স্মরণকালের মহাদুর্যোগ ও সংকটেও গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষিখাত এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কৃষি সেক্টরে ন্যুনতম প্রভাব পড়েনি। এই সেক্টরটি এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কর্মবীর কৃষকরা মাঠে মাঠে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কৃষিকাজ করছেন।
গ্রামাঞ্চলের লোকজন বিশেষ করে মাঠে মাঠে কর্মরত কৃষকরা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের হাতে নেই বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আসাদুল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান, সারাদেশেই কৃষিতে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। করোনার ভয় স্পর্শ করেনি কৃষকদের।
তার কথা, বোরো ধান কর্তন শুরু হয়েছে। বিভিন্নস্থানে শেষদিকে বোরো পরিচর্যার কাজ চলছে পুরোদমে। মাঠে মাঠে পাট বপন শুরু হয়েছে। আউশের বীজতলা তৈরী হচ্ছে। আদা ও হলুদসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদও চলছে। গম ও ভুট্রা কর্তন এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি আবাদসহ এক ইঞ্চি জমি কোন সময় পড়ে থাকতে না। সর্বোচ্চ ব্যবহার হচ্ছে। করোনার কারণে শহরের অনেক শিক্ষিত যুবক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ যাদের গ্রামে একটু জমি আছে তারা গ্রামে গিয়ে কৃষিকাজ করছেন বলে মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে খবর পেয়েছি। তিনি বললেন, দেশে ১লাখ ৪০হাজার পারিবারিক বাগান তৈরী করায় সবজির উৎপাদন এতটা বেড়ে গেছে যে, এখনো কম মূল্যে সবজি পাচ্ছেন ভোক্তারা।
কৃষি বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদের কথা, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের শতকরা ৭৫ ভাগ মানুষ সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত। বিশাল এই সেক্টরের দিকে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছে। কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৃত্তিকা সম্পদ ইন্সটিটিউটসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের মোট আবদযোগ্য জমির পরিমাণ ৮৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫শ’৫৬ হেক্টর। আরো প্রায় লক্ষাধিক হেক্টর পতিত জমি আবাদের আওতায় এসেছে এই করোনার মধ্যে।
অল্পজমিতে বেশি শস্য উৎপাদনের গবেষণা ও অভিযোজন কৌশল প্রয়োগ অর্থাৎ আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাওয়া যখন যেমন পদ্ধতি, সমস্যাদি সমাধান, লাগসই ও টেকসই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি কাজে লাগানো এবং সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ায় দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কৃষি। এই তথ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউটের।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ডক্টর নাজিরুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বাস্তবভিত্তিক স্থায়ী পরিকল্পনা করে নিত্যনতুন শস্যজাত উদ্ভাবন করা হচ্ছে। যা আবহাওয়া ও জলবায়ু উপযোগী। ভাসমান কৃষি, জলমগ্ন কিঞ্চিৎ লবণাক্ত আবাদী জমি ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ফসলের আবাদ ও কৃষির উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণ, গুণগতমান সম্পন্ন বীজ উৎপাদন ও সরবরাহের লক্ষ্যে বহুমুখী কার্যক্রম চলছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জানান, করোনা পরিস্থিতিতে একমাত্র কৃষি সেক্টর সাচ্ছন্দ্যে কর্মকান্ড চলছে। কৃষিই হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। বিশেষ করে আবহাওয়ার খামখেয়ালীর কারণে এলাকাভিত্তিক উপযোগী ‘ক্রপ জোন’ করে সুফল পাওয়া গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী সারাদেশের মধ্যে সবজি, ফুল, রেণুপোনা, খেজুরের গুড়, সাদা সোনা চিংড়ি, মসুর, মরিচ, মটরসহ বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে থাকা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ জাহিদুল আমিন জানালেন, মাঠে মাঠে বিরাট কর্মযজ্ঞ চলছে। ইতোমধ্যে যশোরের রাজারহাট ও মহেশপুরে বোরো ধান কর্তন হয়েছে। যশোর এম এম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর নাসিম রেজা জানান, করোনার দুইবারের ধাক্কায় শিক্ষা দিয়েছে কৃষি জমিই গ্রামীণ অর্থনীতির একমাত্র ভরসা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন