শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সরকারি গুদামের চাল বেসরকারিতে

চট্টগ্রাম বন্দর জব্দ ৭০ টন : বিক্রি হয় সাধারণ বস্তায়

চট্টগ্রাম ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ২২ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

দেশে খাদ্য ঘাটতি পূরণে চাল আমদানি করছে সরকার। আমদানিকৃত চাল প্রতিনিয়ত খালাস হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু একটি অসৎ সিন্ডিকেট এ চাল পাচার করছে। বন্দর জেটি-ঘাট থেকে সরাসরি সরকারি গুদামের বদলে চলে যাচ্ছে বেসরকারি আড়ত-গুদামে। আর সেখান থেকে ‘খাদ্য অধিদপ্তরের’ বস্তা বদল করে সাধারণ বস্তায় ভরে এ চাল বিক্রি হচ্ছে বাজারে। চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী চালের পাইকারি বাজারের একটি আড়ত থেকে মঙ্গলবার রাতভর অভিযানে ৭০ টন সরকারি চাল আটক করার পর চাল নিয়ে চালবাজির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

এ সময় গ্রেফতার করা হয়েছে এক চাল ব্যবসায়ীকে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স মাহী ট্রেডিং নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আড়ত থেকে এসব চাল উদ্ধার করা হয়। এ সময় গ্রেফতার করা হয় গুদাম মালিক আব্দুল বাহার মিয়াকে (৪৫)। আটককৃত চালের বস্তাগুলোতে বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের নাম লেখা।

গতকাল বুধবার নগরীর মনসুরাবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের বর্ণনা দেন মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর) বিভাগের উপ কমিশনার মো. ফারুক উল হক। তিনি বলেন, ভারত থেকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানিকৃত চালের ট্রাক বন্দর জেটি খাদ্য অফিস হতে নোয়াখালীর চরভাটা এলএসডি গোডাউনে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেখানে না গিয়ে পাহাড়তলী চাল বাজারের আড়তদার মেসার্স মাহী ট্রেডার্সের মালিক আব্দুল বাহারের গোডাউনে ঢুকে পড়ে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাকের ২৬০ বস্তা এবং গোডাউনের ভেতরে থাকা এক হাজার ১৪০ বস্তাসহ সর্বমোট ১৪শ বস্তা সরকারি আমদানিকৃত চাল উদ্ধার করা হয়। এসব চালের ওজন ৭০ হাজার কেজি বা ৭০ মেট্রিক টন। এ সময় একটি ট্রাক আটক করা হয়।

ফারুক উল হক বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ আড়তদার আব্দুল বাহার মিয়া সরকারি চালের বস্তা পরিবর্তন করে নিজস্ব সিল সম্বলিত বস্তায় প্যাকেটজাত করে খোলাবাজারে বিক্রির করার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তে যেসব ব্যবসায়ীর নাম আসবে তাদের মামলায় আসামি করা হবে। ওই ব্যবসায়ী সরকারি চাল ক্রয় সংক্রান্ত সিন্ডিকেটের সদস্য কিনা- তাও তদন্ত করা হচ্ছে। কারণ এই ধরনের কাজ কেউ একা করে না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, তিনি সরকারি চাল ক্রয় সিন্ডিকেটের সদস্য।

গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, এই চালের বাহক সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্স। চাল প্রেরণের চালানে সাক্ষর রয়েছে চট্টগ্রাম জেটি খাদ্য অফিসের সহকারী নিয়ন্ত্রক এস এম নূরউদ্দিনের। আব্দুল বাহার মিয়া বাহক সবুজ অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাছ থেকে ২৬০ বস্তার চাল প্রতিকেজি ৪০ টাকা করে কিনেছেন। বাকি চাল বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে। খোকন নামে এক ব্যক্তি বন্দর থেকে ২৬০ বস্তা চালের চালান বের করে দেন বলে আব্দুল বাহার মিয়া জানান।

চালের ২৬০ বস্তা চালান নোয়াখালীর চরভাটা এলএসডির গুদামে যাওয়ার কথা জানিয়ে গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, বন্দর থেকে চাল সরাসরি গুদামে আসার কথা। সে চাল কিভাবে বেসরকারি গুদামে গেল এ ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছি। এ ঘটনায় আব্দুল বাহারকে আসামি করে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।

নগর পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, করোনা লকডাউনের মধ্যে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় চালের মজুদ গড়ে তুলতে সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের পাকড়াও করার অভিযান শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছরও লকডাউনের সময় নগরীর মনসুরাবাদের দুটি কমিউনিটি সেন্টার থেকে বিপুল সরকারি চাল উদ্ধার করে পুলিশ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন