পটুয়াখালীর পায়রা নদীর পানিতে গত এক বছরের ব্যবধানে পানির লবণাক্ততা ৭ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর পায়রা নদীর পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ ৬৯৬ মিলিগ্রাম/লিটার থাকলেও এবছর তা ৪২৩২ মিলিগ্রাম/লিটারে দাঁড়িয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র মতে, গত ১০ বছরের রেকর্ড ভেঙে পটুয়াখালী অঞ্চলের নদীতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্চ থেকে ধীরে ধীরে নদীর পানির লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পটুয়াখালী জেলার লোহালিয়া, মির্জাগঞ্জ ও গলাচিপা এলাকার নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করে লবণাক্তরা পরিমাণ নিরুপন করে থাকে পানিউন্নয়ন বোর্ড।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজিক্যাল দফতরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম জানান, সর্বশেষ ১২ এপ্রিল পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জের পায়রা নদীতে জোয়ারে সর্বোচ্চ লবণাক্ততা দাঁড়ায় ৪২৩২ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং ভাটায় ২৭৭৬ মিলিগ্রাম পারলিটার। ১ বছর আগে ২০২০ সালে এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ পানির লবণাক্ততা ছিল ২৩ এপ্রিল ৬৯৬ মিলিগ্রাম পারলিটার এবং সর্বনিম্ন ৬৬০ মিলিগ্রাম পারলিটার।
বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালী। বিশেষ করে জেলার কলাপাড়া, রাঙাবালী, গলাচিপাা অধিকাংশ এলাকাই একেবারে বঙ্গপোসাগরের নিকটবর্তী। এসব এলাকায় পানিতে স্বাভাবিকভাবে কিছুটা লবণের পরিমাণ বেশি থাকে। কিন্তু চলতি বছরে লবণের মাত্রা অত্যধিক পরিমাণ দাড়ানোর কারণে জনসাধারণ স্বাভাবিকভাবে নদী, খালের পানি ব্যবহার করতে পারছেন না। এমনকি পটুয়াখালী জেলা শহর সংলগ্ন লোহালিয়া, লাউকাঠী, পায়রা নদীর তীরবর্তী অধিকাংশ মানুষ রান্নার কাজে বরাবরই নদীর পানি ব্যবহার করে আসছে। বর্তমানে আর কেহ নদীর পানি ব্যবহার করতে পারছেন না, এমনকি গোসল করতে গেলেও মুখে নদীর পানিতে কুয়াকাটা সাগরের মত লবণের পানি মুখে লাগছে বলে জানিয়েছেন পায়রা নদীর পাড়ের বাসিন্দা নয়ন মিস্ত্রী।
এদিকে পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততার সাথে পাল্লা দিয়ে পটুয়াখালীতে ডায়রিয়া মহামারী আকারে ধারণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে পায়রা নদী বেষ্টিত মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। জেলায় ১ মাসে আক্রান্ত হন ৫২৬৩ জন, এর মধ্যে মির্জাগঞ্জে ৯৯০ জন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম শিপন জানান, ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে সরকারের আইইডিসিআর একটি প্রতিনিধিদল পটুয়াখালীর সবচেয়ে বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত মির্জাগঞ্জ উপজেলায় হাসপাতালে ভর্তি ৬ জন রুগীর মধ্যে ২ জনের মলে কলেরার জীবানুর সন্ধান পান। মানুষের ব্যবহার্য ৪টি স্পটের পানির নমুনা তারা সংগ্রহ করেছেন, পরীক্ষা শেষে জানা যাবে ব্যবহার্য পানির অবস্থা। পানিতে লবণাক্তার অতিমাত্রায় পানির বিশুদ্ধতা নষ্ঠ করে ফেলে, অনাবৃষ্টির কারণে লবণাক্ততা ও পানিতে জীবানু সংক্রমন ডায়রিয়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে সিভিল সার্জন মনে করেন।
কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এ কে এম মহিউদ্দিন জানান, নদীর পানিতে লবণ বৃদ্ধির কারণে মাটিতেও লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। নদীর লবণাক্ত পানি দিয়ে কৃষি জমিতে সেচ দেয়া অনেক স্থানে ফসলও নষ্ট হচ্ছে। এ বছর জেলার ৪৮ হাজার হেক্টর অর্থাৎ ২০ শতাংশ জমিতে অধিক মাত্রার আর ২৪ হাজার হেক্টর বা ১০ শতাংশ জমিতে অত্যাধিক লবণাক্ততা ধরা পড়েছে। মাটির এ লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ফসলের ফলন বিঘিœত হচ্ছে। এটা জনস্বাস্থের জন্য হুমকি স্বরূপ।
জেলা মৎসসম্পদ কর্মকর্তা জানান, যদি আগামী ১ মাসের মধ্যে বৃষ্টি না হয় তবে পানির এ লবণাক্ততা কমবে না। মৎস সম্পদের মধ্যে মিঠা পানির দেশিয় প্রজাতির মাছের পেটে ডিম রয়েছে। বৈশাখ মাস থেকে ৪ মাস পর্যন্ত ডিম ছাড়ে যদি এ লবণাক্ত পানিতে ডিম ছাড়লে মাছের বড় ধরনের ক্ষতি হবে।
পটুয়াখালী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফায়েজ আহম্মেদ জানান, অনাবৃষ্টির কারণে নদীর পানির উচ্চতা সাগরের পানির চেয়ে কমে যাওয়ায় পটুয়াখালীর নদ-নদী, খাল-পুকুর, জলাশয়ের পানিতে লবণাক্তর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন