শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

মুজিব বাঁধ সড়কের বেহাল দশা

চরম ভোগান্তি আর অন্তহীন কষ্টে পথচলা

রনি ইমরান, পাবনা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১২:০১ এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা বাঁধ। ঐতিহাসিক এ মুজিব বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লক্ষাধিক মানুষের এবং প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হচ্ছে যানবাহন। পাবনার ঈশ্বরদী রুপপুর থেকে বেড়া উপজেলার কাজিরহাট পর্যন্ত বাঁধের ওপর নির্মিত ১৫৭ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়কের অধিকাংশ জায়গায়ই যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। সড়কের কোথাও বড়সড় গর্ত আবার কোথাও বাঁধের মাটি ধসে পড়ে রাস্তায় তৈরি হয়েছে খানাখন্দের। প্রতিদিন শত শত বালু বোঝাই ট্রাক আর ভারী যানবাহনের যাতায়তে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চৈত্র-বৈশাখ মাসে ধূলা-ধোঁয়ার ভাঙা সড়কে অল্প দূরত্বে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছোট যানবাহন চলাচল করলেও বর্ষা মৌসুমে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে সড়কটি। সড়কে ছোট-বড় গর্তে প্রতিনিয়ত মারাত্মক দুর্ঘটনার স্বীকার হয় যানবাহন। রাতে সড়কের দু’পাশের গাছ পালায় আলোহীন ভ‚ত‚ড়ে সড়কটিতে যানবাহন চলাচল প্রায়ই বন্ধ থাকে। গত প্রায় একযুগ আগে মুজিব বাঁধের ওপর নির্মিত সড়কটি এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের কাছে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছিল, কিন্তু সড়কের ওপর অধিক ওজনের যানবাহন চলাচল ও সংস্কারের অভাবে চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। এখন মুজিব বাঁধের সড়ক মানেই চরম ভোগান্তি আর অন্তহীন কষ্টের পথচলা।

মুজিব বাঁধের ওপর নির্মিত এই আঞ্চলিক সড়কটি সংস্কার করলে পাবনার অর্থনৈতিক অঞ্চল উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ক্ষেত নগরবাড়ি নৌবন্দর থেকে দেশের বৃহত্তর প্রকল্প রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে সহজে যাতায়াত, মালামাল বহন এবং এ অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের সকল যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। পাবনার ঈশ্বরদী, লক্ষীকুন্ডা, চরগরগরি, আওতাপাড়া, সুজানগর, বেড়া, পাবনা সদর, পাবনার সীমান্তঘেঁষে থাকা অবহেলিত চরঅঞ্চলের লাখ লাখ মানুষের যোগাযোগে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ হয় পেঁয়াজভান্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলা থেকে। মুজিব বাঁধের রাস্তাটির উন্নয়ন হলে কৃষক নগরবাড়ি ঘাট হয়ে রাজধানীর ঢাকায় পণ্য সরবরাহ করবে সহজেই। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদী আওতাপাড়ায় উৎপাদিত মৌসুমি ফল আম, লিচু, পেয়ারাসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশি বিদেশি ফল দূরদূরান্তে নেয়া সহজ হবে। বাঁধ ঘেঁষে কৃষি অঞ্চল মাইলের পর মাইল জায়গাজুড়ে কৃষকের ক্ষেত বিস্তৃত। কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্য সহজেই পাবনার বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চল থেকে রাজধানীতে নিতে পারবে। এতে অর্থনৈতিকভাবে বেশি সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি পাবনার দক্ষিণ অঞ্চলের কয়েক লক্ষ মানুষের যোগাযোগে আনবে নতুন মাত্রা।

পাবনা সদরের চরঘোষপুর বাঁধের পাশেই কয়েক বিঘা সবজির ক্ষেত কৃষক মো. আজমলের তিনি বলেন, সড়কটি যাতায়তের উপযোগী হলে আমাদের ক্ষেত থেকে উৎপাদিত ফসল আমরা দূরদূরান্ত নিয়ে গিয়ে দিনে দিনেই বিক্রয় করে বাড়ি ফিরতে পারি। সড়কের বেহাল অবস্থায় সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা। সিএনজি চালক মানিক হোসেন বলেন, যাত্রী নিয়ে এই সড়কে চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। চলাচলের সময় গাড়ী নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।

পাবনা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ মোশারোফ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঐতিহাসিক মুজিব বাঁধের ওপর দিয়ে রাস্তা আছে। কিন্তু রাস্তাটির বেহাল দশা। রাস্তাটা যদি মিনি বিশ্বরোড করা হয় তবে শুধু পাবনা সদর নয় গোটা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে, দেশের মেগা প্রকল্প পাকশিতে অবস্থিত রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল অতি সহজেই ঢাকা থেকে আরিচা নগরবাড়ি হয়ে আনা নেয়া করা যাবে। এছাড়া কৃষকরা দিনে দিনেই তাদের উৎপাদিত পণ্য দূরদূরান্তে বিক্রয় করে আসতে পারবে এবং এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক সাফল্য আসবে। ভাগ্যর পরিবর্তন হবে।

পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্বোহা বলেন, পাবনা সদর এলাকায় যেখানে যেখানে সড়কের যানবাহন চলাচলের বেশি অনুপযোগী এমন ৫ কিলোমিটার বাঁধের সড়ক ইট খোয়া দিয়ে আপাতত সংস্করণ চলছে। সড়কটির উন্নয়নে কাজ শুরু করেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন