মাগুরা জেলা সংবাদদাতা
মাগুরা জেলার মহম্মাদপুর উপজেলায় ৮ জন শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদোন্নতিতে দুর্নীতির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে এ তথ্য প্রকাশ হয়ে পড়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটি ১০ জনের পদোন্নতির সুপারিশ করে উচ্চ পর্যায়ে পাঠালেও ১০ জনের সাথে অতিরিক্ত আরো ৮ জনকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। কীভাবে এ সম্ভব তা কেউ বলতে পারছে না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মহম্মাদপুর উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা কতিপয় শিক্ষকের হাতে বন্দি হয়ে পড়ায় তারা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে। তাদের নানান কর্মকা-ে কোনো শিক্ষা কর্মকর্তা এখানে স্বভাবিক কাজ করতে পারছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব শিক্ষক বিদ্যালয়ে না গিয়ে উপজেলা হেডকোয়ার্টারে বসে নানান অপকর্ম করে যাচ্ছেন। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ১৩/০২/২০১১ তারিখে ৪১ নং স্মারকে ১৮ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির জন্য জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। ২৮/১২/২০১০ তারিখে অধিবেশন নং-০৯/১০ এ উপজেলা শিক্ষা কমিটিতে মোট ১৮ জন সহকারী শিক্ষকের মধ্যে ১০ জনকে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও কাগজপত্রের যথার্থতার নিরিখে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে ০৮/০৩/২০১১ তারিখে জেলা শিক্ষা অফিসারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা শিক্ষা অফিস মহম্মাদপুর ৮৪ নং স্মারকে উক্ত ১০ জন শিক্ষকের পদোন্নতিসহ বেতন স্কেল প্রদানের কাগজপত্র মহাপরিচালক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ইউনিট ঢাকা বরাবর পাঠানো হয়। যেখানে বাদ যাওয়া ৮ জনের কোনো নাম নেই। অথচ উক্ত ৮ জন শিক্ষককে পদোন্নতি দিয়ে সকল সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। তারা কীভাবে অনুমোদন পেল তা কেউ ভেবে পাচ্ছে না। তাছাড়া তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা অফিসার অনুমোদিত ১০ জনের পদোন্নতির জন্য ০৭/০৩/২০১১ তারিখে সিপিইতে পাঠান। এখানেও উক্ত ৮ জনের কোনো সুপারিশ নেই অথচ কীভাবে ওই ৮ জন পদোন্নতি পেয়ে চাকরি করছেন এবং বেতন ভাতা তুলে নিচ্ছেন তা কারো জানা নেই। তদন্তে অনুমিত হয়, উক্ত ৮ জন শিক্ষক উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং জেলা শিক্ষা অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে সিপিও হতে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির কাগজপত্র তৈরি করে এমপিওভুক্তি নিয়েছেন। এ ব্যাপারে তাদেরকে কাগজপত্র দেখাতে বললে তারা নানান টালবাহানা করে আজ পর্যন্ত তা দেখাতে পারেননি। মহম্মাদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসেও তাদের অনুকূলে কোনো কাগজপত্র নেই। এ ব্যাপারে অভিযোগ উঠলে জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে তাদের পদোন্নতি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে মর্মে প্রমাণিত হওয়ায় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উচ্চ পর্যায়ে পাঠান। কিন্তু এত বড় অপকর্মের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। এসব শিক্ষক কীভাবে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে এ প্রশ্ন এখন মহম্মাদপুরের সর্বত্র। এদিকে বৈধ বলে সুপারিশকৃত চর যশোমন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের এইচএসসি ও বিএ পাসের সনদ জাল বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার প্রতিবেদন দিয়েছেন। নাগরিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ জিল্লুর রহমানের পদোন্নতির স্বপক্ষে কোনো কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। শিক্ষা কমিটি ২৯/১২/২০১১ তারিখে সভার কার্যবিবরণীতে ফ্লুইড ব্যবহার করে তার নাম লেখা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন