মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

হজ ও শহীদি ঈদের তাৎপর্য জাতীয় জীবনে প্রতিভাত হোক

প্রকাশের সময় : ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মেহেদী হাসান পলাশ

“শহীদের ঈদ এসেছে আজ
শিরোপরি খুন-লোহিত তাজ।
আল্লার রাহে চাহে সে ভিখ্:
জিয়ারার চেয়ে পিয়ারা যে
আল্লাহর রাহে তাহারে দে,
চাহিনা ফাঁকির মণিমানিক”। কাজী নজরুল ইসলাম।
মুসলিম বিশ্বে এখন চলছে উৎসবের আমেজ। এর কারণ আজ থেকে শুরু হয়েছে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম উৎসব হজ ও কুরবানি। হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। আরবি জিলহজ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত মক্কা, মীনা, আরাফাত, মুজদালিফা ও মদীনায় অবস্থান করে নির্ধারিত কিছু রীতি পালনকে ইসলামী পরিভাষায় হজ বলে। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সক্ষম ও উপযুক্ত মুসলিম নরনারীর জন্য হজ ফরজ। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, “এতে রয়েছে ‘মাকামে ইব্রাহীমের’ মতো প্রকৃষ্ট নিদর্শন। আর যে লোক এর ভেতরে প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে। আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার...”। (সূরা আল ইমরান-৯৭)।
অন্যদিকে রসুল সা. বলেছেন, ‘হে মানবম-লী, আল্লাহ তোমাদের উপর হজ ফরজ করেছেন, কাজেই তোমরা হজ করবে।” (মুসলিম-৩১২০)। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ সমাপন করলো এবং হজ সমাপনকালে কোনো প্রকার অশ্লীল কথা ও কাজে কিম্বা গুনাহের কাজে লিপ্ত হলো না, সে সদ্যজাত শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো।’ (বুখারী-১৪২২)। আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেনঃ ‘শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন।’ তিনি আরো বলেছেনঃ ‘একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।’
উপরের কুরআনের আয়াত ও হাদিস থেকে হজের গুরুত্ব সহজেই অনুধাবন করা যায়। চলতি বছর সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনা মিলে সর্বমোট ১,০১৮২৯ জন বাংলাদেশী হজ করতে গিয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রী ৫,১৮৩ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৯৫,৬১৪ জন রয়েছেন। মোট ২৯৯টি ফ্লাইটে তাদের বহন করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট ১৪৪টি; সৌদি এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট ১৫৫টি। অল্প সময়ে বিপুলসংখ্যক ফ্লাইট চালাতে গিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স দিশেহারা অবস্থায় পতিত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বাংলাদেশ বিমানের শিডিউল। অসংখ্য আন্তর্জাতিক ও ডমেস্টিক ফ্লাইটের শিডিউল বাতিল ও দেরির ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেক বছরের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এই ব্যবস্থাপনায় কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। গত ৬ সেপ্টেম্বর জরুরি কাজে বর্তমান লেখককে চট্টগ্রাম যেতে হয়েছিল। একই দিন ফিরতে হবে বলে আকাশ পথ বেছে নিতে হয়। অনেক অপশন থাকা সত্ত্বেও লেখক জাতীয় এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ বিমানে যাওয়া পছন্দ করেন। শুরুতেই যাত্রা পথে বিমান ৪৫ মিনিট দেরিতে ছাড়ে। ফিরতি পথে ৯.৪৫ মিনিটে বিমানের ফ্লাইটে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে প্রবেশ করে ফ্লাইটের কোনো হদিস পাননি। খোঁজ নিলে এয়ারপোর্টে উপস্থিত বিমানের কর্মকর্তারা জানান, কখন ফ্লাইট আসবে তা জানা নেই। অথচ টেলিফোনে যাত্রীদের জানানো হয়নি। যাত্রীদের রাতের খাবার ব্যবস্থাও নেই। এয়ারপোর্টের ক্যান্টিনও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষুধার্ত যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন থেকে থেকে। এদিকে, আবুধাবীগামী যাত্রীরা সকাল থেকে এয়ারপোর্টে এসে বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ততক্ষণে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছে আন্তর্জাতিক লাউঞ্জে। এয়ারপোর্টের কর্মকর্তারা নিরাপত্তা রক্ষায় এগিয়ে গেলে যাত্রীদের প্রতিরোধের মুখে লাঞ্ছিত হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হন। রাত ৩টার দিকে ঢাকাগামী অন্য একটি ফ্লাইটে টিকেট পরিবর্তন করে লেখক ফিরতি যাত্রা শুরু করেন। বিমান কর্মীদের যুক্তি, হজের শিডিউল ঠিক রাখতে গিয়ে তাদের নিয়মিত অনেক ফ্লাইট ক্যান্সেল করতে হয়েছে। ফলে এই শিডিউল জট। কিন্তু নিয়মিত যাত্রীদের বক্তব্য, বিমান যাত্রীদের এই ভোগান্তি নিয়মিত।
যাই হোক, হজ মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত হলেও সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে থাকে এর ইমেজ ও আমেজ। হজের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে যা খাতামান্নাবীয়ীনের পূর্ববর্তী নবীগণের উপর বর্ণিত কিতাবেও বর্ণিত হয়েছে। কাবাঘরে সর্বপ্রথম হজ আদায় করেন ইসলামের নবী আদম(আ.); তারপর নূহ(আ.)সহ অন্য ইসলামের অন্যান্য নবী-রাসূল(আ.)। ইব্রাহিম (আ:) এর সময় থেকে হজ ফরয বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়। উল্লেখ আছে, আল্লাহ বেহেশত থেকে আদম ও হাওয়াকে যখন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন, এতে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উভয়ে আরাফাত ময়দানে এসে মিলিত হন। এই ঘটনার স্মারক হিসেবে মুসলিমরা আরাফাতের ময়দানে এসে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে ইবাদতে মগ্ন হন। হিজরি সনের ১২তম মাস হলো জিলহজ মাস। ইসলামের বর্ণনা অনুসারে এই সময়ই আল্লাহ ইব্রাহিম(আ.)কে হজ ফরজ হওয়ার কথা ঘোষণা করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
বলা হয়ে থাকে, এ আদেশের পর ইব্রাহিম(আ.) আবু কোরাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে অঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেন, লোক সব, তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই গৃহের হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন করো। এই বর্ণনায় আরো উল্লেখ আছে যে, ইব্রাহিমের (আ.) আল্লাহর ঘোষণা পক্ষ থেকে বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেয়া হয়। হজের বিভিন্ন আচার-কায়দা ইব্রাহিমের (আ.)জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন বর্ণনায় উল্লেখ আছে, ইব্রাহিম(আ.) স্রষ্টার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরাকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন। সেখানে, কাবা শরীফের অদূরে, বিবি হাজেরা নবজাত শিশু ইসমাইলকে (আ.) নিয়ে মহাবিপদে পড়েছিলেন। সাহায্যের জন্য কাউকে না পেয়ে তিনি পানির খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই হজের সময় মুসলিমদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে হাঁটার নিয়ম রয়েছে। বাংলা সাহিত্যে হজ নিয়ে খুব বেশী রচনা পাওয়া যায় না। সমসাময়িক দুই বাংলার সেরা কবি আল মাহমুদ সৌদী সরকারের সহায়তায় হজব্রত পালন করে এসে ‘একটি চুম্বনের জন্য প্রার্থনা’ শিরোনামে গল্প লিখেছিলেন।
তবে হজ নিয়ে বাংলা সাহিত্যে রচনার ঘাটতি থাকলেও কুরবানি নিয়ে সমৃদ্ধ রচনা রয়েছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিজেই কুরবানি নিয়ে একাধিক বিখ্যাত কবিতা রচনা করেছেন। ‘কুরবানি’ শিরোনামের কবিতায় তিনি লিখেছেন,
“এয় ইব্রাহীম আজ কোরবানী কর শ্রেষ্ঠ পুত্র ধন!”
ওরে হত্যা নয় আজ ‘সত্যা-গ্রহ’ শক্তির উদ্বোধন!
কাজী নজরুল ইসলাম তার ‘কোরবানী’ কবিতায় কুরবানিকে জাতীয় মুক্তির দিকদর্শন হিসাবে বিবেচনা করেছেন। কোরবানীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্যে মুসলমানদের উদ্ভাসিত হতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
“মুসলিম রণ ডঙ্কা সে
খুন দেখে করে শঙ্কা কে
ওরে হুঙ্কারে, ভাঙি গড়া ভীম কারা লড়বো রণ-মরণ!
ঢালে বাজবে ঝন-ঝনন।
ওরে সত্য মুক্তি স্বাধীনতা দেবে এই সে খুন-মোচন”।
শুধু তাই নয় নজরুল কুরবানির ঈদকে ‘শহীদী ঈদ’ বলে আখ্যা দিয়েও কবিতা লিখেছেন,
“খেয়ে খেয়ে গোশত রুটি তো খুব
হয়েছ খোদার খাসি বেকুব
নিজেরে দাও কোরবানী।
বেঁচে যাবে তুমি বাঁচিবে দ্বীন
দাস ইসলাম হবে স্বাধীন...!
নজরুল ইসলামের কুরবানি নিয়ে রচিত এই লাইনগুলোতে সূরা হজের ৩৭ নম্বর আয়াতের মর্মকথা ফুটে উঠেছে। আল্লাহ বলেছেন, “কুরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। আল্লাহর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাক্বওয়া।”
ত্যাগের মাহিমায় ভাস্বর হয়ে মুসলিম জাহানে কুরবানি আসছে আগামী সোম-মঙ্গলবার। লুনার ক্যালেন্ডারের সাথে মিল রেখে দুই দিনে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কুরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশে আগামী মঙ্গলবার কুরবানির ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ও নগরবাসীরা ইতোমধ্যে ঈদের ছুটি কাটাতে নাড়ির টানে ফিরে গেছে প্রিয় স্বজনের সান্নিধ্যে। কুরবানির ঈদের সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হচ্ছে কুরবানি প্রদান করা। হজের মতো কুরবানির সাথে জড়িত রয়েছে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহীমের (আ.) স্মৃতি। এতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী ইব্রাহীমকে (আ.) তার সব চেয়ে প্রিয় বস্তু কুরবানির নির্দেশ দিলেন। ইব্রাহীম (আ.) একে একে তার বেশ কিছু প্রিয়বস্তু কুরবানি দেয়ার পরও একই স্বপ্ন দেখতে লাগলেন। শেষে তিনি তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হিসাবে নিজ ঔরসজাত সন্তান ইসমাইলকে (আ.) সাব্যস্ত করে তাকে কুরবানি দিতে শুরু করলেন। আল্লাহ ইব্রাহীমের (আ.) নিয়ত কবুল করে জীবরাইলকে (আ.) পাঠিয়ে পুত্রের স্থানে একটি দুম্বা কুরবানিকে কবুল করলেন। আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইব্রাহীমের (আ.) এই মহোত্তম ত্যাগের দৃষ্টান্ত স্মরণীয় ও অনুসরণীয় করে রাখতে আল্লাহ প্রতি বছর কুরবানির প্রচলন করেন মুসলমানদের উদ্দেশ্যে।
প্রতি বছর কুরবানি এলে কুরবানির পশুর একটা বড় চাহিদা ও সঙ্কট তৈরি হয় বাংলাদেশে। সাধারণত এই সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ সবেচেয়ে বেশি নির্ভর করে প্রতিবেশী ভারতের উপর। কিন্তু বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারত থেকে গরু রফতানি বন্ধ করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী হিসাবে পরিচিত বিজেপি সরকার শুধু বাংলাদেশেই গরু রফতানী বন্ধ করেছে তাই নয়। নিজ দেশেও মুসলমানরা যাতে গরু কুরবানি না দিতে পারে তার জন্য নির্দেশ জারি করেছে। যদিও এখনো ভারত বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় গরুর গোশত রফতানীকারক দেশ। ভারত ২০১৪ সালে সাড়ে ১৪ লাখ টন গরুর গোশত রফতানী করে প্রায় ২৬ হাজার কোটি রুপি বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। ২০১৫ সালে ১৫ লাখ টন গরুর গোশত রফতানী করে ৩০ হাজার কোটি রুপী আয় করে। এর সাথে বিজেপি নেতাদের নামও প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ বিজেপি গোহত্যা বন্ধ নয়, মুসলিমদের ভারতে গরুর গোশত খাওয়া ও গরু কুরবানি দেয়া বন্ধ করেছে। গত বছর কুরবানির আগে হঠাৎ করেই গরু রফতানী বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশ বেশ বেকায়দায় পড়ে। সেবার নেপাল ও মিয়ানমার থেকে দ্রুত গরু আমদানী করে সরকার বাংলাদেশের কুরবানির গরুর চাহিদা মিটিয়েছিল। এদিকে ভারত গরু রফতানী বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে গরুর গোশতের দাম বেড়ে যায়। ফলে কৃষকে ও খামারীরা গরু উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠে এবং ১ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ গরু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু রফতানী বন্ধ থাকলেও চোরাচালানির মাধ্যমে সামান্য কিছু গরু বাংলাদেশে ঢুকেছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে ব্যাপকভাবে গুরু আমদানীর চেষ্টা থাকলেও আবহাওয়ার কারণে মিয়ানমার থেকে প্রয়োজনীয় গরু আমদানী করা সম্ভব হয়নি। তা সত্ত্বেও কুরবানির পশুর সঙ্কটের আশঙ্কা করছেন না সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, দেশীয় গরু দিয়েও কুরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। এই যে ভারতীয় বাধার মুখে বাংলাদেশের খামারীরা গরু উৎপাদনে এক বছরের মধ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে পেরেছে এই প্রতিজ্ঞা ও প্রচেষ্টা কুরবানির অন্যতম শিক্ষা।
কুরবানির মূল শিক্ষা মুসলমানদের জীবনে আল্লাহকে, আল্লাহর নির্দেশকে, ধর্মকে সর্বোচ্চ স্থান দেয়া। অর্থাৎ মা, বাবা, সন্তান, স্ত্রী, সম্পদ, স্বাস্থ্য, জীবন বা অন্যবিধ যে কোনো প্রিয়বস্তুর চেয়ে আল্লাহ নির্দেশকে প্রাধান্য দেয়া, গুরুত্ব দেয়া ও প্রতিষ্ঠা করা এবং এই প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো ত্যাগ হাসিমুখে গ্রহণ করা হচ্ছে কুরবানির সবচেয়ে বড় শিক্ষা। জাতীয় কবির ভাষায়-
“চাহি না ক’ গাভী দুম্বা উট,
কতোটুকু দান, ও দান ঝুট।
চার কোরবানী চাই না দান।
রাখিতে ইজ্জত ইসলামের
শির চাই তোর তোর ছেলের
দেবে কি? কে আছ মুসলমান”?
মানব জীবনের ষড়রিপুর তাড়না, সকল খারাপ, বাজে, কু বিষয়গুলো পরিহার করাও কুরবানির অন্যতম শিক্ষা। কুরবানির আরেক শিক্ষা অঙ্গীকার। মন্দ কাজ পরিহার ও ভাল কাজের ব্রত করার অঙ্গীকার হচ্ছে কুরবানি। কবির ভাষায়-
“মনের পশুরে কর জবাই
পশুরাও বাঁচে বাঁচে সবাই”।
কুরবানির আরো এক শিক্ষা সংগ্রাম। ভালোর জন্য, সত্যের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দেয় কুরবানি।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম আরো বলেছেন,
“আপনারে শুধু বাঁচায় যে,
মুসলিম নহে ভ- সে!
ইসলাম বলে বাঁচ সবাই।....
যতদিন তোরা নিজেরা মেষ,
ভীরু দুর্বল অধীন অধীন দেশ,-
আল্লার রাহে ততটা দিন
দিও না ক’ পশু কুরবানি,
বিফল হবে রে সবখানি।....
পশু কোরবানী দিস তখন
আজাদ-মুক্ত হবি যখন
জুলুম মুক্ত হবে রে দীন।
কোরবানী আজ এই যে খুন
শিখা হয়ে যেন জ্বালে আগুন,
জালিমের যেনো রাখে না চিন্।”
জাতীয় কবির এই ‘শহীদি ঈদ’ কবিতাটি কুরবানির তাৎপর্য অত্যন্ত পরিষ্কার করে আমাদের সামনে ফুটিয়ে তুলেছে। কবিতাটি বৃটিশ উপনিবেশিক আমলে রচিত হলেও আজকের মুসলিম বিশ্ব এবং আজকের বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে সহজেই প্রতিভাত হয় যে, কবিতাটির উপযোগিতা, প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জাতীয় জীবনে কুরবানি এসেছে নানা মাত্রিকতা নিয়ে। আমরা যেন কুরবানির সেই তাৎপর্য আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, সংঘ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠা করতে পারি সেই তৌফিক আল্লাহ আমাদের দান করুন, এই হোক আমাদের একান্ত কামনা।
email: palash74@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
আসমা ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ২:১১ এএম says : 0
অনেক প্রেরণামুলক লেখা। লেখককে ধন্যবাদ।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন