মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উপ সম্পাদকীয়

বৃহত্তম গণতন্ত্রের গণতন্ত্রে অনাস্থার নিকৃষ্টতম প্রমাণ কাশ্মীর

প্রকাশের সময় : ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মোহাম্মদ আবদুল গফুর
চলতি সপ্তাহের একটি বড় খবর ছিল কাশ্মীরের সেনা দফতরে হামলা। গত সোমবার ঢাকার সকল পত্র-পত্রিকায় বড় শিরোনামে প্রকাশিত হয় খবরটি। দৈনিক ইনকিলাব-এ প্রকাশিত খবরটির প্রধান শিরোনাম ছিলÑ ‘কাশ্মীরে সেনা দফতরে হামলা’। সংবাদ বিবরনীতে বলা হয় : ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড সদর দফতরে হামলায় অন্তত ১৭ জন সৈন্য ও ৪ হামলাকারী নিহত হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, অন্তত ১৬ জন জওয়ান আহত হয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাদের হেলিকপ্টারে করে রাজধানী শ্রীনগরস্থ সেনা হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর ৪টার দিকে হামলার এ ঘটনা ঘটে।
হামলার পর ভারতের প্রধামন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত একজনও রেহাই পাবে না। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং তার রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সফর স্থগিত করেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্র সচিবকে ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ও গভর্নরের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা উচ্চ শিক্ষিত। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, রোববার ভোরে তিন-চার ব্যক্তি ভারতের লাইন অব কনট্রোলের নিকটে এ সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়। ভোর ৪টার দিকে হামলাকারীরা প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। সকাল সাড়ে ৯টার দিকেও গুলিবিনিময় চলছিল। ভারতীয় কর্মকর্তাদের ধারণা, হামলাকারীরা ফিদায়েন (জীবন দিতে সদাপ্রস্তুত) হতে পারে। তাদের এ ধারণা বাস্তব বলেই মনে হয়।
কাশ্মীরে এ ধরনের সংঘাত হঠাৎ করে শুরু হয়নি। ১৯৪৭-এ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় দু’শ বছরের বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদী শাসনের অবসানে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের সঙ্গে এ সংঘাতের সম্পর্ক থাকাটা ছিল অতি স্বাভাবিক। কারণ বৃটিশ শাসনামলে তদানীন্তন বৃটিশ শাসিত ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে যে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছিল তার প্রভাব বৃটিশ আমলের বিভিন্ন দেশীয় রাজ্যেও (প্রিন্সলি স্টেট) পড়েছিল অনিবার্যভাবে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসানে ভারত ও পাকিস্তান নামের যে দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয় তার ভিত্তিই ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাসমূহ ভারত এবং মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে কাশ্মীর হায়দরাবাদ প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যের শাসকদের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল তাদের শাসকরা যে কোনো রাষ্ট্রে যোগ দিতে পারবেন অথবা ওই দুই রাষ্ট্রের কোনোটার সাথে যোগ না দিয়েও পারবেন নিরপেক্ষ থাকতে। সে অনুসারে হিন্দু অধ্যুষিত হায়দরাবাদের মুসলিম শাসক নিজাম নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে ভারত সরকার হায়দরাবাদে ভারতীয় সেনা পাঠিয়ে জোর করে রাজ্যটি দখল করে নেয়।
হায়দরাবাদে ভারত যে নীতি অবলম্বন করে সে অনুসারে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া অথবা বা পাকিস্তান ভারতের অন্তভূক্ত হওয়ার বদলে স্বাধীন থাকার অধিকার ছিল স্বাভাবিক। সে ধরনের দাবিও উঠেছিল তখন কাশ্মীরি জনগণের মধ্য থেকে। কিন্তু সে সৌভাগ্য হয়নি কাশ্মীরিদের নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের অবসানে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের দুই মাস পর মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের অমুসলিম মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরকে দুই শর্তে ভারতের সঙ্গে সংযুক্তিকরণে রাজি হন। একটি শর্ত ছিল উত্তেজনা দমন ও শান্তি স্থাপনের জন্য কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্য পাঠাতে হবে এবং কাশ্মীরের জনগণকে গণভোটের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দিতে হবে। ভারত কাশ্মীরে সৈন্য পাঠায়। তবে গণভোট দিতে গড়িমসি শুরু করে। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে যুদ্ধবিরতি হয়। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুসারে সমগ্র কাশ্মীরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে কাশ্মীরিদের ভাগ্য নির্ধারণের পক্ষে নিরপেক্ষ গণভোট অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও প্রধানত ভারতের অনীহা এবং ভারতের প্রতি বহির্বিশ্বের অস্বাভাবিক দুর্বলতার কারণে কাশ্মীরে গণভোট অদ্যাবধি কখনো অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।
এ ব্যাপারে কাশ্মীরের নেতৃবৃন্দের যে দুর্বলতার প্রতি উপরে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যেতে পারে। বৃটিশ শাসনামলে কাশ্মীরের জনগণের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা শেখ আবদুল্লাহ। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন কংগ্রেস নেতা প-িত নেহরুর পরিবারিক বন্ধু। পারিবারিক বন্ধুত্বের লোভ দেখিয়ে সর্ব ভারতীয় রাজনীতির বাস্তবতার বিপরীতে মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরের এই নেতাকে নেহরু কংগ্রেস রাজনীতির কানা গলিতে আবদ্ধ করতে সক্ষম হন। ফলে পরবর্তীতে শেখ আবদুল্লাহ তাঁর সারা জীবনের লক্ষ্য মোতাবেক স্বাধীন কাশ্মীরের স্বপ্ন দেখার চেষ্টার অপরাধে তার বন্ধু প-িত নেহরুর প্রধানমন্ত্রিত্বের আমলেই ভারতের কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে তার ভুল রাজনীতির খেসারত দিতে বাধ্য হন।
অন্যদিকে ভারত সমগ্র বিশ্বে বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও ভারতের কাশ্মীরনীতি প্রমাণ করেছে ভারত সরকারের মুসলিম বিদ্বেষের গভীরতা ও ব্যাপকতা তার গণতন্ত্রপ্রীতিকে জঘন্যতম প্রতারণায় রূপান্তরিত করেছে। ফলে অদ্যাবধি শের-ই-কাশ্মীর শেখ আবদুল্লাহর ভুল রাজনীতির খেসারত দিতে হচ্ছে কাশ্মীরি জনগণকে। কাশ্মীর নিয়ে শান্তিতে নেই ভারতের শাসকরাও। ভারত সারা বিশ্বে বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করলেও কাশ্মীরি জনগণের কাছে এখন ভারতীয় শাসকদের প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে মুসলিমবিদ্বেষী নিষ্ঠুর অপশক্তি হিসেবে। এটা কোনো কাল্পনিক অপপ্রচারণা নয়। মাত্র কয়েক দিন আগে কাশ্মীরের জনৈক সরকারদলীয় এমপি (পার্লামেন্ট সদস্য) ভারত সরকারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনে এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
কাশ্মীর একটি মুসলিম অধ্যুষিত জনপদ হলেও একটি নিষ্ঠুর মুসলিমবিদ্বেষী অপশক্তির শাসনাধীন থাকার কারণে সেখানে ভারতীয় শাসন অব্যাহত রাখার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মীরি জনগণের সমস্ত ক্ষোভ গিয়ে পড়ছে ভারতীয় সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে। কোনো স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীকে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পশুবলে অবনমিত করে রাখার অপচেষ্টা চালালে সেই বাহিনীর ওপর জনগণের ক্ষোভ কত গভীর ও ব্যাপক আকার ধারণ করে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশিদের। আমাদের একাত্তরের সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি ভারতীয় দখলদার বাহিনীর প্রতি কাশ্মীরি জনগণের ক্রোধ কত গভীর।
কাশ্মীরকে নিয়ে অতীতে বেশ কয়েকবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হয়ে গেছে। তা ছাড়া ছোটখাটো সীমান্ত সংঘর্ষ তো প্রায় নিত্য দিনের ঘটনা হয়েই আছে। এর মূলে রয়েছে কাশ্মীরের জনগণের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার প্রশ্নে ভারতীয় শাসকদের অন্ধ বিরোধিতা। যে দেশ সমগ্র বিশ্বে বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে সেই দেশের শাসক সম্প্রদায়ের মধ্যে এ ধরনের মনোবৃত্তি একটি সত্যই প্রমাণ করে। আর তা হলো কোনো মানুষ বা মানবগোষ্ঠীই দেবতা বা ফেরেশতা নয়। তাদের প্রত্যেকের মধ্যেই দুটি পরস্পরবিরোধী সত্তা বিরাজমান। একটি সত্তা সমগ্র মানব সমাজের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে চেষ্টা করা। অপর সত্তা যে কোনো মূল্যে সমগ্র বিশ্বের ওপর নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া। এটা ব্যক্তি মানুষ সম্পর্কে যেমন সত্য, তেমনি সত্য হতে পারে কোনো মানব গোষ্ঠী তথা জাতির মনমানসিকতা সম্বন্ধেও। ভারতের জনগণের অনেকের মধ্যে যেমন ব্যাপক মুসলিম বিদ্বেষ রয়েছে তেমনি কারো কারো মধ্যে রয়েছে জাগ্রত বিবেক। ভারতের সুপরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে যেমন রয়েছেন গুজরাটের দাঙ্গা খ্যাত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, তেমনি রয়েছেনঅরুন্ধতী রায়ের মতো বিবেকবান মানুষ। তাই কাশ্মীরের সেনা দফতরে হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেমন তার প্রতিশোধ গ্রহণের লক্ষ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, তেমনি মানব প্রকৃতির সূক্ষ্মতর পর্যবেক্ষক অরুন্ধতী রায় সুচিন্তিত অভিমত প্রকাশ করে বলেছেন, কাশ্মীর সমস্যার প্রকৃত সমাধান নিহিত রয়েছে রাজ্যটির স্বাধীনতা লাভের মধ্যে। এখানেই রয়েছে মানুষে মানুষে একই ঘটনার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে মত পার্থক্যের গুরুত্ব।
কাশ্মীরে ভারতের সেনা দফতরে হামলার ঘটনায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়াও বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। উনিশশো সাতচল্লিশে বৃটিশ শাসনের অবসানে উপমহাদেশে ভারত ও পাকিস্তান নামের দুটি স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের পর এ দুটি রাষ্ট্র জাতশত্রু হিসেবে গড়ে উঠেছে। এ দুই রাষ্ট্রের কোনো একটির অহমিকায় আঁচড় লাগতে পারে এমন কোনো ঘটনার জন্যই অপর রাষ্ট্রটিকে দায়ী ভাবা তাদের মজ্জাগত অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই নিরিখে কাশ্মীরের সেনা দফতরে হামলার জন্যও ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তান সেনা বাহিনীকে দায়ী ভেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ভারতীয় সেনা বাহিনীর অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে ধারণা করছে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী। তাছাড়া কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা দফতরে একটি সফল হামলা পরিচালনাকে অনেকে ভারতীয় সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতা হিসেবেও দেখছেন। এসব পর্যবেক্ষণের ফলে যথাশীঘ্র পাকিস্তানে ভারতের সামরিক অভিযানের চাপ বাড়ছে।
কিন্তু যারা আবেগের তাড়নায় কোনো শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের দাবি জানিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে তারা আর যাদের ওপর সেই অভিযান চালনার দুরূহ বাস্তব দায়িত্ব অর্পিত হয় তাদের বিবেচনা কখনো এক হয় না, হতে পারে না। কারণ প্রথমোক্তদের কাজ আবেগনির্ভর, ইচ্ছা ব্যক্ত করার মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে যায়। আর শেষোক্তদের কাজ বাস্তব তথ্যাদির ভিত্তিতে সামরিক অভিযানের সফল পরিসমাপ্তির আগে শেষ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিশেষ করে বর্তমান পারমাণবিক শক্তির যুগে পাকিস্তানও যে একটি স্বীকৃত পারমাণবিক শক্তি সেই বাস্তবতাকে ভুলে যাওয়া বা হালকা করে দেখার কোনোই অবকাশ নেই ভারতীয় সামরিক নেতৃত্বের।
তাছাড়া কাশ্মীরে ভারতীয় সেনা দফতরে হামলার ঘটনার পেছনে শুধু সংশ্লিষ্ট সামরিক বাহিনীর শক্তি বা দুর্বলতাই বিবেচ্য বিষয় নয়। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনগণের সমর্থন বা বিরোধিতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে মাথায় রাখতে হয়। এ বিষয়টি ১৯৭১ এর অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থা একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থা থেকে যে কোনো বিবেচনায়ই ভালো নয়, এ বিবেচনা বোধ নিশ্চয়ই ভারতীয় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের মধ্যে রয়েছে। নইলে বাস্তব পরিস্থিতি তাদের অনুকূলে থাকলে ভারতীয় সেনাবাহিনী বহু আগেই পাকিস্তানে সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের চিরশত্রু ওই দেশটিকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিতে পারত।
সুতরাং ভারতের জনগণের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালিয়ে দেশটিকে উচিত শিক্ষা দেয়ার আবেগনির্ভর আহ্বান যত উচ্চারিতই হোক ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে সব কিছুর বাস্তব পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের বাইরে থাকার সুযোগ নেই। তাছাড়া কাশ্মীরের পরিস্থিতির যে করুণ বাস্তবতা তাতে তো কোনো বিবেচনায়ই ভারতের হঠকারিতা প্রদর্শনের সুযোগ নেই। সমগ্র বিশ্বে ভারতের সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র অথচ কাশ্মীরের ব্যাপারে বাস্তবে ভারত যে নীতি অনুসরণ করছে তাতে ভারতের এ প্রধান পরিচিতিটাই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে প্রমাণিত হচ্ছে। কাশ্মীর সম্পর্কে জাতিসংঘের যে অবস্থান সে মোতাবেক ভারত কাশ্মীরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ গণভোট অনুষ্ঠানের মারফত কাশ্মীরিদের ভাগ্য নির্ধারণের সুযোগ দানে ন্যায়ত বাধ্য। ভারতের বিশিষ্ট বিবেকবান, নাগরিক অরুন্ধতী রায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কাশ্মীরের স্বাধীনতার মধ্যে কাশ্মীর সমস্যার প্রকৃত সমাধান নিহিত রয়েছে বলে ওই গণভোটের সম্ভাব্য ফলাফল আগেই বলে দিয়েছেন। এ কঠোর বাস্তবতা ভারতীয় নেতৃত্ব দেখতে পান বলেই অবাধ গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মীরিদের ভাগ্য নির্ধারণের অধিকারকে তারা যমের মতো ভয় করেন।

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন