রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে কামার পাড়ায়

প্রকাশের সময় : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অভ্যন্তরীণ ডেস্ক
সামনে ঈদ-উল আযহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার দা, ছুরি, চাকু ও বটি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামার পল্লীর কারিগররা। এ সংক্রান্ত আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো রিপোর্ট-
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কলাপাড়ায় কামাররা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস কাটার দা, ছুরি, চাকু ও বটি তৈরি করতে। ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে সকলেই এখন কামারের শরণাপন্ন হচ্ছেন। সময় মত সকলের প্রযোজনীয় সমগ্রীগুলো তৈরি করে দিতে দিন- রাত কাজ করছেন তারা। তাই কাজের ধুম পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারের প্রতিটি কামারের দোকানগুলোতে। একাধিক কামার শিল্পের লোক জনের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, দা, বটি, চাপাতি, চাকু তৈরি এবং পুরানো ধারালো অস্ত্রে শান দিতে এখন তারা দারুণ ব্যস্ত। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছেন তারা। এক সময় ৪০ থেকে ৫০ টাকায় এক বস্তা কয়লা পাওয়া যেতো। এখন তা বেড়ে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন। এ শিল্পের সাথে জড়িত রতন কর্মকার জানান, লোহার দাম বেড়েছে। বাতাস দেয়ার চামড়ার তৈরি ভাতির দামও বেড়েছে। শ্রমিকদের মজুরি প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা দিতে হয়। সারা বছর তেমন কোন কাজ কর্ম না থাকলেও প্রতি বছর কোরবানির ঈদের সময় এ শিল্পের কদর বাড়ে। একই কথা বললেন নির্মল কর্মকার ও বাবুল কর্মকার। তাদের ভাষায় ঈদ মৌসুমে কাজের ব্যস্ততা বেড়ে যায় ঠিকই কিন্তু কারিগর পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া বর্তমানে কামারের তৈরি লোহার জিনিসের পরিবর্তে স্টিলের যন্ত্রপাতির দিকে মানুষের আগ্রহ বেড়ে গেছে বলে তারা জানান।
ইসলামপুর (জামালপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, জামালপুরের ইসলামপুরে পশু কোরবানির জন্য প্রয়োজনীয় ছুরি-বঁটি-দা-চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কামার সম্প্রদায়ের ব্যবসায়ীরা। উপজেলার ফকিরপাড়া, কামারপাড়া, রেলগেট, হাতিজা, ধর্মকুড়া বাজার, গঙ্গাপাড়ায় কামারদের সকাল থেকে গভীর রাত পর্র্যন্ত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কামাররা প্রতিদিনই ছুরি-বঁটি-দা-চাপাতি তৈরির পাশাপাশি শান দেয়ার কাজেও ব্যস্ত সময় পার করছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কামারদের মাঝে ঈদের আমেজে মনবল চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। উপজেলার ফকিরপাড়া কামারপাড়ার রঞ্জিত কর্মকার, সুদীন চন্দ্র কর্মকার ও অখিল চন্দ্র কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদের সময় মোটামুটিভাবে ভালই বিক্রি করি তাতেই সারা মাস চলে যায়। আসলে আগের মত আর আমাদের রোজগার নেই অনেক কষ্ট করেই চলতে হয়। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস বের হযেছে। অভাবের তাড়নায় কিনতে পারিনা। তানা হরে আরো ভাল সরাঞ্জামাদি তৈরি করতে পারতাম। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে শত বছরের এই পুরাতন শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। উল্লেখ্য যে, চাহিদামত কয়লা না পাওয়ায় এবং শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধিতে তারা আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকার সুনজর না দিলে এই শিল্প হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সিলেট অফিস জানায়, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের কামারপাড়ায় এখন দম ফেলার যেন ফুরসত নেই কামারদের। সিলেট মহানগরীর মহাজনপট্টি, চাঁদনীঘাট, কালীঘাট, তোপখানা, কাজীরবাজার প্রভৃতি এলাকায় রয়েছে কামারদের আবাস। সারা বছরই কামারপাড়ায় ব্যস্ততা নিত্যসঙ্গী, তবে কোরাবানির ঈদ এলে সেই ব্যস্ততা পায় ভিন্নমাত্রা। কয়েকজন কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়, সারা বছর মাংস কাটার দা, বটি, ছুরি, চাপাতি প্রভৃতি বিক্রি করে যে ব্যবসা হয়, তারচেয়ে বেশি ব্যবসা হয় কোরবানির ঈদে। এজন্য ব্যস্ততা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। কাজীরবাজার এলাকার কামার হেমেন্দ্র পাল বলেন, কোরবানির ঈদকে ঘিরেই আমাদের ব্যস্ততা থাকে সবচেয়ে বেশি। এসময় হাতে টাকা-পয়সা না থাকলে ঋণ করে হলেও দা, বটি, ছুরি এসব তৈরি করার জন্য লোহা ও ইস্পাত কিনি আমরা। বটি, ছুরি প্রভৃতির দামের বিষয়ে তিনি জানান, কোরবানির ঈদে মাংস কাটার সরঞ্জামের দাম একটু বেড়ে যায়। বর্তমানে মাঝারি আকারের ছুরি প্রতি পিস ১০০ থেকে ২৫০ টাকা, বড় আকারের ছুরি ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, দা ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, বটি দা ১২০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাপাতি কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি পিস চাপাতির দাম পড়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কাজীরবাজার এলাকায় আরো কয়েকজন কামারের সাথে কথা বলে জানা যায়, মাংস কাটার সরঞ্জাম খুচরো বিক্রির পাশাপাশি অর্ডার অনুযায়ীও তৈরি করে দেয়া হয়। এদিকে এবার এখনো ব্যবসা পুরোপুরি জমে ওঠেনি বলে জানিয়েছেন কাজীরবাজার এলাকার কামার নিবু দে ও রবি কর্মকার। তারা জানান, আরো দু-এক দিন পরে ব্যবসা জমতে পারে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন