পার্বত্যাঞ্চলের গর্ব একটি বৈচিত্রময় দৃষ্টিনন্দন তীব্র প্রবাহমান খরস্রোতা ফেনী নদী। এ নদীর কুলঘেসে দেখতে অবিকল কলসির আকৃতিতে গড়ে উঠেছে বলেই গ্রামটির নাম দেয়া হয়েছে লাচাড়ীপাড়া (কলসি মুখ)। ১শ’ থেকে ১শ’ বিশ গজ দৈর্ঘ্যর প্রবেশ প্রথটির ভেতরটা অবিকল কলসির আদলেই গড়া আর এ কারণেই গ্রামটি এখন খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলার একটি ব্যতিক্রমী পর্যটন এলাকা হিসেবে বেশ পরিচিত। গ্রামের প্রবেশ মুখে পাহাড়ের ওপরে স্থাপিত বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের লাচারিপাড়া বিওপি ক্যাম্প থেকে তাকালে মনে হবে এ যেন এক দৈত্যকার কলসির প্রতিস্থাপন। উপজেলা সদর হতে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ২শ’ ৫০ একরের সীমান্ত গ্রামটিতে প্রায় ৭০ পরিবারের চারশ’ উপজাতী মারমা-ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের বসবাস। তিন দিক থেকে ফেনী নদীর গতিপথ বেষ্টিত গ্রামটির তিনদিক ভারতে গর্ভে। গ্রামে প্রবেশের পথে ১শ’ থেকে ১শ’ বিশ গজ প্রবেশ মুখের পূর্ব পাশে সম্প্রতি ফেনী নদীর পাহাড়ি ঢলে ধারাবাহিক ভাঙন দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে প্রবেশ মুখে তথা কলসির মুখের ভাঙনটি ঠেকানো না গেলে গ্রামটি বিলীন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। ফেনী নদীর তীব্র প্রবাহমান খরস্রোতা থেকে গ্রামটিকে রক্ষা করা না হলে বাংলাদেশ থেকে গ্রামটি সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যাওয়ার শঙ্কা গ্রামবাসীর। প্রতিনিয়ত পানির স্রোতধারা কলসির মুখে ধাক্কা দেয়ায় ধাপে ধাপে ভাঙন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামটির উত্তর দিকে নতুন করে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে।
কার্বারী অ্যাসোসেয়শনের সভাপতি আনন্দ মোহন ত্রিপুরা জানান, রামগড় উপজেলা বিভিন্ন এলাকা যেমন- লাচাড়িপাড়া, বড়খেদা, কাশিবাড়ি, কার্বারীপাড়া, বল্টুরামটিলা, মন্দিরঘাট, পরশুরামঘাট, বৈদ্যপাড়া, ডাক বাংলোঘাট এসব এলাকার নদীরপাড় রক্ষা খুব দ্রুত প্রয়োজন বলে মনে করেন। এদিকে আনন্দপাড়া, রামগড় বাজার ঘাট, থানাঘাট, দা রোগাপাড়া, মহামুনী ও ফেনীরকুল সীমান্তে শহর রক্ষা বাঁধ হিসেবে নির্মিত সিসি ব্লকগুলি ফেনী নদীর পানিতে বেশির ভাগ তলিয়ে যাচ্ছে। এক যুগ আগে অপরিকল্পিতভাবে এসব সিসি ব্লক নির্মাণ করায় হুমকিত রামগড় শহর, এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী।
গ্রামের প্রবীন ব্যক্তি থিংথোয়াই মারমা জানান, কলসির আকৃতিতে গড়া সমতল গ্রামটি এখন রামগড় উপজেলার একটি বৈচিত্রময় দৃষ্টিনন্দন কৃষি সমৃদ্ধ গ্রাম ও ব্যতিক্রমী পর্যটন এলাকা। তিন দিক থেকে সীমান্ত নদী ঘেরা গ্রামটির প্রবেশ মুখের ধারাবাহিক ভাঙনে আমাদের অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে হয়তো কোন এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবো বাংলাদেশ থেকে আমরা এখন বিচ্ছিন্ন এক জনপদের বাসিন্দা।
ওয়ার্ড মেম্বার থুইমং জানান, গ্রামটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন সব মহলকে অবহিত করা হলেও প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ সামান্য কয়েক লাখ টাকার সিসি ব্লক স্থাপন প্রকল্প হাতে নিলে গ্রামটির প্রবেশ মুখের ভাঙন রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় গ্রামটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে দেখা দেবে সীমান্ত জটিলতা আর সেতু বা সংযোগ পূর্ণস্থাপনে লাগবে কয়েক কোটি টাকা।
উপজেলা চেয়ারম্যান বিশ্ব প্রদীপ কুমার কারবারী বলেন, কলসির মুখে ভাঙনের খবর পেয়ে আমি এলাকাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। ভাঙনটি রক্ষায় বিলম্ব হলে গ্রামটি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ এ বিষয়ে বলেন, খবরটি শুনে আমি ভাঙনটি পরিদর্শন করেছি। জেলা প্রশাসক ফেনী নদীর দ্রুত ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহায়তায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন