সৈয়দ নাজমুল ইসলাম, উজিরপুর (বরিশাল) থেকে
পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে উজিরপুরে ঐতিহ্যবাহী হাট গুঠিয়া, শিকারপুর, উজিরপুর, ধামুরাসহ জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড় ততই বাড়ছে। হাটে নির্ধারিত দিন ছাড়াও প্রতিদিন দিনে ও রাতে পশুর হাটে প্রচুর লোকের আনাগোনা দেখা গেলেও বিক্রি হচ্ছে তুলনামূলক কম। হাট বাজারে ভারতীয় গরু দেখা না গেলেও দেশী প্রজাতির গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার কোন কমতি না থাকলেও গত বছরের তুলনায় দাম একটু বেশী হওয়ার কারণ দেশীয় পশু। উজিরপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়া পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে দেশীয় বিভিন্ন আকারের গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া উঠেছে। উজিরপুরের বাজারগুলোতে ৪০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গরুর দাম হাঁকা হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী গুঠিয়া হাটের প্রবীণ গরু ব্যবসায়ী মোঃ মানিক মোল্লা, মোঃ জামাল হোসেন মোঃ শহিদুল ইসলাম, মোঃ আজিজুল হক সহ অনেকেই জানান, গত বছরের তুলনায় গরুর দাম সামান্য বেশী। কারন, আমরা এ অঞ্চলের গরু চাহিদা পূরণের জন্য কুষ্টিয়া, রাজশাহিসহ উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চল থেকে ট্রাকে করে গরু আনতে হয়। একটি ট্রাকে গরু উঠে ২০-২২টি। ট্রাক ভাড়া ২৪-২৭ হাজার টাকা। অপরদিকে গরুর খাবার খরচ, লেবার সহ প্রতিটি গরু প্রতি অতিরিক্ত খরচ হয় ৩-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এমনিতেই দেশী পশুর দাম থাকে একটু বেশী। অপরদিকে ভারতীয় গরু না আসায় এবং প্রকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করিতে খরচ বেশী। এ কারণে দামটা একটু বেশী। সব মিলিয়ে গত বছরের তুলনায় গরুর দাম মোটেই বেশী না। গুঠিয়া হাট কমিটির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস.এম মিন্টু, হাট মসজিদের ইমাম ও সাধারণ সম্পাদক মুফ্তি মোহাম্মদ ফিরোজ সরদার বলেন, শত বছরের পুরানো বৃহত্তম গুঠিয়া হাটে আশ-পাশের জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই হাটে গরু সহ বিভিন্ন প্রকার মালামাল আমদানী রপ্তানির জন্য আসত। একসময় বিদেশি সওদাগরের বিচারণ ছিল এই হাটে। বিভিন্ন জায়গায় হাট বাজার বসার কারনে কিছুটা জাঁকজমক কমে গেছে। এই হাটটি খর-স্রোতা কালিজিরা নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। কোরবানির হাটে আমরা গরু প্রতি মাত্র ১শত টাকা খাজনা নির্ধারণ করেছি। এখানে রয়েছে সকল প্রকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা। বরিশাল-২, উজিরপুর-বানারীপাড়া উপজেলা সংসদ সদস্য বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ তালুকদার মোঃ ইউনুস বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে আমি আওয়ামী লীগ এর নেতাকর্মী ও পুলিশ প্রসাশণকে হাট বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা সহ সকল মুসলমানদের ঈদের আনন্দ করিতে কোন প্রকার কোন সন্ত্রাসী, নাশকতা সহ কোন কর্মকান্ড যাহাতে না হইতে পারে সেদিকে সার্বক্ষনিক সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান ইকবাল, আওয়ামী লীগ সভাপতি এস.এম জামাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ আঃ মজিদ সিকদার বাচ্চু, পৌর মেয়র মোঃ গিয়াস উদ্দিন বেপারী, প্যানেল মেয়র মোঃ হেমায়েত উদ্দিন, ছাত্রলীগ সভাপতি অসীম ঘরামী, ছাত্রলীগ ইউ সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান প্রমূখ বলেন, কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রসাশনের পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য আমরা আওয়ামী লীগ সকল ব্যবস্থা গ্রহন সহ বিভিন্ন হাট বাজার গুলো সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। উজিরপুর থানা অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মোঃ গোলাম সরোয়ার জানান, সংসদ সদস্য এ্যাডঃ তালুকদার মোঃ ইউনুস-এর নির্দেশক্রমে উজিরপুর থানা ও তারই অধীনস্থ ৫টি পুলিশ ক্যাম্প এর সকল পুলিশ প্রশাসন কোরবানিকে কেন্দ্র করে উপজেলার প্রত্যেকটি হাট বাজার সহ বাসস্ট্যান্ড, মহাসড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় সর্বাত্মক নিরাপত্তার বেষ্টনী রয়েছে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজ সেবক, সাংবাদিক সহ সর্বস্তরের মানুষ আমাদেরকে সব ধরণের সহযোগিতা করে আসছে। এ বিষয়ে ক্রেতা আলহাজ্ব মোঃ আবুল হোসেন সরদার, আলহাজ্ব মোঃ আওরঙ্গজেব হাওলাদার ইনকিলাবকে বলেন, কোরবানি মহান পালনকর্তার তরফ থেকে বান্দার জন্য একটি স্পেশাল নেয়ামত। নবী হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ (আঃ)’র গলায় ছুরি চালিয়ে বিশ্ববাসীকে অবাক করে প্রভুর প্রেমের অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় পুত্র ইসমাইল যাবিহুল্লাহ খেতাবে ভূষিত হলেন। তারই ধারাবাহিকতায় মুসলিম উম্মাহ প্রতি বছর ১০ জ্বিলহজ তারিখে প্রভুর নৈকট্য নাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। দেশী গরু হওয়ায় দামটা একটু বেশী হলেও গরুর রং ও গঠন প্রণালী খুবই ভাল। প্রভুর নৈকট্য লাভের জন্য দামটা একটু বেশী হলেও পছন্দমতো পশু দ্বারাই কোরবানি করা অতি উত্তম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন