পঞ্চগড়ে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত তালমা রাবার ড্যামটির সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছেন না সুবিধাভোগিরা। বারবার ত্রুটি দেখা দেয়ার পরও সংস্কারে অবহেলা প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। অযত্ন আর অবহেলার কারণে সংস্কারে লেগে যায় দীর্ঘ সময়। ঘনঘন ত্রুটি দেখা দেয়ায় সেচ সুবিধা নিতে অনাগ্রহ হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ গ্রাহক।
জানা যায়, ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে মাঝারি নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের অধীনে পঞ্চগড় সদর উপজেলার তালমা নদীতে সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে রাবার ড্যাম নির্মাণ করে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি)। একই অর্থ বছরে নদী সংলগ্ন এলাকায় সেচ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে পানি প্রবাহের নালা নির্মাণ করা হয়েছে। পরের বছর থেকে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পেতে শুরু করে স্থানীয় কৃষকরা। শুরুতে তালমা রাবার ড্যাম থেকে মামা ভাগিনা ব্রিজ হয়ে উত্তরে বিশ মনি পর্যন্ত এবং দক্ষিণে কুচিয়া মোড় পর্যন্ত কৃষকরা এই সেচ সুবিধা পেতেন। তখন কয়েক হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আনা হলেও বর্তমানে ১০ হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় রয়েছে। ড্যামটি বারবার কারিগরি সমস্যা এবং সমিতির নেতাদের সংস্কারে অবহেলার কারণে গ্রাহকরা সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকরা ফসল উৎপাদনে যখন ঝুঁকে পড়েছেন ঠিক তখনই দেখা দেয় ড্যামটির কারিগরি ত্রুটি। ২০০৭ সালে চালু হওয়া ড্যামটি সাত বছরের মাথায় ২০১৪ সালে অকেজো হয়ে যায়। পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি মেরামত করা হয় আরো দুই বছর পর। মেরামতের পর ২০১৭ সাল সেচ সুবিধা পেলেও মাত্র এক বছরের মাথায় ২০১৮ সালে আবার ত্রুটি দেখা দেয়। এভাবেই অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে ছিল তিন বছর। বর্ষায় ড্যামের ছিদ্র দিয়ে পানি ঢুকে ফুলে উঠতো। এতে স্রোতের বিপরীত এলাকায় নদী সংলগ্ন আবাদি জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটে। আশপাশের বাড়িগুলোতে পানি উঠায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে।
এদিকে, দীর্ঘ তিন বছরের মাথায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে ড্যামটি আবারো সংস্কার করা হলেও শঙ্কিত কৃষকরা। তারা বলছেন, প্রকল্পটি ঠিকমতো দেখভালের কেউ না থাকায় ঢিমেতালে চলছে ড্যামটি। আবারো ত্রুটি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে মেরামতের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা। প্রকল্প এলাকার কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, রাবার ড্যাম হওয়ার পর বোরো মৌসুমে কয়েক বছর নদী থেকে পানি দিতে ভালোই সুবিধা ছিল। এই পানি দিয়েই আমরা বোরো আবাদ করতাম। কিন্তু ২০১৪ সালের পর বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ব্যাগটি একবার ক্ষতি হলে মেরামত করতে সময় লাগে ২-৩ বছর। এজন্য রাবার ড্যাম আমাদের কোনো কাজে আসছে না। একই কথা বলেন, কৃষক আকাশ আলী।
তালমা রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির আহ্বায়ক করিমুল ইসলাম বলেন, অনেক আগে রাবার ড্যামের ব্যাগটি ফুটো হয়ে গেছে। আমরা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কতৃপক্ষের সহযোগিতায় কিছু এলাকায় সেচ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আতাউর রহমান জানান, রাবার ড্যামটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি সমিতি আছে। রাবার ড্যামের ছোট ছোট ক্ষতি তাদের সমিতির তহবিল থেকে সমাধান করবেন। ড্যামের বড় কোনো সমস্যা হলে টেন্ডারের মাধ্যমে এলজিইডি মেরামত করবেন। এ মৌসুমে মেরামত করা হয়েছে। আশা করছি সামনের বছরে কৃষকরা ড্যাম থেকে প্রচুর সুবিধা পাবেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন