নুরুল আবছার চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে
দেশের অন্যতম বৃহত্তম খাদ্যশস্য ভা-ার তথা গুমাই বিলের দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমি চলতি আমন মৌসুমে অনাবাদির কবলে পড়েছে। বিগত বছর বন্যায় গুমাই বিলের সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর রোপা আমন ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ার কারণে কৃষকরা পুরোদমে ক্ষতির শিকার হয়। যার প্রেক্ষিতে সরকারের প্রণোদনামূলক প্রকল্প গ্রহণ না করায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকদের মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার অভাবও প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখছে প্রান্তিক কৃষকরা। সারাদেশে কৃষকদের সরকারের পক্ষে আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়ার সংবাদ থাকলেও কিন্তু রাঙ্গুনিয়ার প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকরা সে রকম সুযোগ না পাওয়ার প্রধান অন্তরায়। মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বৃহৎ অংশ প্রান্তিক কৃষকদের বাদ দিয়ে হাতেগোনা গুটি কয়েক কৃষক সংগঠিত করে সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে উপজেলা কৃষি অফিস বিষয়টি অস্বীকার করেছে। বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে অভিযোগে জানা যায়, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসে একই ব্যক্তি বিগত কয়েক বছর ধরে বার বার সুযোগ পাচ্ছেন। অপরদিকে, প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সেসব তালিকায় কোন সময় নাম উঠেছে এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। প্রদর্শনী, সার, বীজ, এমনকি সবজি চাষাবাদে খুঁজে পাবেন বার বার একই ব্যক্তিদের। একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সরকার কৃষকদের মাঝে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের প্রণোদনা প্রকল্প, সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনা, কৃষকদের চাষাবাদে আধুনিকায়নের উপর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প তথা প্রশিক্ষণের জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হলেও যা মাঠপর্যায়ের প্রকৃত কৃষকদের কোনো উপকারে আসছে না বলে জানা গেছে। অপরদিকে, কৃষক পর্যায়ে বীজ উৎপাদনের প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখতে পায় না। কৃষকদের অভিমত কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত বীজ সরকারের তরফ থেকে সংগ্রহীত করা হলে কৃষকরা লাভজনক হতো। বর্তমানে বাজার দরের সাথে কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্যশস্য সঙ্গতি না থাকায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বছরের পর বছর। তাছাড়া সরকারের গুদাম পর্যায়ে ২৩ টাকা দরে ধান ক্রয়ের বিষয়টি প্রকৃত চাষিদের উপকারে আসে না। গত চলতি বছর কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র ১০০ মেট্রিক টন অনেক চড়াই-উরাই পেরিয়ে ধান সংগ্রহ করলেও কৃষকদের হয়রানির শিকার হতে হয় ব্যাপকহারে। পরে মিল মালিক ও রাজনৈতিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি সংগ্রহ টার্গেট ১০ শতাংশও পূরণ করতে পারেনি। এসব বিবেচনায় কৃষকরা চাষাবাদে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। এদিকে বন্যায় ক্ষতি অপরদিকে, কামলা মজুরিসহ আনুষঙ্গিক উৎপাদনের খরচ বৃদ্ধির কারণে কৃষকদের উৎপাদিত খাদ্যশস্য বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য না থাকায় প্রতি একরে কৃষকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৫-৬ হাজার টাকা। এসব কারণে চাষাবাদে অনীহার প্রধানতম সমস্যা বলে কৃষকদের সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশের অন্যতম খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী চট্টগ্রামের খাদ্যশস্য ভা-ার তথা গুমাই বিলে চলতি আমন চাষাবাদে অনাবাদি রয়েছে সেসব বিলের মধ্যে গুমাই মৌজার লালতা বিল, নাইস্যা বিল, ব্রাহ্মণ বিল, লালতা আইল, চোচির দীঘি, মুন্সিবিল, বিচারঢেবা, নাতিন্যা বিল, ব্রহ্মোত্তর, স্লুইচ গেইট বিল, নিশ্চিন্তাপুর বিল, কাটাখালী বিল, মরিয়মনগর বিল, কুলকুরমাই বিল, পদ্মা বিল, লক্ষ¥ীর খীল, গুমাই মর্দন, কাজির দীঘি, হ্রদের বিল, মুরাদনগর বিল ও ইছামতি বিলসহ প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। এসব জমি খালি থাকার বিষয়ে শত শত কৃষক জানান, প্রতিএকর জমির টেক্টর চাষ বাবদ ৫-৬ হাজার টাকা, কামলা খরচ বাবদ প্রতি একরে (১৫ জন) ৮-১০ হাজার টাকা ও অন্যান্য খরচসহ আগাছা বাছাই, পরিচর্যা, সার, কীটনাশকসহ আরো খরচ গুনতে হচ্ছে ৮-১০ হাজার টাকা। এছাড়াও ধান কাটাসহ প্রতি একরে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচের সাথে বাজারমূল্যে বিরাট ফারাক থাকায় লোকসান গুনতে হয় বড় মাপের। গত অর্থবছরে ভয়াবহ একাধিক বন্যায় ফসল নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষকরা লোকসানের কারণে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন