পরিবত্র মাহে রমজান চিরশান্তির মাস। যে মাসকে বলা হয় রহমত, বরকত এবং মাগফিরাতের মাস। রমজান মাস এমন একটি মাস, যে মাসে পবিত্র কোরআন নাযিল করা হয়েছে। এ মাসের সাওয়াম এর সওয়াব স্বয়ং আল্লাহ্ বিলি বন্টন করবেন। হাদিসে কুদসিতে আছে, মহান আল্লাহ পাক বলেছেন, সাওয়াম আমার জন্য আমি তার পুরস্কার দিব। এ মাসে প্রত্যেক এবাদতে ২০ গুণ সওয়াব বেশি পাওয়া যায়। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, রমজান মাসের একটি নফল কাজ অন্য যে কোন মাসে একটি ফরজ কাজের সমান। এই মাহে রমজানে পবিত্র লাইলাতুল কদর রয়েছে। সেই রাতে ইবাদত বন্দেগী করলে হাজার মাসের চেয়েও বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। প্রতি বছর মহান আল্লাহর অশেষ রহমত, বরকত এবং মাগফিরাত নিয়ে পবিত্র মাহে রমজান আমাদের নিকট উপস্থিত হয়। তাই এ মাসকে আমরা জানাই লক্ষ, কোটি সালাম শ্রদ্ধা এবং সু-স্বাগতম। আরবী বছরের বারটি মাসের মধ্যে পবিত্র মাহে রমজান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, সকল সৎ কাজের পূণ্য দশগুন হতে সাতশগুন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীতে মহান আল্লাহর অশেষ রহমত নাজিল বেশি হয়। তাই এ মাসে মানুষ ইবাদত বন্দেগী বেশি করে। মসজিদে অন্য মাসের তুলনায় নাজামী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কোরআন তেলায়াত মহান আল্লাহ্র তাসবীহ মানুষ বেশি পাঠ করে। রমজান মাসের শয়তানকে বন্দী করা হয়। বেহেস্তের সকল দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং দোযখের সকল দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সকল জাহান্নামী লোকদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং কবরের আযাব বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দুনিয়ায় শান্তি বিরাজ করতে থাকে। রমজান মাসের ওসিলায় দুনিয়াতে খারাপ কাজ কম হয়। রমজান মাস শেষ হয়ে গেলে কবর দেশে দোযখে আগের মতা আযাব শুরু হয়ে যায়। মহান সৃষ্টিকর্তা মাহে রমজান নাযিল করেছেন আত্মশুদ্ধি অর্জন করে আত্ম উপলব্ধি করার জন্য। এক মাস সিয়াম সাধনা করে আমরা সবাই মহান আল্লাহর পথে নিজের জীবন ও পারিবারিক জীবন পরিচালিত করতে পারি তাহলে হবে আমাদের সত্যিকারের সিয়াম সাধনা। রমজান শেষ হবার পর যদি আমরা আগের মত আবার পাপকাজে লিপ্ত হয়ে যাই তাহলে সিয়াম সাধনার কোন সার্থকতা থাকবে না। সিয়াম সাধনার সার্থকতা তখনই থাকবে যখন রমজানের শিক্ষা নিয়ে বাকি এগারটি মাস সৎ পথে ব্যক্তিগত জীবন এবং পারিবারিক জীবনকে পরিচালনা করতে পারব। সাওম একটি মৌলিক ফরজ কাজ। যদি কেউ ইহা অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির হয়ে যাবে। রমজান মাস ধৈর্যের মাস। এক মাস সাওম সাধনার মাধ্যমে বান্দার ধৈর্য্যরে পরীক্ষা হয়। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালার সন্তুষ্টি হয়ে রোজাদার বান্দাদের জান্নাত দান করেন। মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, পরিবত্র রমজান মাস ধৈর্য্যরে মাস এবং এই ধৈর্য্যরে বিনিময়ে পাওয়া যায় জান্নাত। কেহ যদি রোজা রেখে দুনিয়ার যাবতীয় খারাপ কাজ অর্থাৎ পানাহার ঈন্দ্রিয় ভোগ বিলাস থেকে নিজেকে বিরত রাখতে না পারে তাহলে এই রোজা রেখে তার কোন লাভ হবে না। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে হাশরের দিন মানুষের যখন হিসাব নেওয়া হবে, তখন প্রত্যেক ব্যক্তি রোজা একটি মানুষের আকৃতি হবে। কেহ যদি রোজা রেখে হাত, পা অর্থাৎ শরীরের কোন অঙ্গ দিয়ে খারাপ কাজ করলে তার ঐ অঙ্গ নষ্ট হয়ে যাবে। অর্থাৎ হাত, পা, মুখ বিকলঙ্গ, ল্যাংড়া হয়ে যাবে। তখন ঐ রোজা মহান রাব্বুল আলামীনের নিকট উল্টা স্বাক্ষী দিয়ে বলবে হে! মহান আল্লাহ্ তোমার বান্দা রোজ রেখে তোমার আদেশ মানে নাই, সে সংযম সাধান করে নাই, তুমি তার বিচার কর। হে! মুমিন ভাই ও বোনোরা আমাদের উচিত পবিত্র মাহে রমজানের রোজ সঠিকভাবে পালন করা। নচেৎ সওয়াবের পরিবর্তে পাপ হবে। জান্নাতের পরিবর্তে জাহান্নামে যেতে হবে। এই উপাবাসের কোন মূল্য থাকবে না। আমরা সমাজে যারা বিত্তবান, ধনীক শ্রেণির লোকেরা আছি তাদের কিছু সামাজিক দায়িত্ব আছে। এই সিয়াম সাধানার মাসে আমাদের প্রতিবেশী গরীব লোকদের সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য সহযোগিতা করব এবং খোঁজ খবর রাখব। আমরা রোজা রাখলাম কিন্তু আমার গরীব প্রতিবেশি মানুষগুলি কষ্টে দিনাতিপাত করছে, রোজা রাখতে পারছে না তাহলে আমাদের সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হলো না। আমাদের মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যার প্রতিবেশী ক্ষুধার্থ অবস্থায় জীবন যাপন করে সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাই আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমরা আমাদের প্রতিবেশী, গরীব, অন্নহীন, বস্ত্রহীন লোকদের সাহায্য করে তাদেরকে সিয়াম সাধনা করতে প্রচেষ্টা করব। তাহলে হবে আমাদের রোজার প্রকৃত সার্থকতা। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে এই মাহে রমজানে যতদান সাদকা করব তা বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে বরং কমবে না। আমরা দুনিয়ার জন্য পাগল না মহান রাব্বুল আলামিনের আদেশ নিষেধ অর্থাৎ কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী দিনাতিপাত করার জন্য পাগল হতে হবে। মহান আল্লাহ এই দুনিয়ায় আমাদের অনেক সুযোগ, সুবিধা নাজ নেয়ামত ফল ভোগ করার জন্য দিয়েছেন। আমাদের উচিত মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে প্রশংসা করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন