বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ধীরগতির কাজে চরম জনদুর্ভোগ

রামগড়-বারইয়ারহাট সড়ক ১৬ ব্রিজ-কালভার্ট ও এপ্রোচ সড়ক নির্মাণ চলছে ২৫ মাসে কাজের অগ্রগতি ৫৫% নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করা নিয়ে সংশয়

রতন বৈষ্ণব ত্রিপুরা, রামগড় (খাগড়াছড়ি) থেকে | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২১, ১২:০৩ এএম

খাগড়াছড়ির রামগড় হতে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট প্রধান সড়কে ১৬টি ব্রিজ-কালভাট ও পাশে এপ্যোচ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হওয়ার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২৫ মাসে মাত্র ৫৫% কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে জাইকার অর্থায়নে রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভার্টের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিপিসিএল। এ ছাড়াও ব্রিজের পাশে ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এপ্যোচ সড়কের কাজ করবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। রামগড়ের সোনাইপুল থেকে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পর্যন্ত প্রায় ৩৮ কিলোমিটারের সড়কসহ ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ শুরু করে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এই ২৫ মাসে কাজের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫৫%। তাই নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। যদিও প্রকল্প ব্যবস্থাপকের দাবি নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না হলেও আগামী জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হবে।

প্রকল্পের কাজ ধীর গতিতে হওয়ায় বেড়েছে জনদুর্ভোগ। ধুলাবালির পাশাপাশি রামগড়ের সোনাইপুল, বাগানবাজার, ফটিকছড়ির হেঁয়াকোবাজার, মিরসরাই অংশের করেরহাট লক্ষীছড়া, হিঙ্গুলী ও কয়লা এলাকায় যানজট লেগেই থাকে।

মিরসরাই অংশের সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে করেরহাট ইউনিয়নের বাসিন্দারা। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও কয়লা এলাকার বাসিন্দা মহিউদ্দিন মেম্বার জানান, কয়লা বাজারে তার একটি অফিস রয়েছে। এলাকা মানুষ কোন সমস্যায় পড়লে ওই অফিসে বসে সমাধান করে থাকেন। কিন্তু ব্রিজ ও সড়কের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে ধুলাবালির কারণে অফিসে বসতে পারছেন না। করেরহাট ব্যবসায়ী পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কামরুল হোসেন জানান, ধুলাবালি ও যানজটে জনজীবন বিপর্যস্ত। বাজারের ব্যবসায়ী ধুলাবালি কারণে রিতিমতো হাঁফিয়ে উঠেছেন।

ঠিকারদারি প্রতিষ্ঠান সিপিসিএলের সাইট ম্যানেজার হাবীবুর রহমানের দাবি, করোনার কারণে কাজে ধীর গতি এসেছে। শ্রমিকরা ছুটি নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর কোভিড-১৯ এর কারণে কাজে আসছে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে বলে তিনি জানান।

জানা যায়, রামগড় স্থলবন্দর হয়ে ভারত থেকে সড়ক পথে পণ্য রপ্তানি-আমদানির জন্য এই সড়ক ব্যবহার হবে। গত বছরের আগস্টে একনেকের সভায় বারইয়ারহাট-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণে ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরে সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় অধীনে এই অর্থের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারত সরকার ঋণ দেবে ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে।

এদিকে ১৬ ব্রিজ ও কালভার্টের পাশের অধিকাংশ এপ্র্যোচ সড়ক বন বিভাগের জায়গায় হওয়ায় জটিলতা দেখা দেয়। এদিকে বনবিভাগের জায়গার বিষয়ে একটি সুপারিশ চট্টগ্রাম বন কর্মকর্তার মাধ্যমে বন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান, সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর প্রকল্প ব্যবস্থাপক জুলফিকার আহম্মদ। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত ১৬টি ব্রিজ ও কালভাটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে রামগড়ের সোনাইপুল মসজিদ সংলগ্ন ব্রিজ সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে অধিকাংশ এপ্রোচসড়ক বন বিভাগের জায়গায় হওয়ায় কিছুটা সময় হচ্ছে। তবে নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে কাজ শেষ না হলেও আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মধ্যে সম্পন্ন হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাপতি মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু বলেন, বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এগিয়েছে। ইতোমধ্যে ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের ফলে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটনসহ দু’দেশের সুসম্পর্ক আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রামগড়-বারইয়ারহাট সড়ক ব্রিজ-কালভার্ট ও এপ্র্যোচ সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন