বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

মধুমতীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি

প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মধুখালী (ফরিদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা
মধুখালী উপজেলার মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে। ভাঙনে এ পর্যন্ত  প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়েছে দুটি বিদ্যালয় ও শতাধিক বসতবাড়ি। ১৯২৩ সালে স্থাপিত হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ১৯৭৩ সালে স্থাপিত হয় মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয়। দুটি বিদ্যালয়ের জন্মের ব্যবধান ৫০ বছর হলেও ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট একইসাথে মধুমতী নদীগর্ভে শেষ সমাধি রচনা করার অপেক্ষায় রয়েছে দুটি বিদ্যালয়ের পাকা, সেমি পাকা মিলিয়ে নয়টি ভবন। মধুখালী উপজেলার গয়েষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গয়েষপুর-বক্সিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এই হলো বর্তমান অবস্থা। মধুখালী উপজেলার কামারখালী ইউনিয়নে মধুমতী নদীর পশ্চিমপাড়ে মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলা সংলগ্ন এলাকায় ওই বিদ্যালয় দুটি অবস্থিত। শুধু ওই দুটি বিদ্যালই নয়। ওই ইউনিয়নের গয়েষপুর, চর গয়েষপুর, বক্সিপুর, বিজয় নগর, জারজন নগর ও স্বরবরাজন এই ছয়টি গ্রামে মধুমতী নদীর তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এ বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে ভাঙন শুরু হলেও গত ১১ দিন ধরে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে ১০০টি পরিবার হারিয়েছে তাদের বসতবাড়িসহ শেষ সম্বল। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে আরো শতাধিক পরিবার। আর পানিবন্দি হয়ে আছে পাঁচ শতাধিক পরিবার। সম্প্রতি দুটি বিদ্যালয়ের নয়টি ভবন থেকে আসবাবপত্র সরানো হয়েছে। খুলে ফেলা হয়েছে দরজা, জানালাসহ  অন্যান্য সামগ্রী। এখন শুধু বিলীনের অপেক্ষায় রয়েছে বিদ্যালয়ের ভবনগুলো। ভাঙনের কারণে গয়েষপুর-বক্সিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে ওই বিদ্যালয়ের ১৮৫ জন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে গয়েষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান। পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে ওই বিদ্যালয়ের ১৬২ জন শিক্ষার্থীর। গয়েষপুর-বক্সিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, স্কুলের ছয়টি ভবনের মধ্যে সেমি পাকা দুটি ও ডোয়া পাকা চারটি ভবন রয়েছে। আমরা স্কুলের বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়েছি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তারা পাঠদানের জন্য বিকল্প জায়গা খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে কবে থেকে পাঠদান শুরু করতে পারব জানিনা। ওই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান বলেন, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভবনগুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা মালামাল সরিয়ে নিচ্ছি। গয়েষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ওহেদুজ্জামান বলেন, ১৯২৩ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপন করা হয়। তখন এটি ছিল গয়েশপুরে। ৩০ বছর আগে ভাঙনের কারণে স্কুলটি বক্সিপুরে বর্তমান স্থানে নিয়ে আসা হয়। এবার আমরা দ্বিতীয় দফা ভাঙনের করলে পড়েছি। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলের তিনটি ভবনের মধ্যে দুটি পাকা ও একটি সেমি পাকা ভবন রয়েছে। আমরা খুব বিপদের মুখে রয়েছি। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মধুখালী উপজেলার ইউএনও লুৎফুন নাহার গতকাল বুধবার বলেন, ওই এলাকায় ভাঙন ঠেকাতে এবং স্কুলের ভবনগুলো রক্ষা করার জন্য আমি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), জেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সকলকে উদ্যোগ নিতে বলেছি। এ কারণে দুটি স্কুলের ভবনের আসবাবপত্রসহ আনুষঙ্গিক সামগ্রী সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, গয়েষপুর বক্সিপুর এলাকায় পাউবোর কোনো প্রকল্প চলমান নেই। এজন্য আমাদের কাজ করার সুযোগ কম। তবে স্কুলের ভবনগুলো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় যারা নির্মাণ করেছে তাদেরই প্রতিরক্ষামূলক কাজ হাতে নেয়া উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন