নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে
নীলফামারীর সৈয়দপুরের আড়ত হতে প্রতি মৌসুমে ৩০ কোটি টাকার হাইড্রোস মিশ্রিত বিষাক্ত কাঁচা সুপারি উত্তরের ১৬ জেলার বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হচ্ছে। এতে উত্তরাঞ্চলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ এ বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত সুপারি সেবনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি সেবনে লিভার, কিডনি বিকল কিংবা ক্যান্সারের মতো মরণ ঘাতক ব্যাধি শরীরে ছড়াতে পারে। তারপরও নজর নেই সংশ্লিষ্টদের। তাই এ বিষাক্ত সুপারি সরবরাহ বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মনে করেন স্থানীয় সচেতন মহল। জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি সুপারির আড়ত হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। এ আড়তের ব্যাবসায়ীরা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, পঞ্চগড়, চিলাহাটি হতে পানিতে পচা সুপারি আমদানি করেন। পরে পার্শ্ববর্তীসহ প্রায় ১৬ জেলার ব্যবসায়ীরা এ আড়ত হতে সুপারি কিনে নিজ নিজ এলাকায় সরবরাহ করেন। এতে ব্যাপক সুপারি সরবরাহ হয় এ বাজার হতে। আর ওই আড়তের ট্রাক আনলোডকারী আনোয়ার নামের এক শ্রমিক জানান, জুলাই মাস হতে শুরু করে ১০ মাস কাঁচা সুপারির ট্রাক আসে এ আড়তে। প্রতিদিন ৫ থেকে ৬শ’ বস্তা এখানকার আড়তদারের গোডাউনে ঢোকে। এগুলো শুধুই গাঢ় হলুদ রংয়ের। পাইকারি সুপারি ব্যাবসায়ীরা জানান, এখানকার আড়তদারের কাঁচা সুপারিগুলো যায় উত্তরাঞ্চলের সব জেলার বাজারে। খুচরা ব্যবসায়ীদের এ সুপারির প্রতি আগ্রহ বেশি ও তুলনামূলক সস্তা দরের কারণে। শুকনা সুপারি ৩ মাস পাওয়া যায়। এরপর পুরো বছরেই এ সুপারির উপর নির্ভর করতে হয়। তবে হাইড্রোস মিশ্রিত করে বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা সুপারি পাঠালে পানি পচার বিকট গন্ধ থাকে না। আবার রংটা ভালো থাকে। পাশাপাশি এটি সহজে নষ্ট হয় না। এ বাজারের আরিফ নামে এক পাইকারি সুপারি ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে ১ বস্তা সুপারির মূল্য ১ হাজার ৮শ’ টাকা। তাই ৩০ কোটি টাকার সুপারি পুরো মৌসুমে আমদানি-রফতানি হয়। এ পানিতে পচা সুপারি নিয়ে শহরের কুন্দল এলাকার পান দোকানদার তৈয়ব আলী ও বিজলী সিনেমা রোডের আকবর জানান, শতকরা ৮০ জন পানসেবী এ কাঁচা সুপারিযুক্ত পানে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে কাঁচা সুপারিযুক্ত পান বিক্রয় করছি। তবে ক্ষতির কথা না জানলেও এতে হাইড্রোস মিশ্রিতের কথা স্বীকার করেন পান দোকানিরা। দীর্ঘদিন যাবত বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত সুপারির এ ব্যবসা চললেও এ তথ্য জানেন না বলে সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. অহিদুল হক জানান। তবে মানবদেহের জন্য এমন ক্ষতিকর সুপারি যারা বাজারজাতে সহায়তা করছে তা তদন্ত করে ঊর্ধŸতনদের নিয়ে বন্ধের ব্যবস্থা করবেন বলে মতামত দেন। এদিকে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইড্রোস হচ্ছে একটি বিষাক্ত কেমিক্যাল। এটি কোনোভাবেই প্রাণীর দেহে সামান্য পরিমাণ সেবনের অনুমতি নেই। এর ক্ষতিকর প্রভাবে কিডনি, লিভার ফেইলর ও শরীরের যে কোনো স্থানে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ রয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. মাহাজুর আলম সুমন বলেন, এ সুপারি সেবীদের ঠোঁটের দুই কোণে সাদা ঘা দেখা যায়। এছাড়া মরণব্যাধি তো রয়েছেই। যা বন্ধে এখনই পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে তিনি মত দেন।। এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু ছালেহ মো. মুসা জঙ্গীর সাথে। তিনি বলেন, খাদ্যে ভেজালের বিষয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তাই ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন