নীলগঞ্জকে করোনাভাইরাস অনেকের চাকরি কেড়ে নিয়েছে। পেশা বদলের অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। শহর থেকে পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন এমন অনেকে ভীষণ কষ্টে দিনযাপন করছেন। গ্রামে তো আর শহরের কাজ নেই। তারপরও এখন কিছু একটা করার তাগিদে গ্রামে আসা লোকজন বিভিন্ন দিকে ছুটছেন।
এসবের পরও করোনায় জীবন নীল হয়ে গেলেও ব্যতিক্রম দেখা গেছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়। এই উপজেলার একটি ইউনিয়নের নাম নীলগঞ্জ। নামই অনেক কিছু বলে দেয়। নীল মানে কষ্ট। করোনার শুরুতে সত্যিই নীলগঞ্জে অনেকের জীবনে কষ্ট ডেকে আনে। কিন্তু না, বেশ কিছুদিন পর সেই কষ্টের মোড় ঘুরে যায় এক যুবকের উদ্যোগে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের মো. হাসান করোনার শুরুতে ভেঙে পড়েন। চোখে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই তিনি দেখতে পাননি। একদিকে ভয় ঘরের বাইরে পা রাখলে যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছাড়তে হয়। এসব ভাবনা এক পর্যায়ে মাথা থেকে দূরে ছুড়ে ফেলে দেন। সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে ঘরের বাইরে পা রাখেন। এরপর থেকে হাসানকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তিনি বর্তমানে গোটা উপজেলায় যুব সমাজের জন্য আইকন।
হাসান ঘরের বাইরে বের হয়ে হাঁস পালনের উদ্যোগ নেন। এই হাঁস নীলগঞ্জ ইউনিয়ন থেকে গোটা উপজেলায় সবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে। হাঁসের খামার করে আর্থিকভাবে অনেকেই স্বচ্ছল হওয়ার পাশাপাশি পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে দিনযাপন করছেন। হাঁস পালন করে অনেেকরই ভাগ্যের চাকা বদলে গেছে।
করোনার প্রথম দিকে ঘরবন্দি হাসান অভাব-অনটনের মধ্যেও হ্যাচারি থেকে ২৫০টি হাঁস কিনে শুরু করেন হাঁস পালন। অর্থনৈতিক পিছুটানের মধ্যেও তিনি পিছপা হননি। করোনার সময় হাতে কোন কাজ না থাকায় নগদ টাকার সঙ্কট দেখা দেয়। ধার-দেনা করে হাঁসের খাবার কিনেন।
হাঁস পালনর মাধ্যমে শুরু হয় হাাসনের পথচলা। তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে খামারে প্রায় পাঁচশত হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ডিম পাওয়া যায় ১৫০টি। প্রতিটি ডিম ১০ টাকায় বিক্রি করে আয় হয় দেড় হাজার টাকা। এছাড়া তিন মাস পর প্রতিটি হাঁস বিক্রি করেন ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। হ্যাচারি থেকে প্রতিটি হাঁসের বাচ্চা কিনতে হয় ২৫ থেকে ২৮ টাকা করে। পরিপক্ক হতে খাবার এবং ওষুধসহ পরিচর্চায় খরচ হয় ১৫০ টাকা। খামারি হাসান বলেন, করোনার সময় সংসারে অভাব দেখা দিলে কোনো কাজ খুঁজে পাননি । চিন্তা-ভাবনা করে কিছু হাঁস পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। নিজে না খেয়ে সন্তানের মত হাঁসগুলোকে লালন-পালন করেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এখন প্রতিদিন লাভের মুখ দেখছেন। হাঁসের খাবারের জন্য খুব একটা বেশি খরচ হয় না। ভোরে খোলামেলা বিলে হাঁসগুলো ছেড়ে দেয়ার পর সন্ধ্যার দিকে ঘরে ফিরিয়ে নেন। প্রতিমাসে ডিম ও হাঁস বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। সংসার থেকে অভাব নামক শব্দটি বিদায় নিয়েছে।
একই এলাকার মো. ফারুক খান জানান, হাসানের সফলতা দেখে অনেকেই হাঁসের খামার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এখন আর গ্রামের লোকজনদের ডিম বা হাঁস কিনতে বাজারে যেতে হয় না। মো. ফতে আলী নামে অপর এক যুবক জানান, হাসানের মতো হাঁসের কামার করার স্বপ্ন তিনি দেখছেন।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, হাঁসের খামার করে হাসান দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিজের বেকারত্ব ঘুচিয়ে এখন এলাকার যুবকদের বেকারত্ব দূর করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনোয়ার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। জেলায় অনেক হাওড় ও বিল রয়েছে। এর ফলে স্বল্প খরচে হাঁসের খামার করে বেকারত্ব দূর করে প্রচুর আয় করা সম্ভব। ডিম ও হাসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারের মালিকরা। প্রাণীসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের সবসময়ই পরামর্শ ও সহায়তা দেয়া হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন