গত ৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একই পরিবারের ৬ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালেন শহরেই আজ বৃহস্পতিবার তাদের দাফন করা হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস।
যুক্তরাষ্ট্রের এলেন সিটিতে বসবাস করা বাংলাদেশি বংশোদ্ধভূত আমেরিকান দু’ভাই মানসিক বিষন্নতা থেকেই পরিবারের সবাইকে গুলি করে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় দাদি আলতাফুননেছা, তাঁর মেয়ে, মেয়ের জামাই ও তিন নাতি-নাতনির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে সেখানকার পুলিশ। আর এই চাঞ্চল্যকর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলোতে শোকের ছায়া নেমে আসে।
‘বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস’-এর জেনারেল সেক্রেটারি নাহিদা আলী বলেন, ৩ জনের লাশ গতকাল বুধবার নেতা-কর্মীদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিনজনের ময়না তদন্ত শেষে দুপুরের মধ্যেই হস্তান্তর করা হলে বাদ আসর টেক্সাসের ডালাস সংলগ্ন এলেন সিটি মসজিদে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে এবং একইদিন সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে ডেন্টন সিটির মুসলিম গোরস্থানে দাফন করার প্রস্তুতি চলছে। তবে সবটাই নির্ভর করছে বাকি তিনজনের লাশ প্রাপ্তির ওপর।
এদিকে নিহত পরিবারের প্রধান তৌহিদুল ইসলামের বড়ভাই মঙ্গলবার ফ্লোরিডা থেকে টেক্সাসের এলেন সিটিতে এসেছেন। ছোট ভাইয়ের পরিবারের এমন দুঃখজনক পরিস্থিতি দেখে তিনি শোকে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। সে শুধু সকলের কাছে দোয়া চাইছেন বলে জানান নিহতদের পারিবারিক বন্ধু শাহীন।
এ সময় শাহীন জানান, 'তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা শুক্রবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে সকলের প্রাণ ঝরেছে বুলেটে। কার শরীরে কটি বুলেট বিদ্ধ হয়েছে সেটিও তারা পুলিশের ডিটেকটিভকে অবহিত করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় ঐ বাসা থেকে দু’ভাইয়ের ৬টি নোট বুক পেয়েছে পুলিশ।' সেগুলোসহ তাদের ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিফোন পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এদিকে তৌহিদুল ইসলামের বড়ভাই জানিয়েছেন, গত ১ এপ্রিল পাবনা শহরের দোহাপাড়ার মরহুম আবু মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী আলতাফুননেছার যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার কথা ছিল। করোনার কারণে সেই ফ্লাইট বাতিল হয়ে ৭ এপ্রিল দেশে আসার দিন ঠিক হয়। কিন্তু তাঁর আর দেশে ফেরা হয়নি।
আলতাফুননেছার ছেলে আবুল কালাম আজাদ হিরক বলেন, ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে সপরিবারে বসবাস করছেন তাঁর ভগ্নিপতি তৌহিদুর রহমান ওরফে স্যাম তৌহিদ (৫৩)। তিনি আমেরিকায় সিটি ব্যাংকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী আইরিন ইসলাম ওরফে নীলা তৌহিদ (৪৮) ও তাঁদের তিন সন্তান তানভীর তাওহীদ (২৩), ফারবিন তাওহীদ (২১) ও ফারহান তাওহীদকে (১৯) নিয়ে সুখ-শান্তিতে বসবাস করছিলেন।
এদিকে হত্যা নাকি আত্মহত্যা, এটি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসের কমিউনিটিতেও নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। আত্মীয়স্বজনরা জানিয়েছে, যে ছেলেরা নানি কখন খেয়েছে, ওষুধ খেয়েছে কি না- সব খবর রাখতেন তাঁরা কীভাবে হত্যা করতে পারেন। তাছাড়া তাঁদের মানসিক ডিপ্রেসশনের কথাও কেউ জানত না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন