বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

কলারোয়া সীমান্ত পথে আসছে মাদক বিপথগামী হচ্ছে যুবসমাজ

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা
কলারোয়া ও সংলগ্ন সীমান্ত পথে বানের ¯্রােতের মত কোটি কোটি টাকার ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছে। এই মাদকের কবলে পড়ে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির গুরুতর অবনতিসহ পারিবারিক কলহ আশাঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জানা গেছে, কলারোয়ার প্রায় ১৭ কিলোমিটার সীমান্ত পথে পাচার হয়ে আসছে ভারতীয় মালামাল। আর এই মালামাল পাচারের সুযোগে সীমান্ত পথে বানের ¯্রােতের মত দেদারসে ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য পাচার হয়ে আসছে। কলারোয়া সীমান্তে এবং ওপারে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার স্বরুপনগর থানার বিস্তৃর্ণ সীমান্ত জনবসতিপূর্ণ। এরমধ্যে কলারোয়া উপজেলার কেড়াগাছির বিপরীতে ভারতের আমুদিয়া, নিত্যানন্দকাটি ও তারালি গ্রাম; দক্ষিণ ভাদয়ালীর বিপরীতে ভারতের হাকিমপুর গ্রাম; উত্তর ভাদিয়ালীর বিপরীতে ভারতের দরকান্দা গ্রাম; রাজপুরের বিপরীতে ভারতের পদ্মবিল গ্রাম; কলারোয়ার চান্দা ও বড়ালীর বিপরীতে ভারতের আশশিকড়ী গ্রাম অবস্থিত। ঘন জনবসতি ও ঝোপ জঙ্গলে ভরা গ্রামগুলোর নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা। এরমধ্যে কলারোয়ার কেড়াগাছির চারাবাড়ি ও ভারতের আমুদিয়া গ্রামের এমন অবস্থান যে কোন বাড়ি বাংলাদেশের আর কোন বাড়ি ভারতের তা বহিরাগত মানুষের পক্ষে বোঝা একেবারে অসম্ভব। আর এসব এলাকায় চলাচলরত মানুষ কে, চোরাচালানী কে সাধারণ নিরীহ মানুষ তা আঁচ করা দুরূহ। ঝোপ-জঙ্গল আর ঘরবাড়ির এই অবস্থানে মাদক বা চোরাচালানের পণ্য লুকিয়ে রাখা খুবই সহজ। আবার কলারোয়া সীমান্তের ওপারে ভারতীয় গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে নকল ফেনসিডিল তৈরির কারখানা। নকল ফেনসিডিল কারখানার মালিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা পেয়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ফেনসিডিল পাচারে ব্যাপক সহায়তা দিয়ে থাকে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে কলারোয়া মাদক পাচারের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতের আঁধারে ফেনসিডিলসহ মাদক পাচারে ধুম পড়ে যায়। সীমান্ত পথে পাচার করে আনা দ্রব্য রাতের আঁধারে কাকডাঙ্গা গ্রামের রাস্তায়, বালিয়াডাঙ্গা বাজার বা মুক্তিবাড়ি রাস্তায়, বোয়ালিয়া বা পাচপোতা গ্রামের রাস্তায়, ঝাপাঘাট তালপুকুর পাড়ে, সোনাবাড়িয়া মঠে, কোমরপুর, হুলহুলিয়া বা কোটার রাস্তায়, বড়ালী বা হিজলদী রাস্তায়, রামভদ্রপুর, সুলতানপুর বা কাদপুর রাস্তায়, ব্রজবাক্স বা দাকোপ বিলের রাস্তায় ট্রাক, পিকআপ, মাইক্রো বা প্রাইভেটে ভরে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার কখনো মোটর সাইকেলে, নসিমনে, ইঞ্জিনভ্যানে, থ্রি-হুইলারে মাদকদ্রব্য সীমান্ত থেকে কলারোয়া, কামারালী বা সরসকাটি নিয়ে ট্রাক, পিকআপে বোঝাই করে দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আবার সীমান্তে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য সরবরাহে আগত ডেলিভারী ভ্যান অনেক ক্ষেত্রে ফিরতি পথে ফেনসিডিল সহ মাদকদ্রব্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। মাদকবাহী যান সীমান্ত এলাকা অতিক্রমের সময় রাস্তার মোড়ে মোড়ে মোবাইলধারী পাহারা বসানো হয়। পাহারাদারের সংকেত মোতাবেক মাদকবাহী যানগুলো চলাচল করে এবং প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়। মোবাইলের মাধ্যমে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরে মাদকবাহী গাড়িগুলো সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ি বা থানা এলাকায় প্রবেশ বা এলাকা অতিক্রম করে বলে সূত্র জানায়। আবার সীমান্ত থেকে দিনের বেলা ভদ্রবেশী উঢ়ুতলার লোক আত্মীয়বাড়ি বেড়ায়ে ফেরার নামে মাইক্রো/ প্রাইভেটে ফেনসিডিলসহ মাদকদ্রব্য বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার দিনের বেলা ভারতীয় পণ্যের বস্তা বা কাটুনের ভিতরে লুকিয়ে মাদকদ্রব্য বহণ করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও সূত্র জানায়। সীমান্ত পথে বেপরোয়াভাবে প্রবেশে দেশে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। সহজলভ্য মাদকে দেশের তরুণ ও যুবসমাজ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। নেশার কবলে পড়ে তরুণ ও যুবকরা নানা প্রকার অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় আইন শৃঙ্খলার গুরুতর অবনতি ঘটছে। অন্যদিকে নেশায় তরুণ যুবকদের শারীরিক অক্ষমতার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে প্রচ- আর্থিক ও পারিবারিক কোলহ প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে সামাজিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন