বাজারে সব পণ্যের দাম চড়া। মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে নিত্য পণ্য। ফলে তেল, পেঁয়াজ, ডাল ও চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্য ক্রয়ে মানুষের ভরসা এখন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংসারে অপরিহার্য এসব পণ্য বাজারের চেয়ে কম মূল্যে কিনতে অনেকেরই ভরসা টিসিবির ট্রাকসেল। প্রতিদিন মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ট্রাক থেকে এসব পণ্য কিনছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি আগে বাজার চাহিদার মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ সরবরাহ করলেও এখন সেটি গিয়ে ঠেকেছে ১২ শতাংশে। সক্ষমতা বাড়ানো হলে টিসিবি বাজারের চেয়ে কম দামে আরো বেশি নিত্যপণ্য বিক্রি করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি বাজারে ব্যবসায়ীদের একচেটিয়া অতি মুনাফা করাও বন্ধ হবে।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে টিসিবির ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাদ্দকৃত নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য নিয়ে বিক্রির জন্য নির্ধারিত পয়েন্টে ট্রাক পৌঁছানোর আগেই শত শত মানুষ অপেক্ষায় থাকেন। আর বিক্রি শুরুর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে পণ্য শেষ হয়ে যায়। তবে ঢাকার শ্যামলী কলেজগেট এলাকায় টিসিবি ট্রাকসেলের দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম রনি জানান, পণ্যের চেয়ে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি থাকায় প্রতিদিনই বহু মানুষ খালি হাতেই ফেরত যান। তাদের গ্রাহক প্রতি যে পরিমাণ পণ্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ঠিক সেই পরিমাণ পণ্যই জনপ্রতি বিক্রি করা হয়। রনি বলেন, অনেকেই আবার একবারে বেশি কিনতে চান, যদিও পণ্যের তুলনায় ক্রেতা চাহিদা বেশি থাকাই সেটা সম্ভব হয় না। যে পরিমাণ চাহিদা থাকে তাতে বিক্রি শুরুর দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ট্রাকসেল শেষ হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার টিসিবির পণ্য কিনেত লাইনে দাঁড়ানো মো. সজীব হোসেন কমলাপুর থেকে মতিঝিলে আসেন পণ্য কিনতে। বাজারে দাম চড়া থাকায় এখান থেকে ডাল ও চিনি কিনে বাড়ি ফিরবেন বলে জানান। সজীব বলেন, এখান থেকে পণ্য কিনতে আসছি কারণ অনেকটা কম দামে পাব। বাজারে যে দাম, তার থেকে একটু কষ্ট হলেও এখান থেকে পণ্য নিলে খরচটা বাঁচে। আমার মতো স্বল্প আয়ের লোকের জন্য এটা একটা ভরসা।
বাজার থেকে দুই লিটার সয়াবিন তেল তিনশ’ টাকা না কিনে একশ’ টাকা সাশ্রয় করতে টিসিবি থেকে কিনতে গোপীবাগে আসছেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, আমার আয় খুবই সামান্য। বাজারে গেলে একটা কিনে আরেকটা কেনার পয়সা থাকে না। এক লিটার তেল কিনতে গেলে দেড়শ’ টাকা চলে যায়। তাই এখানে কিনতে আসছি টাকা বাঁচাতে। যাত্রাবাড়ীর মাছুমা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, আগেও একবার এসে ফেরত গেছি, কিনতে পারিনি। লাইন আমার পর্যন্ত আসার আগেই সব নাকি শেষ হয়ে গেছিল। আমাদের মতো গরিবদের জন্য কম মূল্যে পণ্য কেনার সুযোগ রাখলে খেয়ে পরে বাঁচতে পারি।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান ও যাত্রাবাড়ী পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব নিত্যপণ্য টিসিবির থেকে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এখানে খুচরা বাজারে তেল প্রতি লিটার ১৫০ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৮৮ টাকা, মসুর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ৯০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১১০ টাকা আর পেঁয়াজ প্রতি কেজি দেশি ৪৫ টাকা ও ভারতীয় ৪০ থেকে ৪২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ রাজধানীসহ সারা দেশেই টিসিবির ট্রাকসেল বন্ধ রয়েছে। অক্টোবরের ৬ থেকে ৭ তারিখের দিকে আবারো ট্রাকসেলে নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন, টিসিবির ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহী হুমায়ুন কবির। টিসিবির এই মুখপাত্র বলেন, ভোক্তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে টিসিবি এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ পণ্য সরবরাহ করছে। আগে এটি ছিল মাত্র ১ থেকে ২ শতাংশ। চাহিদা বাড়ায় ট্রাকসেল বাড়ানো হয়েছে। টিসিবির সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেলে পণ্য বিক্রির পরিমাণও পর্যায়ক্রমে বাড়বে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন