‘সয়াল্যান্ড’ খ্যাত উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। ফলে এবছর সয়াবিন আবাদ কম হয়েছে ১০০ হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া ও উর্বর মাটির কারণে এ অঞ্চলে সয়াবিনের বাম্পার ফলন হয়। দেশে উৎপাদিত মোট সয়াবিনের ৮০ ভাগ সয়াবিন এ জেলায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। ব্যাপকভাবে এ ফসলের আবাদ ও বাম্পার ফলন হওয়ায় লক্ষ্মীপুর ‘সয়াবিনের রাজধানী’ খ্যাতি পেয়েছে। যে কারণে ব্রান্ডিং হিসাবে লক্ষ্মীপুরকে ‘সয়াল্যান্ড’ নামকরণও করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুরে সয়াবিন উৎপাদনে দেখা দিয়েছে ভাটা। দিনদিন কমছে এই জেলায় সয়াবিনের আবাদ। চলিত মৌসুমের শুরুতে লাগানো বীজ থেকে চারা গজিয়ে, চারা থেকে গাছ পরিপক্ক হয়ে সয়াবিন গাছে এসেছে। কৃষকরা সয়াবিন ঘরে তুলতে শুরু করেছে।
২০১৯ সালে জেলায় সয়াবিনে আবাদ হয়েছে ৪৮ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে। ২০২০ সালে এর আবাদ নামে ৪০ হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে। আর এ বছর গত বছরের ছেয়ে ১০০ হেক্টর জমিতে কম আবাদ হয়ে তা দাড়িয়েছে ৪০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে। এতে দিনদিন কমছে আবাদ ও উৎপাদন। গত দুই বছর থেকে সয়াবিন চাষে বিপাকে পড়েন কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতে অসময়ের টানা বৃষ্টিতে দীর্ঘদিন জমিতে পানি জমে থাকে। এতে নিচু জমিতে লাঙল দেয়া যাচ্ছে না। আবহাওয়া আনুকূলে না থাকায় সয়াবিনের রাজধানী লক্ষ্মীপুরে গত দুই বছর থেকে আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছেনা কৃষি বিভাগ। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা অন্য ফসল উৎপাদনে বেশি আগ্রহী হওয়ায় ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় কমছে সয়াবিনের চাষ।
তোরাবগঞ্জ এলাকার কৃষক মফিজ উল্যা, জসিম উদ্দিন, চরলরেন্স মামুনুর রশিদ, চরমেঘার রহমত আলী, চরআলগীর মনু মিয়া, চরবংশীর মনির হোসেন ও ইউসুফ আলীসহ অনেকেই জানান, সয়াবিন আবাদে খরচ কম। রোগ ও পোকার আক্রমণও কম হয়। চাষাবাদ পদ্ধতি সহজ। বিক্রি করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় ধানের চেয়ে বেশি। যে কারণে এখানকার কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহী ছিলেন। তবে গত কয়েক বছর সয়াবিন চাষ করে লাভের মুখ না দেখায় কৃষকরা সয়াবিন চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এতে দিন দিন এই জেলায় কমছে সয়াবিনের চাষাবাদ।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারি পরিচালক মো. আবুল হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪০ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ৩ হাজর ২৭০ হেক্টর জমিতে, রায়পুরে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে, রামগঞ্জে ৪০ হেক্টর জমিতে, রামগতিতে ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে ও কমলনগর উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বেলাল হোসেন খান বলেন, অসময়ে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি ডুকে পড়ার করণে চরআঞ্চলের জমিতে সঠিক সময়ে কৃষক চাষাবাদ করতে পারেনি। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় লক্ষ্মীপুরে সয়াবিনের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়ায়নি। তবে আশাকরি যা আবাদ হয়েছে তাতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন