবো জিওব্যাগ, জেলা প্রশাসন বাঁধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য মজুরি হিসাবে ৭ কেজি করে চাল প্রদান করেন।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান স ম সেলিম রেজার ব্যবস্থাপনায় পাউবোর কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের অংশ গ্রহণে গত বৃহস্পতিবার রিং বাঁধের ভাঙনস্থান (পয়েন্ট) হ্যাচারি এলাকা, মনিন্দ্র নাথ, রণজিৎ বৈদ্য, শংকর কুমার, নিরান চন্দ্র ও পুলিন কুমারের বাড়ির কাছে রিং বাঁধ আটকানোর কাজ শেষ হয়েছে।

উপজেলা চেয়ারম্যান এবিএম মোস্তাকিম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল হুসেইন খান নিয়মিত কাজের খোঁজখবর নেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। দীর্ঘ ৯ মাস অতিক্রান্ত হলেও সুপার সাইক্লোনের আঘাতে (২০ মে’২০) ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত হয়নি। অপরদিকে দ্বিতীয় দফায় (৩০ মার্চ’২১) এলাকাটি প্লাবিত হওয়ায় ৩৫০ পরিবারের মানুষ সুপেয় পানি, খাদ্য সঙ্কট ও স্যানিটেশন সমস্যা জর্জরিত হয়ে পড়েছে। কাজ-কর্ম না থাকা, মাছের ঘের ও ক্ষেত খামার তলিয়ে যাওয়ায় আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। এ পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন অর্থসহায়তা, চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়নি। সরকারিভাবে গত শুক্রবার পরিবার প্রতি ৭ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সুপেয় পানি সরবরাহ করলেও প্রত্যন্ত প্লাবন কবলিত এলাকার অনেকের কাছে পানি পৌছে না। অপরদিকে উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও বড়দল ইউনিয়নে ১০/১২ পয়েন্টে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি উপচে ভেতরে ঢোকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। হরিষখালী ও কুড়িকাহুনিয়া বাঁধের অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে পড়েছে। জোয়ারের সময় বাঁধটি উপচে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব স্থানে পুনরায় কাজ না করলে সামনে এসব বাঁধ উপচে ও ভেঙে পুনরায় গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার ও এসডিই মাজহারুল ইসলাম জানান, সুপার সাইক্লোন আম্পানের তুলনায় নদীতে কমপক্ষে ১০-১২ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৫৪ মি. উচ্চতায় পরিণত হওয়ায় রিং বাঁধ টিকতে পারেনি। অনেক পরিশ্রমের বিনিময়ে ভাঙন কবলিত রিং বাধ রক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত শনিবার থেকে মূল বাঁধে দু’টি পয়েন্টে ২১০ ফুট ভাঙন স্থানে ক্লোজারের বেডের কাজে হাত দেয়া হয়েছে। গত রোববার জিও বস্তায় বালি ভরে ছোট ক্লোজারের চাপান দেয়া হয়। পরবর্তীতে বড়টির ক্লোজার চাপান দেয়া হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্লোজার চাপান সম্পন্ন সম্ভব হবে ইনশাল্লাহ।

রিং বাঁধ নির্মাণের ফলে লোকালয়ে পানি ওঠা বন্ধ হলেও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাহাকার শেষ হয়নি। এলাকার মানুষ এখন সুপেয় পানি ও খাদ্য সঙ্কট, স্যানিটেশন সমস্যা এবং ঘরবাড়ি, ফসল ও মাছের ক্ষতিতে জর্জরিত। বাঁধ নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্নের পাশাপাশি অসহায় মানুষের দুর্দশা লাঘবে প্রয়োজনীয় খাবার, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, চিকিৎসা সেবা ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন