শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবন ১৪৩১, ২০ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

সারা বাংলার খবর

স্কুলের পাশেই মিলছে তামাকপণ্য, ঝুঁকিতে শিক্ষার্থীরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ৬:৪৭ পিএম

আইনের তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে বসা টং দোকান কিংবা ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা দেদারসে বিক্রি করছে সিগারেট । এতে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। পাশাপাশি অপ্রাপ্ত বয়সেই অনেকে ধূমপানে জড়িয়ে পড়ছে ।

আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় কোমলমতী শিক্ষার্থীরা পরোক্ষ ধুমপানের শিকার হচ্ছে । কোথাও আবার অপ্রাপ্তবয়স্করাই সিগারেট বিক্রি করছে।

২০১৯ সালের এক গবেষণায় রাজধানী ঢাকার ৯৫ ভাগ শিশুর শরীরে নিকোটিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এই নিকোটিনের উপস্থিতির কারণ পরোক্ষ ধূমপান।

‘সেকেন্ডহ্যান্ড স্মোক এক্সপোজার ইন প্রাইমারি স্কুল চিলড্রেন : আ সার্ভে ইন ঢাকা, বাংলাদেশ’ শিরোনামে এই গবেষণাটি যৌথভাবে পরিচালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ইয়র্ক, ইউনিভার্সিটি অফ এডিনব্যার্গ এবং লিডস সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগ। প্রধানত পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের ধূমপানের প্রভাবেই শিশুরা নিকোটিনের শিকার হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে স্থায়ী, অস্থায়ী দোকানে বিক্রি হওয়া সিগারেট থেকেও নিকোটিন ছড়ায়।

ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শতভাগ ধূমপান মুক্ত। আইনের ৭ ধারায় পাবলিক প্লেসে (জনসমাগম স্থান) যাতে ধূমপানের ধোঁয়া প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আইন লঙ্ঘনে অনধিক তিনশত টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হবেন এবং দ্বিতীয়বার করলে দ্বিগুণ হারে দন্ডনীয় হবেন ।

কিন্তু স্কুলের পাশেই তামাক বিক্রয়কেন্দ্র থাকলে এই আইন কখনই বাস্তবায়ন করা যাবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা ।

২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে এর সংশোধনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ইকবাল মাসুদ। তিনি বলেন, আইনে অনেক ভালো কথা বলা আছে, কিন্তু বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ নেই। আইন বাস্তবায়নে প্রয়োজন নজরদারী।

সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশেই স্থায়ী , অস্থায়ী ও টং দোকানে সিগারেট বিক্রি হতে দেখা গেছে। স্কুল শুরু কিংবা ছুটির সময় সেখানে দাঁড়িয়ে অনেকে ধূমপান করেন। এতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। আবার অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরও সেসব দোকানে ধূমপান করতে দেখা গেছে।

কলাবাগান বাসস্ট্যান্ডের পাশে নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের ফুটপাতে সাত-আট বছর ধরে দোকান করেন সাতক্ষীরার মাসুদুর রহমান। তিনি জানান, তার দোকানে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় চা-সিগারেট। স্কুলের পাশে সিগারেট বিক্রি আইনে মানা এমন তথ্য তার জানা নেই। তিনি বলেন, কখনো সরকারের কেউ তার দোকানে এসে এমন আইন সম্পর্কে জানাননি। দোকানে কখনো সিগারেট বিক্রির বিরুদ্ধে কোনো অভিযানও হয়নি। বরং মাঝেমধ্যে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও তার দোকান থেকে সিগারেট কেনে।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে সিগারেট বিক্রির জন্য প্রথম দফায় পাঁচ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে দ্বিগুণ হারে জরিমানার কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।

ইকবাল মাসুদ বলেন, স্কুলের পাশে ধূমপানে শিক্ষার্থীরা শৈশবে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। আবার অনেকে ধূমপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। এতে তাদের মস্তিষ্কে নেতিবাচক চাপ পড়ে।

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হোসেন আলী খোন্দকার জানান, তামাকবিরোধী সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এ লক্ষ্যে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।

তিনি বলেন, নানা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের এই সম্পর্কে সচেতন করা, আইনের বাস্তবায়ন ও কার্যকর প্রয়োগের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয় যাতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে সিগারেট বিক্রি করা না হয় এবং জনপরিসরে ধূমপান বন্ধ করা যায়।

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন