ঈদুল ফিতর উপলক্ষে তিন দিনের ছুটি কাটিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে যোগ দিয়েছেন। প্রথম কার্যদিবসে সেই কর্মচাঞ্চল্য ফেরেনি প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে। তবে বিভিন্ন দফতরে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল কম। সবার মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করায় কাজ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। প্রতিবছর মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী- এবং সচিবরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতো। করতো কোলাকুলি। এবার তা হয়নি। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে গল্প-আড্ডাতে অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন তারা। অনেক মন্ত্রণালয় খোলা হয়নি। সে গুলো হচ্ছে, সড়ক পরিবহন, ভূমি, আইন, মৎস, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়, খাদ্য, ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বাণিজ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়গুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। নেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আনাগোনা। আবার কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের করিডোর গুলো খোলা হয়নি। অন্ধকারে ডুবে রয়েছে।
এদিকে প্রতিবছরের মতো খোলা ছিল, তথ্য অধিদফতরের নিউজ রুম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা কেন্দ্র, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি শাখা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু অংশ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি অংশ।
তবে ঈদের ছুটি শেষে সচিবালয়ে অফিস করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অফিস করেছেন। আবার অনেক মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও সচিবদের অফিস করতে দেখা যায়নি। আবার অনেকেই অফিসে আসেনি।
গতকাল রোববার সকালে মন্ত্রণালয়গুলোর জরুরি সেবা সংশ্লিষ্ট শাখা ছাড়া সচিবালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবারের ঈদের ছুটি শেষে অফিসপাড়ায় চিরচেনা কোলাকুলির দৃশ্যও অনুপস্থিত। ঈদের ছুটির পর প্রথম কার্যদিবসে নিস্প্রাণ সচিবালয়।এবার ঈদের ছুটি ছিল ১৩ থেকে ১৫ মে। এর মধ্যে দুই দিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় এবারের ঈদের ছুটি দীর্ঘ হয়নি। মহামরীর মধ্যে এবারের ঈদে সবাইকে যার যার কর্মস্থলের এলাকায় থাকতে বলেছিল সরকার। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আপাতত সচিবালয়ে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে অফিসের কাজ চলবে। একইসময় আরও ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী অনলাইনে কাজে যুক্ত থাকবেন। এভাবে পালাক্রমে অফিসের কাজ চলবে। আর দেশের অন্যান্য অফিসগুলোতে প্রয়োজন অনুযায়ী কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আগেই বলেছি মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত আকারে অফিস চালাবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, ছুটি শেষ হলেও অনেকে অফিসে একটু দেরি করে আসেন বা দুপুরের দিকে আসেন, তাই এখন উপস্থিতি কিছুটা কম। ঈদে অতিরিক্ত ছুটি না পাওয়ায় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলের এলাকাতেই আছেন। আজ সোমবার থেকে উপস্থিতি আগের মত হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
করোনা (কোভিড-১৯)এর বিস্তার রোধে কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় ধাপে ১৪ এপ্রিল থেকে দেশে জরুরি কাজ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। যা সর্বাত্মক লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পায়। এর আগের ঘোষণায় রোববার পর্যন্ত বিধিনিষেধ কার্যকর করার কথা বলা হলেও ইতোমধ্যে সরকার আরও এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়িয়েছে। সর্বাত্মক লকডাউনের মেয়াদ আগামী ২৩ মে পর্যন্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গতকাল সচিবালয় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সবগুলো দফতরেই শুণ্যতা বিরাজ করছে। জরুরি সেবা দেওয়া যে কয়েকটি মন্ত্রণালয়, দফতর খোলা রয়েছে সেখানেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি একেবারেই কম। যারা অফিস করেছেন তারা কোলাকুলি ছাড়া ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় আর দূরত্ব বজায় রেখে গল্প আড্ডাতে বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এবার ওই অর্থে ঈদের ছুটি তাদের ছিল না। মূলত একদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবারই ছুটি ছিল বলা যায়। নির্দেশনা অনুযায়ী যতটুকু জনবল দরকার কেবল ততটুকু নিয়েই কাজ চলছে। এবার ঈদের ছুটিতে সকলকে কর্মস্থলে থাকতে হওয়ায় ছুটির আমেজ নেই সচিবালয়ের দফতরগুলোতে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে তা শিথিল করা হলেও গত ১৭ মে থেকে এই নির্দেশনা আরও এক সপ্তাহ অর্থাৎ ২৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
সচিবালয়ে অফিস করেছেন কৃষিমন্ত্রী
ঈদের ছুটি শেষে গতকাল সচিবালয়ে অফিস করেছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। অফিসে নিয়মিত কাজ সম্পাদনের পাশাপাশি তিনি সারা দেশের বোরো ধানসহ অন্যান্য ফসলের পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি সংস্থা প্রধান ও মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তাদের সাথে ফোনে কথা বলেছেন। মন্ত্রী বলেন, খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও তা আরও বৃদ্ধি করতে আমাদের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মীরা করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও সম্মুখ সারির যোদ্ধাদের মতো কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তিনি এসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ ধারা অব্যাহত রাখা ও আরও গতিশীল করার জন্য সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারিদেরকে আহবান জানান। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও অফিস করেছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন