নূরুল আলম বাকু, দামুড়হুদা (চুয়াডাঙ্গা) থেকে
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় অপরিকল্পিতভাবে কৃষি জমিতে অবাধে গড়ে উঠছে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে আশঙ্কাজনকহারে কমছে কৃষি জমি। কৃষি জমি কমতে থাকলে বিভিন্ন ফসলসহ খাদ্য উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি জমি রক্ষার্থে এখনই ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে মনে করছেন অভিজ্ঞমহল। আমাদের কৃষিনির্ভর দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিক্ষেত্রে খাদ্য উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই। এমনিতেই আমাদের দেশের জনসংখ্যার তুলনায় মাথাপিছু কৃষি জমির পরিমাণ কম। তার উপর আবার প্রতি বছর কৃষি জমি দখল করে অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজারসহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটা স্থাপনের কারণে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। প্রতি বছর এভাবে কৃষিজমি কমতে থাকলে ভবিষ্যতে দামুড়হুদা উপজেলাসহ আশপাশ এলাকায় খাদ্যশস্যের পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দামুড়হুদা উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ২৫ হাজার ৮শ’ হেক্টর। দশ বছর আগে এই পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর। সরকারি হিসাবেই দেখা যায়, উপজেলায় ১০ বছরের ব্যবধানে কৃষিজমি কমেছে ৩৫০ হেক্টর। তবে বাস্তবে এ পরিমাণ আরো অনেক বেশি হবে বলে অভিমত অনেকের। এলাকায় নতুন নতুন রাস্তাঘাট, বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ইটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত ১০ বছরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশতাধিক ইটভাটা। সূত্র জানায়, একটি ইটভাটা স্থাপন করতে কিল্ন তৈরি, মাটি রাখার জায়গা, ইট শুকানো পট, অফিস ও স্টোররুম তৈরিসহ বিভিন্ন কাজের স্থানের জন্য কমপক্ষে ২৫ বিঘা জমির প্রয়োজন হয়। আর এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হয় কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল)। তাতে দেখা যায় শুধু ইটভাটা স্থাপনের পেছনেই নষ্ট হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২শ’ বিঘা জমি। সেইসাথে প্রতি বছর একটি ইটভাটায় ইট তৈরির মূল উপকরণ মাটির যোগান দিতে নষ্ট হয় গড়ে ৩ বিঘা কৃষিজমি। তাতে দেখা যায় শুধুমাত্র ইটভাটা স্থাপনের কারণেই গত এক দশকে কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার বিঘা। এছাড়াও মাটির যোগান দিতে অনেক জমির উপরিভাগের মাটি (টপ সয়েল) কেটে নেয়ার ফলে সেসব জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আবাদি জমি কমতে থাকায় ভবিষ্যতে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাসের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দেবে এমনটাই অভিমত অভিজ্ঞজনদের। এ ব্যাপারে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার আ. হালিম বলেন, আইন আছে, কৃষিজমিকে অকৃষি বা ভিটা হিসাবে ব্যবহার করতে অর্থাৎ জমির শ্রেণী পরিবর্তন করতে হলে সহকারী কমিশনারের অনুমতি লাগবে। তবে কৃি জমি থেকে খননের মাধ্যমে মাটি বা বালি উত্তোলন করা যাবে না। নিজের জমি হলেও এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে পাশের অন্যের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর কৃষিজমিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে অবশ্যই জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন