শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খেলাধুলা

আরেকটি হারের লজ্জা

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, দ্বিতীয় টেস্ট

ইমরান মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০২১, ১২:০২ পিএম | আপডেট : ১:৫৩ পিএম, ৩ মে, ২০২১

দিনের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশ খায় ধাক্কা। বাঁহাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমার বলে প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও কাবু লিটন। এবার তার সোজা পা সামনে নিয়ে ডিফেন্স করতে গিয়েছিলেন। লাইন মিস করে বল লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে আউট হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি। কিপার-ব্যাটসম্যান ফেরেন ৪৬ বলে ১৭ রান করে।

তাইজুল টুকটাক ব্যাটিং জানেন। তিনি টিকলেন ৩০ বল। কিছুটা সময় দৃঢ়তা দেখানোর পর ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অনেক বাইরের বল তাড়া করে ২ রান করা এই ‘নাইটওয়াচম্যান’ সাতসকালে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। আর ৩৩ বলে টিকে ৭ রান করা তাসকিনকে তুলে নেন রমেশ মেন্ডিস।

এদিন সকালে যা রান আসছিল সবই মিরাজের ব্যাট থেকে। সুইপ করে রান বের করছিলেন। সেই সুইপই কাল হয় তার। জয়াবিক্রমার বলে তাকে সুইপের চেষ্টায় দেখে দারুণ বুদ্ধিতে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ থেকে লেগ স্লিপের দিকে আগেভাগে ছুটে যান পাথুম নিশাকা। নেন দারুণ ক্যাচ। ৮৬ বল খেলে এই অলরাউন্ডারকে থামতে হয় ৩৯ রানে।

জয়াবিক্রমা আরও একটি জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন ৯৮ বছর আগের স্মৃতিতে। ১৯২৩ সালে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকে ১১২ রানে ১১ উইকেট নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক বাঁহাতি পেসার আলফ্রেড হল। তারপর এই ৯৮ বছরে বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে টেস্ট অভিষেকে জয়াবিক্রমাই সবচেয়ে কম রান দিয়ে ন্যূনতম ১০ উইকেট নিলেন। 

টেস্ট ক্রিকেটে ১৪৪ বছরের ইতিহাসে জয়াবিক্রমার এই বোলিং ফিগার শীর্ষ দশে থাকবেন। তালিকায় তিনি দশম। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ইনিংসেই ন্যূনতম ৫টি করে উইকেট নিয়েছেন জয়াবিক্রমা। টেস্ট অভিষেকে সর্বশেষ এমন নজির দেখা গেছে ১৯৮৮ সালে। ভারতের সাবেক স্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি চেন্নাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেকে সর্বশেষ দুই ইনিংসেই ন্যূনতম ৫টি করে উইকেট নিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও এখন জয়াবিক্রমার। আগের সেরা ছিল শ্রীলঙ্কারই আকিলা দনাঞ্জয়ার। ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন এই অফ স্পিনার।

কাইল মেয়ার্সকে বাংলাদেশের এত সহজেই ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এই তো গত ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রাম টেস্টে অভিষিক্ত হন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। সেই টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এশিয়ার মাটিতে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন মেয়ার্স—টেস্ট অভিষেকে চতুর্থ ইনিংসে ডাবল সেঞ্চুরি করে।

কিংবা ২০১৮ সালে ঢাকা টেস্টে স্পিন–সহায়ক উইকেটে ৪৪ রানে ৮ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার হয়ে টেস্ট অভিষেকে সেরা বোলিংয়ে রেকর্ড গড়েছিলেন আকিল দনঞ্জয়া। পরিসংখ্যান ঘাঁটলে প্রতিপক্ষ দলে এমন আরও ক্রিকেটার মিলবে, বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে যাঁরা জ্বলে উঠেছেন। মজা করে তাই বলতে পারেন, রেকর্ড-গড়া অভিষেক চাই? নামিয়ে দাও বাংলাদেশের বিপক্ষে!

আজ পুরোনো রেকর্ড ভেঙে জয়াবিক্রমাও যেমন গড়লেন নতুন রেকর্ড।

টেস্ট ইতিহাসেই এত রান তাড়া করে জয়ের কোনো নজির ছিলনা। বাংলাদেশ তো কখনও ২১৫ রানের বেশি তাড়া করেও জিততে পারেনি। দেশের বাইরে চতুর্থ ইনিংসে তাদের ২৮২ রানের বেশি নেই।

উইকেটে যেভাবে স্পিন ধরছিল, তাতে প্রকৃতিই কেবল উদ্ধার করতে পারতো বাংলাদেশকে। সেটি হয়নি। আর তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে টেস্ট সিরিজ এবং নিউজিল্যান্ডের কাছে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর এ নিয়ে টানা চতুর্থ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। সেই সাথে প্রতিপক্ষের মাঠে ৫০তম হারটিও এড়াতে পারলো না মুমিনুল হকের দল।

মুমিনুলের আত্মসমালোচনা

ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়কের মতে পাল্লেকেলে টেস্টের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে টসই। এটা জিততে না পারাই তাঁর ভাষায় ‘কাল’ বাংলাদেশ দলের, ‘আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটে টস হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এই টেস্টের প্রথম দুই দিন বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না। পঞ্চাশ শতাংশ টেস্ট ম্যাচেরই ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় টস।’

তবে মুমিনুলের কণ্ঠে কিছুটা আত্মসমালোচনাও ছিল, ‘শ্রীলঙ্কার কন্ডিশন বাংলাদেশের মতোই। তবে আর্দ্রতাটা একটু বেশি। এটাই আমাদের কিছুটা ভুগিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চাপ থাকবে, প্রতিকূলতা থাকবে, আপনাকে এটা মেনে নিয়েই পারফরম করতে হবে। আমরা প্রথম ইনিংসেই টেস্টটা হেরে গেছি। প্রথম ইনিংসে আমাদের আরও ভালো ব্যাটিং করা উচিত ছিল।’

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস : ৪৯৩/৭ (ইনিংস ঘোষণা)।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ২৫১ (অলআউট)।

শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস : ৪২.২ ওভারে ১৯৪/৯ (ইনিংস ঘোষণা)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ৭১ ওভারে ২২৭/১০ (লক্ষ্য ৪৩৭) (তামিম ২৪, সাইফ ৩৪, শান্ত ২৬, মুমিনুল ৩২, মুশফিক ৪০, লিটন ১৭, মিরাজ ৩৯, তাইজুল ২, তাসকিন ৭, শরিফুল ০, জায়েদ ০; লাকমাল ০/১৪, রমেশ ৪/১০৩, জয়াবিক্রমা ৫/৮৫, ধনঞ্জয়া ১/১৯)।

ফল : বাংলাদেশ ২০৯ রানে পরাজিত।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : প্রাভীন জয়াবিক্রমা।

সিরিজ : ২ ম্যাচে শ্রীলঙ্কা ১-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য সিরিজ : দিমুথ করুণারত্নে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন