কুড়িগ্রাম জেলা সংবাদদাতা : মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কোটা হতে বিনামূল্যে হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপনের জন্য ভাল্ভ/অক্সিজেনের বরাদ্দ পেলেও চিকিৎসার আনুষঙ্গিক খরচ জোগাতে না পারায় হতদরিদ্র গৃহবধূ হাওয়ানূর বেগম (২৮) এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। মৃত্যু তাকে হাতছানি দিলেও টাকার অভাবে দীর্ঘ ৫ মাসেও হাসপাতালে যেতে পারেনি অসুস্থ ঐ গৃহবধূ। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ মধুপুর গ্রামে। ভ্যানচালক মমিনুল ইসলামের স্ত্রী ২ সন্তানের জননী হাওয়ানূর বেগম অসুস্থ হলে তার স্বামী রংপুর ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার একপর্যায়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ গৃহবধূটির হৃদযন্ত্রের ভাল্ভ নষ্ট তা প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু এ ব্যয়বহুল চিকিৎসা কিভাবে করবে এ চিন্তায় দিশেহারা হয়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন করে ভ্যানচালক মমিনুল। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে এলে তিনি তার কোটা থেকে গৃহবধূটির বিনামূল্যে ভাল্ভ/ অক্সিজেনেটর প্রতিস্থাপনের জন্য গত ২৭ আগস্ট/১৫ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এর পরিচালককে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসাইনমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ শামীম মুসফিক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পত্র হাওয়ানূর বেগমের কাছে পৌঁছে। পত্রে ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যোগাযোগ করে চিকিৎসা নেয়ার জন্য বলা হয়। এ পত্র পাওয়ার পর হাওয়ানূরের স্বজনরা হৃদরোগ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বিনা পয়সায় ভাল্ভ বরাদ্দ হলেও এটি প্রতিস্থাপনে ওষুধসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে আরও প্রায় ১ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। এ টাকা সংগ্রহ করে তাদের রোগীসহ হাসপাতালে আসার পরমর্শ দেন। এদিকে ভাল্ভ বরাদ্দের ৫ মাস ১১ দিন অতিবাহিত হলেও হতদরিদ্র গৃহবধূটি টাকার অভাবে এখন পর্যন্ত ঢাকার ঐ হাসপাতালে পৌঁছিতে পারেনি। মমিনুল জানান, ঐ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহজাহান আলীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেরিত চিঠির কথা বলে সহযোগিতা চাইলে উল্টো ঐ চিঠির ব্যাপারে ব্যঙ্গ করে, এ চিঠি দিয়ে কিছুই হবে না বলে ফিরিয়ে দেন। এদিকে দিন যতই যাচ্ছে হাওয়ানূরের বাঁচার স্বপ্ন ততই ক্ষীণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় মমিনুল তার স্ত্রীকে বাঁচাতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান। দরিদ্র ভ্যানচালক মমিনুল ৯ বছর আগে ঐ গ্রামের নজির হোসেনের মেয়ে হাওয়ানূর বেগমকে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস শুরু করে। এরই মধ্যে তাদের ঘরে মুক্তা (৮) ও নবীন (৪) নামের ২টি সন্তান জন্ম নেয়। দিনভর ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হতো তাই দিয়ে ৪ সদস্যের সংসার ভালই চলছিল। হাওয়ানূরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, স্বামী ও বাবার চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য নেই। মনে মনে বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। কিন্তু সন্তান দু’টির জন্য কষ্ট হচ্ছিল। একা একা অনেক কেঁদেছি। যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পত্র হাতে পাই, তখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। ৬ মাস ধরে এই বাঁচার স্বপ্ন আজ শেষ হতে চলছে। হাসপাতালে পৌঁছার মতো টাকাও যোগার করতে না পেরে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছি। সুন্দর এ পৃথিবীতে আর বেঁচে থাকার আশাটুকুও আজ শেষ হতে চলছে। কষ্ট শুধু একটাই আমার সন্তান দু’টি কী লেখাপড়া করে মানুষ হতে পারবে?
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন