উত্তর : মাহে রমজান। সাফল্যময় জীবনে পৌঁছার মোক্ষম সময়। সময়নির্ভর যে কাজটি নির্দিষ্ট সময়ে করা হয়নি তার শূন্যতা কোনো দিনও পূরণ হবে না। তাই সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন সাপেক্ষে মাহে রমজান উপলক্ষে যে কোনো মুমিন নিজের পরকালকে তাকওয়ার আলোতে করতে পারেন সমৃদ্ধ। পবিত্র কুরানে রমজান মাসকে খেতাব করে সূরা জুমআর ৪ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন- ‘উহা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন।’ কারণ এ মাস তাকওয়া ফরহেজগারীর বার্তা নিয়ে আসে। যে তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হবে সে লাভ করবে পরকালের সুখ-শান্তি।
দুনিয়াতেও মানুষ একটু শান্তিতে জীবন কাটাতে চায়। তারপরও আল্লাহর হুকুমের বিপরীত থেকে কিছু মানুষের বিচ্ছুতি স্বাভাবিক। দুনিয়াতে যা কিছু ভাল-খারাপ আখিরাতে তার ফলাফল আবশ্যক। যারা ভাল কাজ করবে এবং দীনের প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে মানুষের উপকারে সর্বাত্মক এগিয়ে আসবে, দুনিয়ায় ঈমানের সাথে বসবাস করার পাশাপাশি আখিরাতেও রয়েছে তাদের জন্য জান্নাতের মহা-সুসংবাদ।
অথচ আমরা জান্নাতে যেতে রাজী কিন্তু জান্নাত অর্জনের যে নিয়ম-পদ্ধতি বাতলে দেয়া হয়েছে আমরা তার ধারে কাছেও নেই। নামাজ না পড়লে কী শাস্তি তা সকলের জানা। এরপরও এ মাসে নামাজের প্রতি গাফেল অবস্থায় পাওয়া যায় অনেককে। রোজা না রাখলে কী ক্ষতি? এটা জানার পরও দিবসে লাল পর্দা টানিয়ে রেস্টুরেন্টে অনায়াসে খাবারের আয়োজন করেন অনেক ব্যবসায়ী। হজ-জাকাতের অবস্থাও প্রায় একই রকম। অথচ ইসলামের এই পাঁচ রোকন মুসলমানের একমাত্র জীবন বিধান।
এরপরও প্রতি বছর রহমত মাগফিরাত আর নাজাতের বার্তা নিয়ে রমজান আসবে, কারণ ‘রোজা মুমিনের জন্য ঢাল সরূপ’। আর যারা প্রকৃত মুমিন তারা এটার যথাযথ মূল্যায়ন করবে। যারা রমজানের শিক্ষা ও আমলের ক্ষেত্রে ভুল করবে ক্ষতি তাদেরই। পক্ষান্তরে রমজান তার আপন গতিতে প্রতি বছর মুত্তাকীদের জন্য সুসংবাদ নিয়ে হাজির হবে। এভাবেই কেয়ামত পর্যন্ত।
নশ্বর পৃথিবীতে দু-দিনের মুসাফির একদিন বেশি হায়াত পাবে না। আর কবরে যাওয়ার পর কোনো মানুষ দুনিয়াতে আসতে পারবে না। এরপরও কীভাবে আল্লাহ বিমুখ হয়ে এই দুনিয়ার রং-তামাশার ছলে পড়ে খোদার বিধান থেকে আমরা সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে যাই।
আমার নাম-ডাক, বংশ, শাসন, শোষণ, রাজ দরবার, সুনাম সু-খ্যাতি সব কিছু পড়ে থাকবে মাটির পৃথিবীতে। একসময় আমি সবার মন থেকে মুছে যাব। আমার কবরে নেক আমল পৌঁছানোর মতো হয়তো কেউ থাকবে না। দুনিয়াতে আমার নাম নিশানা বাকী থাকবে না। মৃত্যুর পরে আমার পরিবার কয়েকদিন শোকে কাতর থাকবে। এরপর কেউ আমার গোরস্থানের দিকে হয়তো ফিরেও চাইবে না। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি এবং সময়ের স্রোত কবরকে নিঃচিহ্ন করে দেবে। সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবে। কেউ কারও চিন্তা করার প্রয়োজনবোধ করবে না। এই বেদনাদায়ক সময়টা মৃত্যুর পর আমাদের সবার জন্য অবধারিত। কেই এ সময়চক্র থেকে খালী থাকতে পারবে না। সুতরাং আমাকে আমার জান্নাত বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া বিধান পালনে তৎপর হওয়ার মধ্যেই চির কল্যাণ আর প্রাপ্তি।
আল্লাহ তাআলার ঘোষণা ‘প্রত্যেক জীবকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’ কেউ এর থেকে নিস্কৃতি পাবে না। পৃথিবীর বড় বড় শক্তি, যাদের শরীর ছিল পাহাড়ের মতো, শক্তি ছিল কয়েক যুবকের, ক্ষমতা ছিল আকাশচুম্বী, তারাও আজ কবরে গিয়ে অসহায়।
আর আমরা! উচ্চতায় তাদের মতো না হলেও ক্ষমতা, শক্তি, বড়াই তাদের চেয়ে কম নয়। সামান্য এক ফোটা পানি থেকে সৃষ্টি হওয়ার পরও আমাদের কিসের এতো অহংকার! কীসের এতো গরীমা!! আমরা তো কিছু দিনের জন্য দুনিয়াতে এসেছি। দুনিয়াটা সারা জীবনের জন্য নয়, অল্প কিছু দিনের জন্য। একদিন তো এর সামাপ্তি ঘটবে, আর প্রকৃত জীবন হলো পরকাল। যার এই দুনিয়া ভাল হবে কিন্তু পরকাল ভাল হবে না সে হবে চরম দুর্ভাগা। যার দুনিয়া বিপদ-আপদ মুসীবতের হবে কিন্তু পরকাল হবে সুখের, সেই প্রকৃত সুখী। এর জন্য আল্লাহ তাআলার নির্দেশিত পথ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আল্লাহর প্রিয় হতে হলে রমজানকে নিজের ঈমান-আমলের মজবুতির কাজে ব্যবহার হবে। যেমন- নামাজের সময় নামাজ পড়া। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে রোজা রাখা। হজের সময় হলে বাইতুল্লাহর জিয়ারত করা। জাকাতের সময় জাকাত প্রদান করা, সর্বপরি এগুলো আদায়ের পর তাওয়া ফরহেজগারী অর্জন হলে সে প্রকৃত মুমিন। কারণ রমজান মাস তাকওয়া অর্জন এবং পাপ বর্জনের মাস। এ মাসেই একজন মুমিনের ভাগ্যে মিলতে পারে জান্নাতের মতো মহা-নেয়ামতের সুসংবাদ। তবেই একজন মানুষের পক্ষে পরকালের কঠিন সময়ে জান্নাতের মতো মহামূল্যবান শান্তির নিবাস লাভ করা সম্ভব।
উত্তর দিচ্ছেন : মিযানুর রহমান জামীল
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন