বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

পীরগঞ্জের করতোয়ার বালুচরে সবুজ বিপ্লব

প্রকাশের সময় : ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবুল খায়ের, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে

রংপুরের পীরগঞ্জে করতোয়া নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা ধূ-ধূ বালুচরে সবুজ ফসলে ভরে গেছে। ক’বছর আগেও যেখানে জায়গা-জমির একেবারেই কদর ছিল না। সর্বনাশা করতোয়ার করালগ্রাসে ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এই এলাকার অনেক পরিবার। করতোয়া নদীবেষ্টিত গ্রামের লোকজনদের অভাব- অনটনই ছিল নিত্যদিনের সাথী। ধূ-ধূ বালুচরে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় পলি মাটি জমায় হালে ওইসব চর উর্বর আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। জমিগুলোতে গম, ভুট্টা, গোল আলু, মিষ্টি আলু, মরিচ, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের রবি ফসলের চাষাবাদ করে অভাবকে জয় করেছে অনেকেই। বর্তমানে ওইসব জমির দামও বেশ বেড়েছে। গত মঙ্গলবার করতোয়া নদীবেষ্টিত গ্রাম উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নের পারবোয়ালমারী, বিছনা, মেরীপাড়া, টিওরমারী, জয়ন্তীপুর, তরফমৌজা, বড় আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুরিয়া, শিমুলবাড়ী, রামনাথপুর, আলমপুর উচাপাড়া, ছোট রসুলপুর এবং চতরা ইউনিয়নের কুয়াতপুর, হামিদপুর, মাটিয়ালপাড়া, চ-িদুয়ার, বড়-বদনাপাড়া, কুমারপুর, গিলাবাড়ী ও চকভেকা গ্রাম এলাকা সরেজমিনে ঘুরে এ অবস্থা দেখা গেছে। কুয়াতপুর গ্রামের (চর এলাকার বাসিন্দা) সেকেন্দার আলী, মমিনুর, হবিবর, গিলাবাড়ী গ্রামের জয়নাল আবেদীন, দেলওয়ার, খুশি মিয়া, মাটিয়ালপাড়ার সোলায়মান, মনসুর আলী, আব্বাছ আলী, কুমারপুর গ্রামের এরশাদ ও মোস্তাফিজার, বোয়ালমারীর রহিম, জয়ন্তিপুরের ফুল মিয়া, ছোট রসুলপুরের মিজানুর, শিমুলবাড়ি গ্রামের জওয়াহের আলী, বাঁশপুকুরিয়ার সহিদুল ইসলাম এবং কৃষক ওমর ফারুকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ক’বছর আগেও এলাকার মানুষের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই ছিল। বর্তমানে সেই অবস্থা আর নেই। তাদের বালুচরের জমিগুলোতে বন্যায় পলি জমায় সেগুলোও আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে। ফলে এলাকার অনেকেই ওইসব জমিতে রবি ফসল চাষাবাদ করে অল্পদিনেই সংসারের অভাব ঘুচিয়ে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে। ছেলেমেয়েদেরকেও লেখাপড়া শেখাচ্ছে। নদী ভাঙার দুঃখ-কষ্ট এখন আর তাদেরকে তেমন পীড়া দেয় না। ওই গ্রাম এলাকা সরেজমিন ঘুরে লক্ষ্য করা গেছে, এক সময়ের বিশাল ধূ-ধূ বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। কাঁচামরিচ, টমেটো, গম, ভুট্টা, গোল-আলু ও মিষ্টি আলুসহ নানা ধরনের রবি ফসলের চাষে ভরে গেছে। যেন দিগন্ত বিস্তৃত দৃষ্টি জুড়ানো সবুজ ফসলের ক্ষেত! চর এলাকার কৃষকদের কাছে ধান চাষ কোনো হিসাবের ফসল নয়। যে জমিতে একসময় কোনো ফসলই ফলতো না। সেই জমিতে একরের পর একর ভুট্টার চাষ হয়েছে। গত বছর ভুট্টার বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় উপজেলার চাষিরা এবার বেশি করে ভুট্টার আবাদ করেছে। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ভুট্টার গাছ ও মোচা ভালো হয়েছে। এদিকে গোল-আলু ও মিষ্টি আলু শত শত একর জমিতে আবাদ হয়েছে। চরে উৎপাদিত এই মিষ্টি আলু এ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। মিষ্টি আলুকে স্থানীয়ভাবে “ব্যাটারী” নামে অভিহিত। ভাতের পাশাপাশি মিষ্টি আলু খেয়েও অনেক পরিবার দিনাতিপাত করেন। প্রতি একর জমিতে মিষ্টি আলু ১৪০ থেকে ১৫০ মণ ফলন হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র ঘোষ বলেন, চলতি বছর উপজেলায় ৩ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৬শ’ হেক্টরে মরিচ ও ৪ হাজার ৪শ’ হেক্টর জমিতে গোল আলুুর চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি। ভুট্টা, মরিচ ও মিষ্টি আলুর চাষ করতোয়ার চর এলাকায় তুলনামূলক অনেক বেশি। আগামী বছরে চর এলাকায় অর্থকরী ফসল চিনা বাদাম ও মসুরের ডাল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে বাস্তবধর্মী নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হবে। উপজেলার কুয়াতপুর-হামিদপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বিশিষ্ট কৃষক সেকেন্দার আলী ম-ল জানান, করতোয়ার পাড়ে আমার প্রায় সাড়ে ৪ একর জমিতে আগে কোনো আবাদ হতো না। পরিত্যক্ত বালুচর ছিল। এখন সেগুলোতে পুরোদমে রবিশস্য ও ভুট্টা, গোল আলু, মিষ্টি আলু চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে প্রায় ১শ’ ২০ মণ ভুট্টা, ১২০ থেকে ১৩০ মণ গোল আলু, প্রায় ১৩০ মণ পর্যন্ত টমেটোর ফলন পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরো জানান, গোল আলুর জমিতে সাথী ফসল হিসেবে ভুট্টা চাষ করে আমার মতো অনেকেই লাভবান হয়েছেন। চর এলাকার কৃষকরা স্ব-প্রণোদিত হয়েই নিজেদের প্রয়োজনে এসব ফসল ফলাচ্ছে আর ভাগ্য গড়ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন