রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

দুর্ভোগে ৩ লক্ষাধিক মানুষ

আমতলী-তালতলী সড়ক নিয়ে টানাটানি

তালুকদার মো. কামাল, আমতলী (বরগুনা) থেকে | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

ঢাকা-আমতলী-তালতলী সড়ক ও বেইলি ব্রিজের সংস্কার নিয়ে দু’দফতরের টানাটানিতে গত ১ বছর ধরে ঢাকাগামী বাস, লোকাল বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক-ট্রলিসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দুই উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
জানা যায়, ঢাকা-আমতলী-তালতলী উপজেলার মধ্যে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো সড়ক পথ। এই সড়ক পথে তালতলী থেকে প্রতিদিন শত শত মানুষ ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাসে ও অন্যান্য যানবাহনে দেশের বিভিন্নস্থানে চলাচল করে থাকে। পণ্যবাহী ট্রাক-ট্রলিসহ অন্যান্য ভারী যানবাহনে মালামাল আনা-নেয়া করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি তালতলীতে আইসোটেক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। এই নির্মাণাধীন আইসোটেক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল আনা-নেয়ার জন্য কাভার ভ্যান, পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেট কার, মাহিন্দ্রা, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ শত শত যানবাহন চলাচল করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আমতলীর মানিকঝুড়ি থেকে কচুপাত্রা বাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং ওঠে গিয়ে দেবে গিয়ে খোয়া-বালু বের হয়ে হাজারো খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার না করায় এভাবে খানাখন্দ নিয়ে প্রায় ২/৩ বছর সড়কটি পড়ে রয়েছে। ৩৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই সড়কটির আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর ১৯৮৫ সালে সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে। পুরাতন ওই ব্রিজ দিয়ে যান পারাপারে বর্তমানে ব্রিজটি নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। একাধিকবার ওই ব্রিজের পাটাতন দেবে আলগা হয়ে সরে গেছে। আবার তা কোনো রকমে মেরামত করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এভাবে গত কয়েক বছর অতিবাহিত হলেও সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসে ব্রিজের পাটাতন ভেঙে যায়। ভাঙার ১ মাস পরে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগ দায়সারাভাবে মাটি দিয়ে এর সংস্কার কাজ করেন। সংস্কারের ১৫ দিন যেতে না যেতেই আবারও ওই ব্রিজের পাটাতন পুনরায় দেবে গেছে। বর্তমানে ব্রিজটিতে কোনো গাড়ি উঠলেই ঠকঠক শব্দ করে নড়ে। তখন মনে হয় যেন এখনি ব্রিজটি ভেঙে পড়ে যাবে। গত ৪ মাস ধরে এ সড়ক ও ব্রিজ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।
আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, আমরা রাস্তা চাই। আমি বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই দ্রুত সড়ক ও প্রায় একাধিকবার ব্রিজ দিয়ে গাড়ি নদীতে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে আসছে। চলাচল স্বাভাবিক করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি দাবি জানান। কড়ইবাড়িয়া বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী কবির আকন বলেন, আসছে বর্ষা মৌসুমের পূর্বে এ সড়কটি সংস্কার না করলে দু’উপজেলার সাথে সড়কপথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের দাবি, আমতলী-তালতলী সড়ক ও ব্রিজ স্থানীয় সরকার বিভাগের। অপরদিকে সড়ক ও জনপদ বিভাগ দাবি করেন, ওই সড়ক ও ব্রিজ সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ফলে দুই বিভাগের ঠেলাঠেলিতে সড়ক ও ব্রিজের সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে।
বরগুনা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এসকে আরিফুল ইসলাম বলেন, সড়কটির মালিকানা সড়ক বিভাগের। তবে সড়কটির সংস্কার কাজ আমরা করবো। এজন্য গত ১১ মে ২০২১ তারিখ আমি সরেজমিনে আমতলী-তালতলী সড়কটি সম্পূর্ণ পরিদর্শন করেছি এবং সাথে সাথে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। নির্দেশ পেলে দ্রুত পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. নিজামউদ্দিনকে সাথে নিয়ে আমতলী-তালতলী আঞ্চলিক সড়কের আড়পাঙ্গাশিয়া নদীর ওপর নির্মিত বেইলি ব্রিজের মেরামত ও সংস্কার কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্রিজটি সংস্কারের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। ব্রিজের ক্ষতিগ্রস্থ স্থানের পেটেন্ট ও পাত ক্রয় করা হয়েছে। ঈদের জন্য মেরামত শ্রমিকরা কাজ শুরু করতে পারেনি। ২/১ দিনের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা করেন।
সওজ’র নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম জানান, আমি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছি গত তিন মাস ধরে। এ বিষয়ে আমি ভালো বলতে পারবো না। আপনি এসি মাসুদ খানের সাথে কথা বলুন। এসি মাসুদ খান বলেন, উল্লিখিত সড়কটি ২০০৪ সালের পূর্বে সওজ’র অধীনে ছিলো। বর্তমানে এলজিইডি’র অধিনে। আমরা চেষ্টা করছি আবার সওজ’র অধীনে ফিরিয়ে আনতে। সওজ’র অধীনে এলে আমরা সুন্দর সড়ক নির্মাণ করে দিবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন