শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

লোহাগড়ায় আবাদি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নড়াইল জেলা সংবাদদাতা

কৃষিপ্রধান নড়াইলের লোহাগড়ায় উপজেলায় কমতে শুরু করেছে আবাদি জমি। আবাদি জমির মধ্যে নির্মাণ করা হচ্ছে ইটভাটা, অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও নানা স্থাপনা। ফলে আবাদি জমির কৃষি পণ্য উৎপাদনে দেখা দিয়েছে বিপর্যয়। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে এ অঞ্চলে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ১শ ৩৪ হেক্টর, যা ৫ বছরের ব্যবধানে কমে দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ২শ ১ হেক্টর। অন্যদিকে পাঁচ বছর আগে একফসলি জমির পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৯৪৩ হেক্টর, যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৬৫ হেক্টর। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন, বসতি ও কল-কারখানা, ইটভাটা তৈরি এবং কৃষি জমি সুরক্ষা আইন না থাকায় কৃষি জমি ভরাট হচ্ছে। সে সঙ্গে বাড়ছে ইচ্ছামত জমির ব্যবহারও। ফলে পাঁচ বছর আগে ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৩৮ হেক্টর, যা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৯৬০ হেক্টর। উপজেলার তিন-চতুর্থাংশ মানুষ সরাসরি কৃষি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। এ তিন-চতুর্থাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা চলে কৃষি উৎপাদন ও কৃষিবিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে। নড়াইলের লোহাগড়ায় বর্তমানে অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প, শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে ক্রমশ কমছে কৃষি জমির পরিমাণ। সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে কৃষি জমিতে আবাসন, শিল্পকারখানা, ইটভাটা, বা অন্য কোন রকম অকৃষিস্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। জমি যে ধরনেরই হোক না কেন, তা কৃষি জমি হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে। দেশের যে কোন স্থানের কৃষি জমি এ আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত হবে এবং কোন ভাবেই তা ব্যবহারে পরিবর্তন আনা যাবে না। আইনে বিচার ও দ- হিসেবে বলা হয়েছে, আইন লঙ্ঘনকারী বা সহায়তাকারীর অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা কিংবা উভয় দ-ে দ-িত হবে। এ আইনের অধীনে অপরাধ আমলযোগ্য, জামিনযোগ্য ও আপসযোগ্য হবে এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা সংশ্লিষ্ট রাজস্ব কর্মকর্তা কিংবা বন ও মৎস্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মামলা করতে পারেন। অবসরপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা কাজী সামছুর রহমান বলেন, ভূমি রক্ষায় রাষ্ট্রের সমন্বিত কোন পরিকল্পনা না থাকায় অপরিকল্পিতভাবে চলছে জমির ব্যবহার। যেখানে সেখানে হচ্ছে বাড়ি। নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প-প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার দোকানসহ বিভিন্ন রকমের স্থাপনা। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন জমি কমার মূল কারণ। দ্রুত কৃষি জমি রক্ষায় সমন্বিত নীতিমালা গ্রহণ না করলে সামনে ভয়াবহ বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে প্রতিনিয়ত অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমিতে বাড়িঘর নির্মাণ হচ্ছে। এ ছাড়া নদী ভাঙন, কৃষি জমিতে ইটভাটা তৈরিসহ বিভিন্ন অকৃষিস্থাপনার ফলে প্রতিবছর এক শতাংশ করে কৃষি জমি কমছে। তিনি আরও বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে বাড়ি নির্মাণ না করে গ্রামগুলোকে ছোট ছোট শহরে পরিণত করতে হবে। বহুতল ভবনে একাধিক পরিবারের আবাসন ব্যবস্থা করা জরুরি। তাহলে কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার প্রবণতা কিছুটা হলেও কমবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন