বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। অনেক পণ্যের মূল্য এখনো বাড়ছে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের সংসার চালাতে ত্রাহি অবস্থা। নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত সাধারণ ক্রেতাদের কথা চিন্তা করে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) তিনটি নিত্যপণ্য (সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি) অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করছে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গত ৫ জুলাই থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিসিবির ওই ট্রাকসেলে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ৫৫ টাকা কেজি দরে চিনি ও মসুর ডাল এবং ১০০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। এ কার্যক্রম চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।
বাজার থেকে অনেকটা কম মূল্যে পণ্য কিনতে পারছেন বলে প্রতিদিনই রাজধানীতে টিসিবির ট্রাকে ক্রেতার লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ মোড়, পল্টন, নিউমার্কেট এসব স্থানে দেখা গেছে, প্রতিটি স্থানেই ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি। প্রখর রোদের মধ্যে দুই তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য পেয়ে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে পণ্য পাওয়ায় পর তার সব কষ্ট ভুলে যান। যারা লাইন দাঁড়িয়ে আছেন তাদের হতে ছাতা ও বাজারের ব্যাগ দেখা গেছে। তবে সেখানে সামাজিক দূরত্ব মানার কোনো বালাই নেই। গায়ে গা ঘেঁষে গাদাগাদি করে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকের মুখে মাস্ক নেই। যাদের মুখে মাস্ক দেখা গেছে তাদেরটাও থুতনির নিচে অথবা গলায় ঝুলতে দেখা গেছে।
রাজধানীর রামপুরা টিভি সেন্টারের সামনের রাস্তায় গতকাল দুপুর ১২টায় টিসিবির একটি ট্রাক ঘিরে ছিল মানুষের বিশাল লাইন। রাস্তা বেঁকে মানুষের লাইন গিয়ে ঠেকেছে হাতিরঝিলের রাস্তায়। লাইন ঠিকই আছে, তবে দু’জন ক্রেতার মাঝখানে ফাঁকা ছিল না এক ইঞ্চি জায়গাও। অথচ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশেষজ্ঞরা প্রত্যেককে অন্তত ১ মিটার দূরত্বে অবস্থান করতে বলেছেন।
লাইনে দাঁড়ানো বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। কিছু সময় পরপর ওই লাইন থেকে একটি ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল, ২ কেজি চিনি ও ২ কেজি মসুর ডালের প্যাকেট নিয়ে একজন করে বেরিয়ে আসছেন। মুখে তার বিজয়ের হাসি। যেন যুদ্ধ জয় করে এসেছেন। আসলে অনেকটা যুদ্ধ জয়ের মতোই অবস্থা। কারণ সকাল ১০টা থেকে এসে দীর্ঘ দুই তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তখন এ ৯ কেজি পণ্য হাতে পান, তখন সব কষ্ট ভুলে মুখে একটা হাসির ঝিলিক দেখা যায়।
পূর্বরামপুরার এক বেসরকারি কোম্পানির চাকরিজীবী সুমন প্রায় ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে পেয়েছেন টিসিবির পণ্য। তিনি বলেন, পণ্য পেয়ে খুবই ভালো লাগছে। লকডাউনে অফিস বন্ধ রয়েছে। গত মাসের বেতন এখনও পাইনি। ধার-দেনা করে সংসার চলাতে হচ্ছে। এ অবস্থা কিছুটা কম দামে টিসিবির ট্রাক থেকে জিনিস কিনে নিচ্ছি। আমি প্রায় ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে তেল, চিনি, ডাল এসব পণ্য পেয়েছি।
ওই টিসিবির ট্রাকের পরিচালক সবুজ মিয়া বলেন, আজকে ৭০০ কেজি চিনি, ৪০০ কেজি ডাল এবং এক হাজার লিটার সয়াবিন তেল নিয়ে আমরা বের হয়েছি। এখানে পৌঁছেছি সকাল ১১টার দিকে। এখন প্রায় সবই শেষের দিকে। এখানে মানুষ লাইন ধরেছে ঠিকই। কিন্তু কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, দূরত্ব মানছে না। বারবার বললেও আমাদের কথা মূল্যায়ন করছেন না কেউ।
মালিবাগ রেল গেটের সামনে টিসিবির ট্রাকে অল্প সময়ের মধ্যে তেল শেষ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও শুধুমাত্র চিনি পেয়ে অনেকে দীর্ঘশ্বাস ছেড়েছেন। সামিনা নামের এক গৃহকর্মী ২ ঘণ্টার বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ২ কেজি চিনি কিনতে পেরেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেও তেল নিতে পারলাম না। খুবই খারাপ লাগছে। তেলের জন্যই এতো কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। বাজারে তেলের দাম অনেক। এখান থেকে পেলে কিছু টাকা সাশ্রয় হয়। এখন ১টা বাজে, ১১টার আগে এসে এখানে দাঁড়িয়েছি। কোনো খাওয়া দাওয়া নেই। এটা কি মানুষের জীবন? আবার তেলের জন্য কাল সকালে এসে দাঁড়াতে হবে।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়ানো ক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মানানোর বিষয়ে বলেন, আমরা ডিলারদের প্রতিদিনই বলি, আপনারা নিজেরা স্বাস্থ্যবিধি মানবেন এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে উদ্বুদ্ধ করবেন। কোনো ক্রেতা মাস্ক ছাড়া আসলে তাকে পণ্য দেবেন না। প্রত্যেকেই সামাজিক দূরত্ব মেনে লাইনে দাঁড়াতে বলবেন। আমরা মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনুরোধ করতে পারি বলপ্রয়োগ করতে পারি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন