দুই-তিন দিন পরই ঈদুল ফেতর। ঈদে চাই নতুন জামা জুতা। তাই সবাই ছুটছে মার্কেটে-মার্কেটে। এদিকে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সচেতনতা ও সতর্কতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে বিধি নিষেধ জারি করছে সরকার। এসব বিধি নিষেধ রংপুর ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের ক্রেতারা আমলে নিচ্ছে না। মানাছে না স্বাস্থ্য বিধি। এ সব বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনÑ
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটায় জমজমাট হয়ে ওঠছে রংপুরের সব মার্কেট। কোনরকম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মার্কেটগুলোতে চলছে কেনা কাটা। করোনাভীতি উপেক্ষা করেই মানুষ দেদারছে ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছে। ক্রেতা-বিক্রেতা কারোর মাঝে নেই সামাজিক দুরুত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির কোন নমুনা। করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে গেছে রংপুরে। বিশেষ করে ভারতীয় সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় এমনিতেই মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলো। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঈদ মার্কেটে মানুষের অবাধ-বিচরণ ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গতকাল সরেজমিনে নগরীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি মার্কেটেই ক্রেতাদের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে কাপড়, কসমেটিক্স এবং জুতার মার্কেটগুলোতে উপচেপড়া ভীড় দেখা গেছে। করোনাভাইরাস রোধে সরকারের পক্ষ থেকে নানা শর্ত দেয়া হলেও ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না সেগুলো। প্রশাসনের নজরদারী তেমনটা না থাকায় কোন প্রকার স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই এমনকি মাস্ক ছাড়াই অবাধে কেনাকাটা করছেন ক্রেতারা। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় স্বাস্থ্যবিধির কথা যেন ভুলেই গেছেন সবাই।
গতকাল রংপুরের জাহাজ কোম্পানি শপিং কমপ্লেক্স, সালেক মার্কেট, হাড়িপট্টি রোড, সুপার মার্কেট, জেলা পরিষদ কমিউনিটি মার্কেট, নবাবাগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কমবেশি সব দোকানেই ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গা নেই কোথাও। ক্রেতাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি।
বেশ কয়েকজন নারী ক্রেতা করোনা ঝুঁকির প্রসঙ্গে জানান, ঝুঁকি আছে, ভীতিও আছে, কিন্তু কিছুই করার নেই। গত বছর ঈদে কিছু কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার না করলেই নয়। রিস্ক নিয়ে এসেছি এবং যতটুকু সম্ভব সাবধানেই আছি। বাকিটা আল্লাহর ওপর।
সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে নজির হোসেন নজু জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরে বৈশ্বিক প্রাণঘাতী মহামারি করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সচেতনতা ও সতর্কতাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে মানুষের মাঝে ততই বাড়ছে উদাসীনতা। ফলে আগের মত নেই করোনা ভীতি, নেই স্বাস্থ্য সচেতনতা। করোনার সংক্রমণ ঝুঁকি রোধে সরকার কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করলেও তা কেবল কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। গতকাল সৈয়দপুরের বিভিন্ন মার্কেট, শপিং মল ও ফুটপাতের দোকানপাট ঘুরে দেখা গেছে, বিধি-নিষেধের কোন তোয়াক্কা না করে সব কিছুই চলছে স্বাভাবিকভাবে।
স্বাস্থ্যবিধি পালনে প্রশাসনসহ আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিয়মিত বাজার মনিটরিং ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। প্রশাসনের লোকজন যতক্ষণ থাকছে, ততক্ষণ মুখে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
এরই মধ্যে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে গাদাগাদি করে বেচাকেনা চলছে। নিউ ক্লথ মার্কেটে কথা হয় নতুন বাবুপাড়ার তসলিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনার ভয় তো আছেই, সে জন্য মাস্ক মুখে দিয়েই বাজারে এসেছি। প্রত্যেক দোকানেই ওপচে পড়া ভীড়। মুখে মাস্ক নেই কেন, জানতে চাইলে গোলাহাট থেকে অত্যাধুনিক শপিং মল চৌধুরী টাওয়ারে কেনাকাটা করতে আসা জাবেদ আলম বলেন, অটোবাইকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে মার্কেটে এসেছি ঈদের কেনাকাটা করতে। বাজেট কম, কয়েকটা দোকান দেখে কাপড় কিনে বাড়ি ফিরবো। মাস্ক সঙ্গেই আছে, কিন্তু প্রচণ্ড গরমের কারণে মুখে দিতে পারিনি।
একই অবস্থা অন্যান্য মার্কেটগুলোর। বেচা-বিক্রি সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দপুর প্লাজার বুলবুল ফ্যাশনের মালিক নজরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ঈদ উপলক্ষে বেচাবিক্রি ভালোই। তবে অতিরিক্ত ভিড় ক্রেতাদের কারণে অনেক সময় পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছেনা।
সৈয়দপুর কাপড় ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে দোকানপাট খোলেছি। অনেক ব্যবসায়ী নিজ উদ্যোগে হাতধোয়া ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রেখেছেন। শতভাগ স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনেই বেচা-বিক্রি হচ্ছে।
বদরগঞ্জ (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রংপুরের বদরগঞ্জে ঈদ বাজার জমে উঠলেও ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করা তো পরের কথা কারো মুখে মাস্ক পর্যন্ত নেই। এতে করে করোনা মহামারির ঝুঁকি বাড়বে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। গতকাল সোমবার সকালে পৌরশহরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এমন দৃশ্যই চোখে পড়ে।
কথা হয় কাপড় ব্যবসায়ি শহিদুল ইসলাম বাবুর সাথে। তিনি জানান গত বছরের তুলনায় এবার ঈদ বাজার অনেক বেশি জমে উঠেছে। ক্রেতা সমাগমও অনেক বেশি।
বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরশাদ হোসেন স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে এই প্রতিবেদককে জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলা মানে করোনা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া। ঈদে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন