করোনায় সবকিছুকে অচল করে দিলেও কৃষকের মনোবলকে অচল করতে পারেনি। দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে অচলাবস্থা দেখা দিলেও কৃষিতে বিল্পব লেগেই আছে। ধান, গম ভুট্টার পর এবার দিনাজপুরে টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাল ফলনে বেশ খুশিও টমেটো চাষিরা। কিন্তু করোনাভাইরাসে লকডাউনে জেলার বাইরে বাজারজাতে সমস্যায় সাড়ে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মনের টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা মন দরে। আরো বেশি সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে টমেটো অত্যন্ত নরম জাতের স্বল্পসময়ের মধ্যেই পঁচনশীল দ্রব্য হওয়ায় পাক ধরার পর ক্ষেতে এবং ঘরেও রাখা সম্ভব হয় না। একমাত্র বিশেষায়িত কোল্ড স্টোরেজেই টমেটো সংরক্ষণ করা সম্ভব। কিন্তু এই অঞ্চলে বিশেষায়িত কোল্ড স্টোরেজ নেই। ফলে জুস তৈরিকারি বড় বড় দু/তিনটি প্রতিষ্ঠান কিছু উৎপাদনের ৫ শতাংশ টমেটো ক্রয় করে থাকে। এছাড়া সকল টমেটো সাধারণ মানুষের খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উৎপাদনের পাশাপাশি স্বল্প মেয়াদী পঁচনশীল ফল টমেটো’র ক্রেতা পাওয়াই দুস্কর হয়ে পড়ে। আর প্রতিদিনই চাহিদা’র সাথে সাথে দামও কমতে থাকে। এক পর্যায়ে টমেটো ফেলে দেয়া অথবা ক্ষেতেই পঁচতে দেয়া ছাড়া কৃষকদের কোন উপায় থাকে না।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল বীরগঞ্জ ও সদর উপজেলায় ব্যাপকহারে টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে। করোণায় বিপর্যস্থ অর্থনৈতিক কারনে কৃষক বিকল্প আয়ের পথ খুজতে থাকে। একারনে ধান গম ভুটটার পাশাপাশি টমেটোসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল আবাদ করতে শুরু করে। গত কয়েকবছর ধরেই দিনাজপুরে টমেটোর আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাহ মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন জনান, এবারে জেলায় ১৯০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নে অবস্থিত জেলার বৃহত্তর টমেটোরহাট গাবুড়াহাটে মৌসুমের শুরুতে টমেটো বিক্রি হয়েছে ৬০০-৭০০ টাকা মণ দরে, সেই টমেটো এখন বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকায়। এই দাম প্রতিনিয়ত কমছে। দিনাজপুর জেলার সদর, ফুলবাড়ী, চিরিরবন্দর, বিরল, কাহারোল ও বোচাগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলায় বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ হয়। জানুয়ারির শেষে এই টমেটো আবাদের পর ক্ষেত থেকে তোলা হয় মার্চ মাসের শেষের দিকে। তাই বাজারে টমেটোর এখন ভরা মৌসুম। প্রতি মৌসুমে দিনাজপুর সদর উপজেলার কাউগাঁ, গাবুড়া ও পাঁচবাড়ি বাজার থেকে কয়েক কোটি টাকার টমেটো বেচাকেনা হয়। এসব টমেটো যায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গাবুড়ারহাটে টমেটোর আমদানি প্রচুর হলেও সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। তাছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আগের মতো টমেটো যাচ্ছে না বলে জানান পাইকারী ব্যবসায়ীরা। টমেটোর বাজারে দামে ধস নামায় বিপাকে পাইকারী ব্যবসায়ী ও চাষিরা।
টমেটো বাজার ইজারাদার মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মেট্রিক টন টমেটো ৫০-৬০টি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। টমেটো নষ্টের এবং লোকসানের হাত থেকে কৃষককে বাঁচতে এই এলাকায় টমেটো সংরক্ষণে কোল্ড স্টোরেজ করতে সরকারসহ বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসার আহবান জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন