মধ্যবিত্তের ঘরে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর চারটি পণ্য পৌঁছে দেবে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা যাতে নায্যমূলের পণ্য থেকে বঞ্চিত না হয় এজন্য সরকার ই-কমার্সের সহযোগিতায় ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি ও ডাল এই চারটি পণ্য পৌঁছে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং টিসিবির সহযোগিতায় ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন (ই-ক্যাব) আয়োজিত “মাহে রমযানে ঘরে বসে স্বস্তির বাজার” কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানান বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দেশের মধ্যবিত্ত মানুষের ঘরে টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য পৌঁছে দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত (ই-ক্যাব) ডিজিটাল হাট ডট নেটের ৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অন-লাইনে টিসিবির পণ্য বিক্রয় করছে। গতকাল থেকে আগামী ৬ মে পর্যন্ত ভোজ্য তেল, ছোলা, চিনি এবং ডাল এ চারটি পণ্য বিক্রয় শুরু হয়েছে। ভোজ্য তেল প্রতি লিটার ১০৮ টাকা এবং চিনি, ছোলা ও ডাল ৫৮ টাকা দরে বিক্রয় করছে। একজন ক্রেতা সপ্তাহে ৫ লিটার তেল এবং ৩ কেজি করে চিনি, ছোলা, ডাল কেনার সুযোগ পাবেন। ডেলিভারি চার্জ ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলায় এসব পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গত বছর প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে অনলাইনে। সরকার ই-কমার্সকে সহযোগিতা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হয় এবং ঘরে বসে ই-কমার্সের সুবিধা ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। চলমান ই-বাণিজ্যে যে সব ভুলক্রুটি ধরা পরছে, সেগুলো যাতে পুনরায় না ঘটে, সে বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।
টিপু মুনশি বলেন, বিগত দিনে পেঁয়াজ ও আম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশের মানুষ সুফল পেয়েছে। আশা করা যায়, মানুষ ই-কমার্সের প্রতি আস্থাশীল হবেন। যাতে সুশৃঙ্খল ভাবে ই-বাণিজ্য দেশে প্রসার লাভ করতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বলেন, টিসিবি’র এই পণ্যগুলোতে সরকারের ভূর্তুকি রয়েছে। আমরা আশা করবো যেসব প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য বিক্রয়ের দায়িত্ব পাবে তারা যেন দরিদ্র এলাকাগুলো এবং মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের প্রাধান্য দেয় এবং এক ক্রেতা বেশীপণ্য ক্রয় করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখে। এজন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় পণ্যের দাম, ডেলিভারী চার্জ ও ক্রয়সীমা ঠিক করে দিয়েছে।
ই-ক্যাবের প্রেসিডেন্ট শমী কায়সার বলেন, করোনাকালীন যেকোনো সমস্যায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দ্রুত সমাধান ও সিদ্ধান্ত দিয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজের বাজার দর বাড়ার যে আশংকা ছিল গত বছর সেখানে পেঁয়াজের মূল্যকে জনগণের নাগালে রাখতে ই-ক্যাব থেকে আমরা কাজ করেছি। আমাদেরকে এই কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও টিসিবি। আমি আশা করি এবারো আমাদের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলো লাভহীন এই সেবা দিয়ে এই পবিত্র রমযানে এবং করোনাকালীণ সময়ে মানুষের পাশে থাকবে।
ই-ক্যাবের জেনারেল সেক্রেটারী মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে খুব যত্মসহকারে গত ৮ মাস অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম তদারকী করছি। এর ফলে একদিকে যেমন পেঁয়াজের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে অন্যদিকে জনসাধারণ সাশ্রয়ীমুল্যে পেঁয়াজ পেয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো লাভের চিন্তা না করে সর্বোচ্চ সেবা দিয়েছে। চালডাল এবং যাচাই বেশী মূল্যে বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিয়েছে। যাচাই এবং স্বপ্ন ডেলিভারী চার্জ ছাড়াও পণ্য বিক্রি করেছে।
চালডালের প্রতিষ্ঠাতা ও ই-ক্যাবের ডিরেক্টর জিয়া আশরাফ বলেন, বিগত সেপ্টেম্বর মাস থেকে পেঁয়াজ বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। অনলাইনে মোট বিক্রিত পেঁয়াজের ৬০ শতাংশই বিক্রি করেছে চালডাল। এবারো তার ব্যতিক্রম হবেনা। প্রথমদিন পণ্য শর্টিং ও প্যাকেজিং করতে পাঠাতে সময় লাগতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় দিন থেকে আপনারা পণ্য যথাসময়ে পাবেন। এবারো আমরা আমাদের সেরা সেবা ক্রেতাদের দোরগোড়ায় পৌছে দেব।
ই-ক্যাবের ডিরেক্টর আসিফ আহনাফ এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন, ডবিøও টি ও সেল এর মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, টিসিবি’র পরিচালক মইনউদ্দীন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে উপস্থি ছিলেন, রফতানী অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান, ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভন, যাচাই ডট কম এর সিইও আব্দুল আজিজ, চালডাল এর ডিরেক্টর ইশরাত জাহান নাবিলা, স্বপ্ন ডট কম এর ই-কমার্স লিড শাহেদ উল ইসলাম, ই-ক্যাবের রুরাল স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিল, ব্রান্ড এন্ড মার্কেটিং স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুছ ছোটন ও ই-ক্যাবের ডিজিএম মাহমুদ উর রহমান।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন