আগুনে পুড়ছে মীরসরাই উপজেলা জুড়ে অবস্থিত সবুজ পাহাড়। দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে হাজার হাজার পাহাড় পুড়ে যাওয়ায় হুমকির মুখে এখানকার জীববৈচিত্র। পুড়ে গেছে অনেকের লাখ লাখ টাকার ফলজ ও বনজ বাগান। নষ্ট হচ্ছে মাটির টপসয়েল। চৈত্র-বৈশাখ মাস আসলেই প্রচন্ড খড় তাপে গাছের পাতা শুকিয়ে নিচে ঝড়ে পরেস্তুপ হয়ে যায়। অনেকে নিজের করে দখল করতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এছাড়া এক শ্রেণির লোক ইচ্ছায়-অনিচ্ছাই বনের মধ্যে আগুন ধরিয়ে দেয়।
জানা গেছে, গত এক মাস ধরে উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন, করেরহাট-রামগড় সড়কের দুইপাশে অবস্থিত পাহাড়, হিঙ্গুলী, জোরারগঞ্জ, দুর্গাপুর, মীরসরাই সদর, খৈয়াছড়া ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিস্তিন্ন পাহাড় পুড়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় আগুন খুব বেশি চোখে দেখা না গেলেও রাতের বেলায় আগুনের পাহাড় পুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেন আশপাশের বাসিন্দারা। যার ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশবিদরা।
উপজেলার মীরসরাই সদর ইউনিয়নের গোভনিয়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জানান, প্রতি বছর এ সময়ে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে হাজার হাজার একর সবুজ পাহাড়। তবে, গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বেশি পুড়ছে বলে জানান তিনি। এভাবে চলতে থাকলে সবুজ পাহাড় ন্যাড়া হয়ে জীববৈচিত্র হুমকির পাশাপাশি পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি। আগুনে পুড়ে যাওয়া ফলজ বাগানের ক্ষতি গ্রস্থমালিক মো. ওমর শরীফ জানান, আমার বাগানে থাকা প্রায় ৭ হাজার ৫শ’ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও চারা আগুনে পুড়ে গেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার তালবাড়িয়ায় প্রায় তিন একর ফলজ বাগান আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। বাগানগুলো শত্রুতা করে পুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ বাগান মালিকদের। ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা হলেন- সাইদুল ইসলাম সোহাগ, অভিরায়, মো. জামাল উদ্দিন ও মো. আব্বানি। সাইদুল ইসলাম সোহাগ জানান, তিনি মধ্যম তালবাড়িয়া রেলস্টেশনের পূর্ব পাশে ব্যক্তিগত জায়গায় প্রায় দেড় একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ বাগান করেন। গত ৪-৫ দিন আগে তিনি ব্যস্ততার কারণে বাগানের দিকে যেতে পারেননি। গত ১৩ এপ্রিল সকালে বাগানে গিয়ে দেখেন তার বাগানের প্রায় সব ফলভর্তি গাছ আগুনে পুড়ে গেছে। প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা বাগান আগুনে পুড়ে গেছে।
মীরসরাই সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমরান উদ্দিন জানান, ফলজ বাগান পুড়ে যাওয়ার বিষয়ে কেউ তাকে অবহিত করেনি। তবে তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে অনেকে পাহাড় পরিষ্কার করার জন্য আগাছা কেটে আগুন লাগিয়ে দেয়। এ বিষয়ে সহকারি বন সংরক্ষক হাসানুর রহমান জানান, পাহাড়ে পাহাড়ার দায়িত্বে টহলদল রয়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় কম। পাশাপাশি সিএমসি কমিটির সদস্যরাও পাহাড়া দিয়ে থাকেন। মানুষের অসাবধাণতার কারণে পাহাড়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এবার বৃষ্টি না হওয়ার কারণে এখনো কোনো স্থানে আগুন জ্বলছে। বৃষ্টি হলে কমে যাবে। এছাড়া পাহাড়ে আগুন দেয়ার ফলে ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে স্থানীয় জনগণকে সচেতন করার পাশাপাশি পাহাড়ে আগুন দেয়া থেকে বিরত থাকতে প্রচারণমূলক কর্মসূচি পালন করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন