আমিনুল হক, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে
মিরসরাই উপজেলার কিছু সড়ক সংস্কার হলেও এখনো অর্ধশত জনবহুল গুরুত্বপূর্ণ সড়কের বেহাল দশা কাটেনি। বরং দীর্ঘসময় ধরে অবহেলিত থাকলেও এসব সড়ক নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট থেকে ১৬ নম্বর সাহেরখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের দশা দেখলে মনে হবে এই উপজেলার কোনো অভিভাবক নেই। নেই স্থানীয় সরকার বা প্রকৌশল বিভাগ। দীর্ঘ বছরের পর বছর কোনো কোনো সড়ক সকলের কাছেই অবহেলিত হয়ে আসছে। ভোট এলেই এসব সড়ক সংস্কার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দেন প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। এলাকাবাসীর দাবি, অতিশিগগিরই এসব সড়কের সংস্কার কাজ করে যেন মানুষকে ভোগান্তি থেকে রক্ষা করা হয়। উপজেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিজামপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সাহেরখালী বেড়িবাঁধ সংযোগ সড়ক। গত দুই বছর পূর্বে সড়কটির সংস্কার কাজ করলেও নি¤œমানের কাজের কারণে তা বেশিদিন টেকেনি। সামান্য বৃষ্টি হলে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে যান চলচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। অথচ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চারটি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের হাবিলদারবাসা-অলিনগর সড়কের চিত্র দেখলে মনে হবে এটি চাষ দেয়া জমি। স্থানীয় জনসাধারণ সড়কটি সংস্কারের আবেদন জানাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। কিন্তু কোনো কিছু হচ্ছে না। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শত শত মানুষ চলাচল করে থাকে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অতিরিক্ত বালু বোঝাই ট্রাকের কারণে সড়কের করুণ অবস্থা হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা নিজামউদ্দিন বলেন, মূলত বালু বোঝাই ট্রাকের কারণে সড়কের এমন ভগ্নদশা হয়েছে। প্রতি বছর বালু টেন্ডারে ১৫ ভাগ টাকা রয়েলটি নেয়া হয়। সেই টাকা দিয়ে সড়কের উন্নয়ন কাজ করলে এমন অবস্থা হতোনা। একই ইউনিয়নের মধ্য জয়পুর পূর্ব জোয়ার গ্রামের আবদুল জব্বার সড়কটি যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ হাজার হাজার মানুষকে। ফলে ওই সড়ক দিয়ে এলাকার জনসাধারণ যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। স্থানীয় চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন আমি মাত্র দায়িত্বগ্রহণ করেছি, এসব রাস্তাঘাট শিগগিরই সংস্কারের সকল উদ্যোগ নেয়া হবে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আবুতোরাব সড়কের কিছু স্থানে বেহাল অবস্থা। আবুতোরাব বাজারের প্রবেশমুখে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ার কারণে বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে যায়। এতে করে জনসাধারণের দুর্ভোগের শেষ নেই। এই বিষয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান কবির নিজামী বলেন, এই বিষয়ে আমরা সড়ক বিভাগকে জানিয়েছি, আশা করছি দ্রুত সংস্কার করা হবে। উপজেলার হাইতকান্দি, সাহেরখালী ও ডোমখালী সড়কের অবস্থা খুবই নাজুক। মনিরহাট থেকে গজারিয়া সাহেবেরহাট বাজার পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘ সময় ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। উপজেলার ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের হাবিবউল্লাহ ভূঁইয়া সড়ক ও নিজামপুর রেলস্টেশন সড়কের অবস্থা করুণ। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে রাস্তা ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বলেন, মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় বেশিরভাগ সড়কের কাজ শেষ। দুএকটি সড়ক বাকি থাকলেও তাদের তালিকা আমাদের কাছে রয়েছে। খুব শীঘ্রই বাকি সড়কগুলোর সংস্কার কাজ করা হবে। এই বিষয়ে উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়কের সংস্কার কাজ শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে আমরা কাজ করবো। আশা করছি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সব সড়কের সংস্কার কাজ করা সম্ভব হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন