কক্সবাজারে দিন দিন বেড়ে চলছে ফসলি জমিতে বিষবৃক্ষ তামাকের আগ্রাসন। তামাক চাষের বদলে ভুট্টা ও ধান চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা দেয়ার পরও থামানো যাচ্ছেনা তামাক চাষ। তামাক কোম্পানির উদ্বুদ্ধকরণ আর কৃষি বিভাগের নিরুৎসাহিতকরণের কারণে তামাক কোম্পানির বিভিন্ন ক‚টকৌশলের কাছে কৃষি বিভাগ ধরাশায়ী।
কক্সবাজার জেলা কৃষি অধিদফতরের তথ্য মতে, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও রামু উপজেলার তামাকের চাষ অব্যাহত আছে। এছাড়া বান্দারবান জেলার ৩টি উপজেলাতে ব্যাপক হারে চলছে তামাক চাষ। এসব অঞ্চলে বোরো মৌসুমের সবুজের ধানক্ষেত উচ্চ ফলনশীল তামাকের দখলে। কৃষি, সংরক্ষিত বনভ‚মি, খাসজমিতে চলছে উচ্চ ফলনশীল বিষবৃক্ষ তামাক চাষ। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক সরকারি খাসজমি, সংরক্ষিত বনভ‚মি ও নদীর তীরে তামাক চাষ নিষিদ্ধ থাকলেও কাগজে কলমে তা সীমাবদ্ধ। উৎপাদিত তামাক শোধন (প্রক্রিয়াজাত) করতে বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে শত শত তান্দুর (চুল্লি), এইসব তান্দুরে জ্বালানি সরবরাহে নির্বিচারে কাঁটা হচ্ছে সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বন বিভাগের গাছ, এতে প্রতিনিয়তই বিপর্যয় হচ্ছে পরিবেশ। তামাক চাষে নারী ও শিশুদেরকেও খাটানো হচ্ছে, এতে করে বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
সূত্রে জানা যায়, রামু চাকমারকুল এলাকার নদী তীরবর্তী এলাকার তামাক চাষি আলিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে নদীর পাশে তামাকের ফলন বেশ ভাল হয়। আর ধান চাষে ঝামেলা এবং খরচ বেশি অন্যদিকে তামাক চাষে লাভবান হওয়ার গ্যারান্টি আছে। কারণ তামাক মাঠ থেকেই নিয়ে যায় কোম্পানিগুলো। এছাড়া তারা আগে টাকা দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে সে জন্য তামাক চাষ করি। এছাড়া প্রতি কানি জমি ধান চাষের জন্য বর্গা দিলে মিলে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। আর তামাক চাষের জন্য বর্গা দিলে পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বমুবিল ছড়ি, সুরাজপুর মানিকপুর, কাকারা, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী, বরইতলী ইউনিয়নের বিভিন্ন অংশে তামাক চাষ হয়। বমুবিল ছড়ির তামাক চাষি নরুল আমিন জানান, আমি এবার ১ কানি জমিতে তামাক চাষ করেছি, চাষে একটি কোম্পানি অগ্রিম টাকা দিয়েছে, ঘরের জন্য সোলার বিদ্যুৎ দিয়েছে। তামাক শুকিয়ে রেডি করে রেখেছি ৬শ’ কেজি হয়েছে, প্রতিকেজি ১৭০টাকা করে কোম্পানি কিনে নেবে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়ে নায্যদাম পাই বলে এ নিয়ে কোন চিন্তা নেই। লোকসানেরও সম্ভাবনা নেই। অন্যদিকে সবজি চাষ করলে লোকসান গুনতে হত।
চকরিয়ার তামাক চাষি ও তামাকের পাইকারি ব্যবসায়ী মিনহাজ উদ্দিন জানান, চকরিয়ায় কোম্পানির রেজিস্টার্ডকৃত তামাক চাষি ৯শ’, এদের কাছ থেকে তামাক কোম্পানি সরাসরি তামাক ক্রয় করে। রেজিস্টারের বাইরে রয়েছে আরো তিনগুন চাষি তাদের কাজ থেকে প্রতিকেজি তামাক ১৬৮ টাকা দরে ক্রয় করে কোম্পানির কাছে কেজি প্রতি ২/৪ টাকা লাভে বিক্রি করি। সরকারি খাস জমিতে তামাক চাষ বন্ধে প্রশাসনের কোন প্রদক্ষেপ না থাকায় তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন চাষি।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক ড. মো. এখলাছ উদ্দিন জানান, আমার এলাকার চকরিয়াতে তামাক চাষ হচ্ছে, তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্ন প্রণোদনা ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজসহ নানা প্রনোদনা। আমরা সব সময় চায় তাকাম চাষের বদলে কৃষক উচ্চ ফলনশীল ধান, ভুট্টা, সবজি চাষ করুক। কিন্তু এটাও সত্যি এর পরও কিছু জায়গায় তামাক চাষ হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন