মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর-নদী কোথাও নেই পানি। পানি নেই নলকূপেও। ধান চাষের জমিতেও পানি দিতে পারছে না কৃষক। এই চিত্র ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব জায়গায়, পানির জন্যে চলছে হাহাকার।
জানা যায়, পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো ক্রমেই পানিশূন্য আর গরমের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সব নলক‚পেই অকেজো হয়ে পড়েছে। গ্রামাঞ্চলে সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা বাড়ির নলকূপ পানিশূন্য। ফলে একদিকে রান্নাসহ ঘর-গৃহস্থালীর কাজে যেমন অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে গরু-ছাগল, গৃহপালিত পশুপাখির জন্যও পাচ্ছে না বিশুদ্ধ পানি। এমন অবস্থায় হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
কালীগঞ্জ উপজেলার জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা জানান, উপজেলার বেশিরভাগ টিউবওয়েলে পানির সঙ্কট শুরু হয়েছে। তাদের অফিসপাড়ার ৪টি নলকূপেই অকেজো বলে জানান। আড়পাড়া, শিবনগর, ফয়লা, নরেন্দ্রপুর, কলেজপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রকট আকারে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
পৌরসভার ফয়লা গ্রামের আখতারুল হক জানান, তাদের কলে বর্তমানে পানি ওঠে না। গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো এমন অবস্থায় নদনদী বা দূরের কোনো জলাশয় থেকে পানি এনে ফুটিয়ে তা পারিবারিক সব কাজে ব্যবহার করছে। নরেন্দ্রপুর গ্রামের গৃহবধূ শাপলা বেগম, কৃষক মিঠু মিয়াসহ অনেকে জানান, গত কয়েকমাস ধরেই তাদের নলক‚পে কোনো পানি নেই। শুধু গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বাড়িতে নয়, পানি নেই স্কুল-কলেজের নলক‚পে। এমনকি হাসপাতালের নলক‚পেও পানি নেই। হাট-বাজার, মাঠ-ঘাটের সব জায়গাতেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। হেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মামুন মিয়া জানান, স্কুলের কলে মারাত্মক পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। স্কুলের কলে এখন পানি ওঠে না বললেই চলে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক সামর্থ্যবান মানুষ ২০/২৫ হাজার টাকা খরচ করে ইঞ্জিনচালিত সাবমারসেবল পাম্প বা এ জাতীয় মোটর স্থাপন করে নলক‚পের পানি সচল রাখছেন।
কালীগঞ্জের টিউবওয়েল মিস্ত্রি ওলিয়ার রহমান জানান, সাধারণত ২০ থেকে ২৪ ফুট মাটির নিচে পানির লেয়ার পাওয়া যায়। কিন্তু এখন নলক‚প স্থাপন করতে গিয়ে ৩২ থেকে ৪০ ফুট নিচে পনির লেয়ার মিলছে, তবুও পর্যাপ্ত পানি উঠছে না। তারা এলাকায় টিউবওয়েল বরিং করতে গিয়ে পানির জন্য হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে গভীর নলক‚প পুতার সময় স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে তারা নলক‚প বরিং করে টিউবওয়েল পুতে দিচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে কৃষিকাজে পরিকল্পিত সেচ কার্যক্রম চালানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন মহলের অনেকেই। মাঠে সেচকাজে ব্যাপকহারে সেচ পাম্প বসিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার করায় সঙ্কট বাড়ছে বলে অনেকে মনে করছেন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনে পানির স্তর উদ্বেগজনকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে কালীগঞ্জের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অফিস জানায়, ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বাড়িতে নলকূপ স্থাপন করে তারা জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সঙ্কট থেকে অনেকটাই মুক্তি পাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন