শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

পদ্মায় ভাঙনের মুখে ৫০ পরিবার

হুমকিতে গোলডাঙ্গীর ব্রিজসহ ২ স্কুল

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ | প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২১, ১২:০১ এএম

ফরিদপুর সদর থানার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের প্রাণ গোলডাঙ্গী এলাকা। এখানে প্রায় ৫০ হাজার লোকের বসবাস। হটাৎ করে পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারনে গোলডাঙ্গী ব্রিজ এলাকা হতে গোলডাঙ্গী দুলাল মেম্বারের কলা বাগান পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা মো. রাজিব সেখ।
তিনি আরো বলেন, ৪০/৫০টি পরিবার ভাঙনের কবলে পড়লে বিপরীত পাশের চরে নতুন বসত ঘর বানানোর চেষ্টা করছেন। নতুন করে ভাঙনে প্রায় ২শ’ পরিবারের ক্ষেতের ফসল নষ্টের ফলে তারা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পরেছে এবং মানবেতর জীবন যাপন করছে।
তীব্র ভাঙনের ফলে ৩নং চড় টেপোরাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উস্তাডাঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয় দুটি হুমকির মুখে। বর্তমানে ভাঙনের তীব্র পয়েন্ট থেকে স্কুল দুটি ও শত শত বসতির বাড়ি দূরত্ব মাত্র ৩শ’ গজ।
সরেজমিনে ভাঙন এলাকা পরিদর্শনকালে গোলডাঙ্গী এলাকার মো. আইয়ুব মিয়া ও এনায়েত হালদার জানান, যেভাবে পানি বাড়ছে আর ভাঙন চলছে তাতে গোলডাঙ্গীর বৃহওর ব্রিজটি রক্ষা করা খুব কষ্ট। কথা হয় নর্থচ্যানেল এলাকার প্রবীন ব্যক্তি মো. ওয়াহেদ আলী (৭৫)-এর সাথে। তিনি প্রতিনিধিকে বললেন, এই নিয়ে আমার পরিবার ৪ বার ভাঙনের শিকার। পাশেই চায়ের দোকানে কথা হয় দৈনিক ইনকিলাবের ভক্ত সেখ লালু (৮০)-এর সাথে। তিনি বললেন, আমি ৫ বার নদী ভাঙনের মধ্যে পরছি।
উল্লিখিত ২ মুরব্বী জানালেন, আমাদের চোখের সামনে এই এলাকার ২০/২৫টি মসজিদ, ৬/৭ পাঠশালা ২/৩টা ছোট মন্দির পদ্মায় বিলিন হয়ে গেছে। অপরদিকে, পদ্মার ভাঙনে ইতোমধ্যেই বিলিন হয়েছে ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ৮/৯ গ্রাম বা ডাঙ্গী। এই বিষয় প্রবীন ব্যক্তি মো. জামাল ফকির জানান, আমাদের চোখের সামনে ফরিদপুর সদরের মানচিত্র থেকে বিলিন হয়েছে প্রায় ১৭টি গ্রাম।
গত কয়েক বছরে ভ্ইুয়াডাঙ্গী, রোকন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, রোকন হাজীর ডাঙ্গী, গেন্দু মোল্যারহাট, পালবাড়ি বাজার, পালেরবাড়ি, পালবাড়ি হাইস্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, আপতাব পালের জমিদারি স্ট্রেট, ভাঙিডাঙ্গী, ব্যাপারীডাঙ্গী, তাহের ফকিরের ডাঙ্গী, উজির হাজির ডাঙ্গী, মৃধা ডাঙ্গীসহ, ৭টি স্কুল, ৮টি মসজিদ, ২টি মন্দির এবং প্রায় ৪ হাজার পরিবার ভাঙনের কবলে পরে সব কিছু হারিয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে রাস্তার পাশে ঘরবাড়ি তৈরি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখনও আছেন।
এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, আমরা ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি। যেখানে যা কিছু প্রয়োজন বিশেষ ব্যবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। গত ২/৩ দিন থেকে ভাঙন ঠেকাতে পাউবো জিওব্যাগ দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করছেন।
ভাঙন ঠেকাতে ও পানির গতি কমাতে ফরিদপুর নদী গবেষনার বৈজ্ঞানিকরা বৈজ্ঞানিক পদ্মতিতে ১০/১২টি বাঁশের ওয়াটার ব্রেক রেকার দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি ফরিদপুর শহরমুখী তথা বৃহওর ব্রিজটি দক্ষিণ মুখে রেখে ডান দিকের পানির তোর কমাতে বাংলদেশ বিআইডব্লিউটি বাম প্রান্তে ড্রেজার বসিয়ে পানি গতি নিয়ন্ত্রণের কাজ করছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশল আরো জানান, ড্রেজার দিয়ে ডুবচর কেটে ডান দিকের পানি বাম দিকে নেওয়ার চেষ্টাও চলছে। এতে পানির গতি বেগ কমবে এবং ভাঙনও কমবে। জরুরিভাবে ভাঙন এলাকায় কতদিন কাজ করবেন এবং কি পরিমান বরাদ্দ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঠিকাদার মোফাজ্জেল এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেখে শুনে কাজ করছেন, এই কাজ আরও ৭ দিন চলবে। আপাতঃ ৫০ লাখ টাকা ভাঙন ঠেকাতে বরাদ্দ হয়েছে। প্রয়োজনে আরো বাড়বে। এই বিষয়, ডিক্রিরচর ইউপি’র চেয়ারম্যান মো. মিন্টু ফকির এবং নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাক হোসেন জানান, আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব আমরা নদী ভাঙনের কবলে পরা সকলের জন্য সাহায্য করবো।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন