বঙ্গোপসাগর ও এর সংলগ্ন আন্দামান সাগরে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। পরবর্তী সময়ে এটি নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তখন এ ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হবে ‘যশ’। এটি ভারতের উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপক‚লে আঘাত হানতে পারে। ‘যশ’র গতিমুখ যদি বাংলাদেশের দিকে মোড় নেয় তাহলে সম্ভাব্য এ ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবন-খুলনা-বরিশাল এমনকি চট্টগ্রামের উপক‚লের দিকেও আছড়ে পড়তে পারে।
‘যশ’ আসছে সপ্তাহের মাঝামাঝি কিংবা শেষ দিকে আঘাত হানার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ‘আসন্ন’ ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’ মোকাবিলায় আগাম সবরকম প্রস্তুতির গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, পরিসেবা সংস্থা ও জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দিয়েছেন। আবহাওয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট সংস্থা এবং ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে উপরোক্ত পূর্বাভাস মিলেছে।
এদিকে দেশের সমুদ্র উপক‚লীয় জেলাসমূহে অস্বাভাবিক ও অসহনীয় ভ্যাপসা গরম পড়ছে। যা নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়ের পূর্ববর্তী আলামত বহন করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, নোয়াখালী, চাঁদপুর উপক‚লে দিনের তাপমাত্রার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে রাতের সর্বনিম্ন পারদ ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে গেছে।
খুলনায় রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৫ ডিগ্রি সে.। আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে চলতি মে মাসের শেষের দিকে বঙ্গোপসাগরে এক বা দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি এবং এরমধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান উষ্ণ আবহাওয়াগত অবস্থায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। অবশ্য গতকাল পর্যন্ত সমুদ্রে কোন লঘুচাপ-নিম্নচাপ না থাকায় আপাতত কোন সতর্ক সঙ্কেত নেই।
এদিকে জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড গরমে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সে.। ঢাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৫.৯ এবং সর্বনিম্ন ২৮.২, চট্টগ্রামে যথাক্রমে ৩৪.৭ এবং ২৮.৫ ডিগ্রি সে.।
গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কয়েক জায়গায় সাময়িক বৃষ্টি হয়েছে, তবে তা সামান্য। এরমধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় বদলগাছীতে ২৩ মিলিমিটার।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং কুমিল্লা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলসহ ঢাকা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
চলমান তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি এবং এ সম্পর্কিত পূর্বাভাসে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, সীতাকুন্ড, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকায় দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। যা অস্থায়ীভাবে দমকায় ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটারে উন্নীত হতে পারে।
সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরপরের ৫ দিনে বৃষ্টি-বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত আছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন