শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

শোকের সাথে কুমিল্লা-৫ উপনির্বাচনে প্রচারণায় নেমেছে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

মোহাম্মদ আবদুল অদুদ | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ৯:০১ পিএম

এবছরের ২৭ মার্চ চার বারের সাবেক এমপি অধ্যাপক মো. ইউনূস এবং ১৪ এপ্রিল সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ থেকে পাঁচবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু মারা গেলেন। তাদের মৃত্যুর ৪০ দিন না হতেই শোকসভা ও শোক জ্ঞাপনের পাশাপাশি উপ-নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিতে মাঠে নেমেছে দুই ডজনেরও বেশি মনোনয়নপ্রত্যাশী। গত ২২ এপ্রিল সংসদ সচিবালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আসনটি শুণ্য হওয়ার ঘোষণার পর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তোরজোড় বেড়ে যায়।

কেউ সাংবাদিকদের নিয়ে দোয়া মাহফিল, কেউ এতিমখানায় ইফতার মাহফিল, কেউ ভার্চুয়াল স্মরণসভা আয়োজন এবং কেউবা ঘরোয়া পরিবেশে ইফতার পার্টির মাধ্যমে ছবি তুলে ফেসবুকে ও পত্রিকায় দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজের পরিচিতি। কেউ আবার এলাকায় পোস্টারিংও করেছেন। কেউ নিজে এবং দলীয় কর্মী বা অনুসারীদের মাধ্যমে নিজের অতীত কর্মকান্ড তুলে ধরছেন এবং কেউবা পুরো জীবনবৃত্তান্তই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

কেউ নিজের প্রার্থীতার পাশাপাশি মতিন খসরুর পরিবার থেকে যেন কেউ মনোনয়ন পান, সেই চেষ্টায়ও নিয়োজিত। সেখানে আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন, যারা প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর মাঠের রাজনীতি করলো, তাদের দোষটা কি? বিএনপির মত বড় রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা পড়েছেন দুটানায়। বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মিজানুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেছেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি থেকে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে নিষেধ রয়েছে। তিনি বলেন, আমারও সিনিয়র নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ, কৃষকদলের ভাইস চেয়ারম্যান এএসএম আলাউদ্দিন ভুইয়া ও বি.পাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী জসিম উদ্দিন রয়েছেন। অমরা সবাই চাইলেই তো হবে না। দল যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এবং ঈদের পর বসে আমাদের মধ্য থেকে একজনকে মনোনয়ন দেয়, আমরা সেভাবেই কাজ করবেএকই কথা বলেছেন উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বসে নেই সুশীল সমাজ ও তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরাও। শোনা যাচ্ছে মাঠ পর্যায়ে কার জনপ্রিয়তা কেমন, তা নিযে কাজ করছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। তবে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকার আপামর জনসাধারণের প্রত্যাশা, এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হোক, যিনি মতিন খসরু বা অধ্যাপক মো. ইউনূসের শূন্যতা পূরণ করতে সক্ষম। এপ্রসঙ্গে সিনিয়র সাংবাদিক ও কুমিল্লা সাংবাদিক ফোরাম, ঢাকার সাধারণ সম্পাদক মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, মতিন খসরুর কারণে আমরা যেমন সারাদেশে সম্মানিত হয়েছি, তেমন-ই কেউ আসুক, যিনি মানুষকে সম্মান দেবেন এবং সংসদে তার জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য ও দৃষ্টান্তমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কুমিল্লার মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।

মাঠের রাজনীতিতে সরব কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমি ১৯৮৭ সালে বুড়িচং থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯০ সালে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, ২০০৩ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে বাকশীমুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। খসরু ভাইয়ের সাহচর্য পাওয়ায় আমার এসব সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ভাই নেই। আমিও কোনোরকমে বেঁচে আছি। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব।

কুমিল্লা-৫ এ ক্লিন ইমেজের অধিকারী, সোনারবাংলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আবু সালেক মো. সেলিম রেজা সৌরভ এই প্রতিবেদককে বলেন, আবদুল মতিন খসরু সারাদেশের মধ্যে কুমিল্লার তথা বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মুখ যেভাবে উজ্জ্বল করেছেন, তারই হাতেগড়া কর্মী হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন, তাহলে আমিও সেভাবে সারাদেশের মানুষের কাছে বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ার মানুষের মুখ উজ্জ্বল করবো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বলেন, খসরু ভাই যেমন দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, বিনয়ী ও নম্র, ভদ্র ছিলেন, তার সেই সুনাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমি নিবেদিত। তার সম্পর্কে এই জনপদের অনেক মানুষ খুবই আশাবাদী যে, তিনি যদি সংসদে যান তাহলে তার যে অনলবর্ষী বাগ্মীতা এবং জ্ঞাননির্ভর ও তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনা, তা দল ও দেশবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার করবে।

আবদুল মতিন খসরু এমপির স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু জানান, আমি এখন আমার স্বামীকে হারিয়ে শোকাহত। এ বিষয় নিয়ে এখনো চিন্তা করি নাই। সাবেক ঢাকা জেলার দায়রা জজ মরহুম আবদুস সোবহান এর মেয়ে ও ঢাকা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসিনাদৌলার বোন ও ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মেয়ে সেলিনা সোবহান খসরু বলেন, আগামীতে কেন্দ্র ও দুই উপজেলার নেতৃবৃন্দসহ জনগণ যদি আমাকে প্রয়োজন মনে করে তবে বিষয়টা আমি ভেবে দেখবো। তিনি গতকাল রোববার বুড়িচং উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দেয়া বক্তব্যে বলেন, আমার স্বামী সাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু সারা বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত। আগামী প্রজন্মের জন্য তিনি উদাহরণ হয়ে থাকবেন। তিনি বলেন, মতিন খসরু একজন উচুমানের ভালো মানুষ ও ভালো স্বামী ছিলেন। তিনি প্রমাণ করে গেছেন, তিনি একজন প্রকৃত জনদরদী ও ভালমানের নেতা ছিলেন। তার অসমাপ্ত কাজগুলো আমাদেরকে সমাপ্ত করতে হবে। এসময় তার ছেলে আবদুল মুনেম ওয়াসিফ পরিস্কার করে দেন, বাবার অবর্তমানে মা আমাদের পরিবার ও লেখাপড়া সামলেছেন। সুতরাং মায়ের যে বিচক্ষণতা রয়েছে, তাতে আমরা আশাবাদী।

সেক্টরস কমান্ডার্স ফোরাম ঢাকা বিভাগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোহরাব হোসেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, আমিই একমাত্র প্রার্থী গত তিন টার্ম আবদুল মতিন খসরুর সাথে সাথে প্রতিকুল অবস্থায় থেকেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে আসছি। আজকে অন্য যারা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন, তারা গত নির্বাচনগুলোতে ড্যামী প্রার্থী হিসেবে খসরু ভাইকে সাপোর্ট করার জন্য প্রার্থী হয়ে নমিনেশন পেপার কিনতেন। তাছাড়া তাদেরকে কোনোদিন নৌকার প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকায় প্রচার করতেও দেখি নাই। তিনি বলেন, আমাদের মরহুম সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু একজন পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সেহেতু তার অসমাপ্ত কাজগুলোকে এগিয়ে নেয়াই আমাদের প্রথম কাজ। তিনি উল্লেখ করেন, খসরু ভাইয়ের নির্বাচনী ওয়াদার মধ্যে ছিলো আমাদের বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়ায় গ্যাস সংযোগ দেয়া, সেটা তিনি করে যেতে পারেননি। আমি নির্বাচিত হলে আমাদের এই ২ উপজেলায় গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা সর্বপ্রথম করবো। তাছাড়া আমার দেশ-বিদেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ায় জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে বলিষ্ঠ ভুমিকা রাখবো।

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. আবদুছ ছালাম বেগ এই প্রতিবেদককে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ভাইকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আমাকে বলা হয়, পরবর্তীতে বিবেচনা করা হবে। আমি খুবই আশাবাদী যে, মনোনয়ন পাব। ষোলনল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কুমিল্লা শহর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আবদুছ ছালাম বেগ বলেন, দল যদি এবার আমাকে মনোনয়ন দেয়, তাহলে আমি সবাইকে নিয়ে নির্বাচনী কাজ করে এই আসনটি জননেত্রীকে উপহার দেবো।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লার সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান এই প্রতিবেদককে বলেন, আমি সিরিয়াসলি মনোনয়ন চাই। কারণ, দলে আমার অনেক অবদান আছে। তিনি বলেন, আমি ১৯৬৬ সালে ছাত্র লীগের সদস্য হই। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ও ৭০ এর নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে কাজ করি। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে স্বাধীন করেছি। ১৯৭২ সালে রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৭৬ সালে বুড়িচং থানা ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮৩ সালে থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৮৬ ও ১৯৯৩ সালে দুইবার থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৩ সালে সভাপতি নির্বাচিত হই। ২০১৮ সালে আহবায়ক ও ২০২০ সালে থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দলের জন্য নিবেদিত রয়েছি। আমি ১৯৮৬, ৯১,৯৬, ২০০৮ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কনভেনার ও চীফ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।এবার দলের কাছে আমি মনোনয়ন প্রাপ্য বলে দাবি তার।তিনি বলেন, জননেতা মতিন খসরুর সঙ্গে আমার পথ চলা ১৯৬৯ সাল থেকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৫২ বছর আমাদের একসঙ্গে রাজনীতি। একদিনের জন্যও কেউ কাউকে ছেড়ে যাইনি।

আবদুল মতিন খসরুর সহোদর ও কুমিল্লা বারের সাবেক দুইবারে সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মমিন ফেরদৌস শূন্য আসনটিতে প্রার্থিতার বিষয়ে বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তার স্ত্রী সেলিনা সোবহান খসরু, ছেলে আবদুল মুনেম ওয়াসিফ ও কন্যা ডা. উম্মে হাবিবা দিলশাদ মুনমুন যদি প্রার্থী না হয়, তবে আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আছে।তিনি আবদুল মতিন খসরুর শুণ্যতা পূরণ হওয়ার নয় বলেও মনে করে তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।তিনি বলেন, এখন আমাদের শোক প্রকাশের সময়। সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।

বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আখলাক হায়দার বলেন, মরহুম জননেতা আবদুল মতিন খসরুর পরিবারের মধ্যে সম্ভাব্য ৪ জন প্রার্থী রয়েছেন। যদি তাদের কেউ নির্বাচনে না আসেন, তাহলে আমরা সবাই বসে সিদ্ধান্ত নিব। দল যাকে মনোনয়ন দেয়, আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। এসময় তিনি নিজেও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছের কথা জানান।

বুড়িচং আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন মরহুম আবদুল মতিন খসরুর মৃত্যু পরবর্তী শূন্য আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে বলেন, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি অবশ্যই প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। ঢাকাস্থ বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়া পেশাজীবী কল্যাণ পরিষদের এই সাধারণ সম্পাদক এই প্রতিবেদককে বলেন, খসরু ভাইয়েন শুণ্যতা পূরণে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীর বিকল্প নাই। তাই আমার প্রত্যাশা এই নিরিখে দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেবে।

ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী প্রার্থী হতে নিজের ইচ্ছের কথা জানিয়ে এই প্রতিবেদককে বলেন, দল যদি মনোনয়ন দেয়, তবে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব ইনশায়াল্লাহ। ২০১২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ২০০৯ সালে ও ২০১৪ সালে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জাহাঙ্গীর খান চৌধুরী বলেন, জননেতা আবদুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতেই আমি এবার মনোনয়ন চাই।

সুশীল সমাজের প্রতিনিধি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলাদেশের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রফেসর ডা.এম এ হাশেম এই প্রতিবেদককে বলেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এমন কাউকে মনোনয়ন দেয়া উচিত, যিনি অধ্যাপক মো. ইউনূস এবং অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরুর মতো দক্ষ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধিকারী হবে। একজন সংসদ সদস্যের যোগ্যতা নিয়ে মানুষ যাতে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে, এমন কাউকেই উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া উচিত বলে মনে করি। সবাই যোগ্য মনে করলে তিনিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোস্তাফিজুর রহমান শূন্য আসনটিতে উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। তিনি দলের হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি প্রার্থী হতে ইচ্ছুক।তিনি বলেন, আমি আওয়ামী পরিবারের সন্তান। আমার ভাই অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান কুমিল্লা বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি। আওয়ামী লীগ আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি অবশ্যই নির্বাচন করবো।

বুড়িচং উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খোকন বলেন, ইনশাআল্লাহ, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইব। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো। আমি নির্বাচিত হলে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবো, বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়াকে মাদকমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত, চাঁদাবাজ মুক্ত করব, প্রশাসনের দুর্নীতি দমন সহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করবো। বুড়িচং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের ১ম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি গভীরভাবে আশাবাদী দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।

বুড়িচং উপজেলা সমিতি, ঢাকার সভাপতি, ডিএলএম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এমএ মতিন এমবিএ বলেন, খসরু ভাইয়ের অভাব পূরণ করা যাবে না। তবে মানুষ এখন ক্লিন ইমেজের উচ্চশিক্ষিত নেতা চান, যারা বিনয়ী ও ধার্মিক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিবিএ ও এমবিএ করা এবং বালিখাড়া আবদুল মতিন খসরু উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এমএ মতিন এমবিএ বলেন, দল থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়, অধ্যাপক মো. ইউনূস ও প্রিয়নেতা আবদুল মতিন খসরুর কাছে জনগণ যে ভালো ব্যবহার আশা করে, আমি সেই জনপ্রত্যাশা পূরণ পারব। তিনি বলেন, মনোনয়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে আমি অবশ্যই কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

জাতীয় শিক্ষক নেতা ও পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব প্রিন্সিপাল মো. আলী চৌধুরী মানিক মনোনয়ন প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, আমি বিগত তিনবার মনোনয়ন চেয়ে পাইনি। এবারো চাইবো। যদি পাই তবে আমাদের শুধু নয়, সারাদেশের জননন্দিত নেতা, সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবো। তিনি বলেন, আমি জগন্নাথ কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলাম। সৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সংগ্রাম করে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। সংগঠনে আমাদের ত্যাগ আছে। আশা করি এই ত্যাগের মূল্যায়ন পাব।

এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক, আইপি টিভি ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও জয়যাত্রা নিউজ পোর্টাল ও টেলিভিশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন হেলেনা জাহাঙ্গীরও তার প্রার্থীতার কথা শোনা গেলেও তার সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়নি তিনি আসলে প্রার্থী হচ্ছেন কি না।

ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী এই প্রতিবেদকের নিকট প্রার্থিতার ইচ্ছের কথা জানিয়ে বলেন, দল চাইলে আমি অবশ্যই প্রার্থী হতে রাজী আছি। দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার মানুষের সেবা করছি। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগে আমাদের অনেক ত্যাগ রয়েছে। সুতরাং জননেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইব। তিনি যোগ্য মনে করলে আমি খসরু ভাইয়ের অসমাপ্ত কাজগুলো করতে পারব ইনশায়াল্লাহ।

আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদের সহসভাপতি শাহজালাল মজুমদার প্রার্থিতা হতে ইচ্ছের কথা জানিয়ে বলেন, দীর্ঘ দিন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবশ্যই আমাকে মূল্যায়ন করবেন। আমি এই আসনে দলের পক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন চাইবো।

বুড়িচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক, কুমিল্লা জেলা পরিষদ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) সদস্য তারিক হায়দার বলেন, আমি এই দুটি উপজেলা নিয়ে যে সংসদীয় আসন তারই জেলা পরিষদের সদস্য। আমি নিজেকে এই আসনের যোগ্য প্রার্থী মনে করি। তবে যদি প্রয়াত এমপি পরিবারের বাইরে কেউ নির্বাচনে আসে তাহলে আমারও প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা আছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, ভ্যাট কনসালট্যান্টস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ কোম্পানী ল' প্রাকটিশনারস্ সোসাইটি এর সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন এই প্রতিবেদককে জানান, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন। আইন অঙ্গনে প্রিয় নেতা আবদুল মতিন খসরুর নির্বাচনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালনকারী এই এফবিসিসিআিইয়ের সদস্য বলেন, আমি গভীরভাবে আশাবাদী দল আমাকেই মনোনয়ন দেবে।

বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপ কমিটির সাবেক সহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহেদুল আলম জাহিদ। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আমি আবদুল মতিন খসরু মহোদয়ে হাতেগড়া একজন আইনজীবী হিসেবে আইনাঙ্গনে যথেষ্ঠ সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ ঢাকা বারের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও বৃহত্তর কুমিল্লা আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এই তরুণ আইনজীবি বলেন, আমি মরহুম জননেতা আবদুল মতিন খসরুকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছি যে তার মত হতে পারি। আশা করি আমি মনোনয়ন পাব।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং এসএম হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিদার মো. নিজামুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে অনেক পছন্দ করেন। তিনি যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি আশাবাদী মরহুম জননেতা আবদুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পারব।

মনোনয়ন প্রত্যাশী শিক্ষা উদ্যোক্তা আব্দুল জলিল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ছাত্ররাজনীতি করে আসছি। এছাড়া দলীয় সকল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমি সব সময় জড়িত আছি। আমি সামাজিক কাজেও এলাকার মানুষের পাশে সব সময় ছিলাম আছি এবং থাকবো। দল ও জনগণ চাইলে আমি নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে। আমি আশা করছি, দল এবার আমাকে মনোনয়ন দেবে।

বাংলাদেশ যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি যাকে প্রার্থী মনোনয়ন দিবেন আমরা তার পক্ষে কাজ করবো। তবে আমিও ইচ্ছুক। আমি প্রার্থী হয়ে প্রয়াত নেতা আব্দুল মতিন খসরুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে চাই।

ভারত সীমান্তবর্তী বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া সংসদীয় আসনটিতে বুড়িচংয়ের ৯টি এবং ব্রাহ্মণপাড়ার ৮টিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষাধিক। স্বাধীনতা পরবর্তী এই আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন খসরু ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে (মোট ৫ বার) সংসদ সদস্য নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। গত ১৪ এপ্রিল তিনি মারা যান। ১৯৭৩, ১৯৮৬, ১৯৮৮ ও ২০০১ সালে মোট চারবার এমপি নির্বাচিত হন অধ্যাপক মো. ইউনূস। তিনিও গত ২৭ মার্চ ইন্তেকাল করেন। বুড়িচং-ব্রাহ্মনপাড়া আসনটিতে মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব বা গ্রুপিং আগামীতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি ফেলবে বলে সাধারণ নেতাকর্মীদের ধারনা। এখনই কেউ কেউ বলছেন,‘ওমুক’কে দিলে বিদ্রোহী প্রার্থী দাঁড়াবে।দলটা ভাগ হয়ে যাবে।আওয়ামী লীগে ঐক্য থাকবে না।

তবে ভুলে গেলে চলবে না, আবদুল মতিন খসরু প্রায়ই বলতেন- বড় হতে হলে ছাড় দিতে হয়। যে যত বেশি ছাড় দেবে, সে তত বেশি বড় হবে।আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন অনেকেই। অনেকে আবার সেখানে লবিংও করছেন যেন টিকিট পাওয়া যায়। আগে যেমন বলা হতো ‘লাঙ্গল যার জমি তার’, এখন তেমনি বলা হয় ‘মনোনয়ন যার কর্মীরা তার’। আবার টাকার লেনদেনে মনোনয়ন পাওয়া গেলে কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় না।

কমিল্লা-৫ আসনের সিনিয়র সিটিজেন, আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ও বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে আবদুল মতিন খসরু জাতীয় পর্যায়ে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার স্থানে কে মনোনয়ন পাবেন সেটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা জানেন। তিনি বলেন, কনটেমপরারি ওয়ার্ল্ডে শেখ হাসিনা একজন সিনিয়র এবং ম্যাচিউর্ড পলিটিশিয়ান।১৯৮১ সাল থেকে তিনি আওয়ামী লীগের মত একটি দলের সভাপতি হিসেবে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে দল পরিচালনা করে আসছেন।তিনি সমস্ত খবরাখবর নিয়েই মনোনয়ন দেবেন।কাজের মূল্যায়ণ করবেন। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন সেটাই আমরা মেনে নেবো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মনোনয়ন চাওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার। মনোনয়ন যে কেউ চাইতেই পারে।তবে দল যাকে মনোনয়ন দেয় আমরা সবাই তার জন্য কাজ করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
md Musleh uddin ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ১১:১০ পিএম says : 1
আবদুস সালাম বেগ,নাছির ু্উদ্দিন ও প্রার্থী হবেন।
Total Reply(0)
Rashedul Islam ২৭ এপ্রিল, ২০২১, ৮:৩২ এএম says : 0
নৌকা
Total Reply(0)
Billal Bappy ৪ জুন, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
একমাত্র শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ আলী খান চৌধুরী যোগ্য লোক।
Total Reply(0)
Billal Bappy ৪ জুন, ২০২১, ৮:১৯ এএম says : 0
একমাত্র শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ আলী খান চৌধুরী যোগ্য লোক।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন