বিশ্ব জনসংখ্যা চিত্র (২০২১) এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৭.৫ ভাগ হলো কিশোর ও তরুণ। কিন্তু জনসংখ্যার এই অংশটি এখন ধূমপান ও তামাক ব্যবহারের লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে জব ফেয়ারের মাধ্যমে অতি উচ্চ বেতনে সিগারেট কোম্পানিতে চাকরির প্রলোভন দেখায় এবং মোটিভেশনাল স্পিকার হিসেবে কাজ করে। আর তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের হাত থেকে কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরো শক্তিশালী করা এবং তাদেরকে তামাক বিরোধী আন্দোলন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা।
আর এ লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রথম সারির বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুওর (ডরপ) আজ (বৃহস্পতিবার) তাদের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে ৫০ জন তরুণদের নিয়ে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে যুব সমাজের সম্পৃক্ততা’ বিষয়ক একটি ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
ডরপ এর প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর রুবিনা ইসলাম এর উপস্থাপনায় উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সকল তরুণদের ডরপ ও ক্যামপেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে)- এর পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ৬টি সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। ৬টি প্রস্তাব হলো- (১) সকল প্রকার পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা (২) তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা (৩) বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা (৪) ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা (৫) তামাক পণ্যের সকল প্রকার খুচরা বিক্রয় বন্ধ করা (৬) সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধিসহ তামাকজাত দ্রব্য মোড়কীকরণে কঠোর নিয়ম আরোপ করা তথা প্লেইন প্যাকেজিং বাস্তবায়ন করা। এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে তাদের ধূমপান ও তামাকের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন দিক এবং এ আইন শক্তিশালীকরণে তাদের ভূমিকা বিষয়ে ধারণা প্রদান করা হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটিএফকে গ্রান্টস ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিঞা বলেন, “ইতিমধ্যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই মুহূর্তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের উল্লেখিত দুর্বলতা সমূহ সংশোধন করে আইনটি শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাক মুক্ত বাংলাদেশ অর্জন করা সম্ভব।” তিনি আরা বলেন, “ তরুণরা তাদের ইচ্ছাশক্তির বলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। আমি আশা করবো সকল তরুণরা তামাক বিরোধী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্ব করবে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে অবদান রাখবে এবং জাতীয় নীতি -নির্ধারণী পর্যায়ে তারা তাদের দাবি সমূহ তুলে ধরবে।”
সভাপতির ভাষণে ডরপ এর প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) যোবায়ের হাসান বলেন, “ গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০১৭ সালের রিপোর্টে দেখা যায় বাংলাদেশে ১৫-২৪ বছর বয়সি প্রায় ১০ ভাগ তরুণ ধূমপানে আসক্ত। আর এই আসক্তির ফলে তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে এবং তাদের কারণে অধূমপায়ীরাও পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। আমি আশা করি এখানে উপস্থিত সবাই ধূমপান ও তামাক থেকে দূরে থাকবে এবং অন্যদেরকেও তামাকের অর্থনৈতিক ও শারিরিক ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত করবে।”
ভলান্টিয়ার অপারচুনিটিজ এর প্রধান নির্বাহী মিথুন দাস কাব্য বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, “তরুণরা জনস্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত প্রায় সব বিষয় নিয়েই অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেছে, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই আশা রাখি। আজকের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠানে তরুণদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে তাতে তরুণরা এগিয়ে আসলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের কাজটা আরো বেগবান হবে।”
ডরপ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ইয়ুথ ফোরামের সদস্যরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে অবদান রাখতে বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম করার শপথ গ্রহণ করে এবং তাদের দাবি জাতীয় নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে পৌঁছানোর অঙ্গিকার ব্যক্ত করে। উল্লেখ্য, উক্ত অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ডরপ এর মিডিয়া অ্যাডভাইজর কামরুন নাহার শোভা এবং মিডিয়া ও অ্যাডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর আরিফ বিল্লাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন