বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধিতে নি¤œবিত্ত ও নি¤œÑমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কষ্টের সীমা ছাড়ালেও লাগাম টানার কোন উদ্যোগ নেই। বিগত রমজানের শেষভাগে দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে টিসিবি’র পণ্য বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ করা হলেও তা আর চালুর কোন উদ্যোগ নেই। ফলে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রনে এখন আর তেমন কোন পদক্ষেপ অবশিষ্ট নেই। শুধুমাত্র ‘ফ্যামিলি কার্ড’র মাধ্যমে এ অঞ্চলের ৬টি জেলার ৪২টি উপজেলায় ৩.৪০ লাখ পরিবারের মাঝে মাসে একবার নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের সিমিত সরবারহ চালু রাখা হলেও বৃহত জনগোষ্ঠী খোলা বাজার কম দামে সিমিত কিছু নিত্যপণ্য কেনার সুযোগ পাচ্ছেন না। ট্রাকের মাধ্যমে খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রীর সরকারী সিদ্ধান্তের বিষয়ে বরিশালের জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহ টিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রও এখন আর কিছু জানেন না।
ফলে বাজারে নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে এখন সরকারী নুন্যতম কোন উদ্যোগ অবশিষ্ট না থাকায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগ সব সীমা ছাড়িয়েছে। এমনকি সম্প্রতি ভোজ্য তেলের দাম কমার ঘোষনা দেয়ার হলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়নি। উপরন্তু বাজারে ভোজ্য তেলের সরবারহেও ঘাটতি রয়েছে। খুচরা ব্যাবসায়ীদের দাবী, ‘আগের বেশী দরে তেল কিনে এখন তারা কম দামে কিভাবে বিক্রী করবেন’ ? বরিশালের বাজারে এখনো প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। মুসুর ডাল সহ অন্যান্য ডালের দামও ক্রমশ বাড়ছে। চিনির কেজি ৮৫ টাকার ওপরে। চালের বাজারের অস্থিরতা এখনো স্তিমিত হয়নি। নি¤œমানের মোটা চালের কেজি এখনো ৪০ টাকার ওপরে। মধ্যম মানের ‘বিআর ২৮Ñবালাম’ চালের কেজি ৪৮-৫০ টাকা এবং ‘মিনিকেট’ নামের ভালÑমধ্যম মানের চালের কেজি এখনো ৬৪Ñ৬৮ টাকা কেজি।
অথচ বিগত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধানের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭শ টাকা মন। এমনকি ঘূর্ণিঝড় ‘অশিনি’তে ভর করে বর্ষনের পর পর ধানের দর সাড়ে ৬শ টাকায়ও নেমেছিল। আর কৃষকের এক মন বোরো ধান উৎপাদন ব্যায় এবার ৮শ টাকায় পৌছে ডিজেল সহ কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির কারণে। অথচ একমন ধানে নুন্যতম ২৫ কেজি চাল উৎপাদন হলেও ধানের দামের হিসেবে ২৫% মুনফা সহ চালের কেজি গড়ে ৩৫ টাকার ওপরে ওঠার কথা নয় বলেই মনে করেন বাজার পর্যবেক্ষকগন। ফরিয়াদের মাধ্যমে বাজার থেকে কম দামে ধান কিনে মিল মালিকা অতি মুনফার মাধ্যমেই চালের বাজার নিয়ন্ত্রন করায় মূল্য বৃদ্ধির লাগাম নিয়ন্ত্রনের বাইরে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে গত ১৫ দিনে বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমলেও এখনো ৪০ টাকা কেজির নিচে তা মিলছে না। কোন কোন সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। এমনকি মৌসুমের শুরুতে ১৫ টাকা কেজির গোল আলু ইতোমধ্যে ৩২ টাকা উঠে গত সপ্তাহ থেকে তা ২৮ টাকায় নেমেছে। কৃষকের ঘরের আলু ব্যাবসায়ীদের হীমঘরে ঢোকার পরেই গরীব ভোক্তাদের এ সবজীর দাম নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেছে। তবে বিগত রবি মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজি আর বোরো ধান সহ প্রায় সব কৃষি পণ্যের উৎপাদনই ছিল স্বাভাবিক এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী।
চাল,ডাল আর ভোজ্য তেল সহ সব নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারগুলোর দূর্ভোগের মাত্রা সীমার শেষ প্রান্তে পৌছায় হতাশা আর ক্ষোভও বাড়ছে। তবে অতি প্রয়োজনীয় কিছু নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দূর্ভোগ থেকে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিতে অবিলম্বে খোলা বাজারে টিসিবি’ন পণ্য বিক্রী কার্যক্রম পুনরায় চালরু দাবী জানিয়েছেন সাধারন ভোক্তগন। বিগত জুনের প্রথমভাগ থেকেই পুনরায় টিসিবি’র মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও বিষয়টি নিয়ে এখন সবাই চুপচাপ। সাধারন মানুষকে হতাশ করেই সে কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ট্রাক যোগে টিসিবি’র পণ্য বিক্রী কার্যক্রম আর শুরু হবে কিনা, সে বিষয়ে এখন দায়িত্বশীল মহলও কিছু বলতে পারছেন না।
তবে অঅগামী সপ্তাহের শেষে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সিমিত কিছু পণ্য বিক্রী আবার শুরু হতে পারে টিসিবি সহ বিভাগীয় প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। গত মার্চ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। যদিও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন হয়ে জেলা প্রশাসন এসব ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়েই সুবিধাভোগীদের তালিকা নিয়ে পক্ষপাত্বিত্বেরও অভিযোগ ছিল।
আগামী দিন কয়েকের মধ্যে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভতর্’কি মূল্যে দক্ষিণাঞ্চলের মাত্র ৩.৪০ লাখ পরিবার টিসিবি পণ্য পেলেও খোলা বাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এর কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেই মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।
এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহ টিসিবি’র স্থানীয় দায়িত্বশীল মহল থেকে ‘বিষয়টি সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভশীল’ বলেই জানান হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন