শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

ইসলামের দৃষ্টিতে পরনিন্দা

আফতাব চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০২১, ১১:৪৬ পিএম

যদি কোন লোক অন্য কারও অনুপস্থিতে কিছু বলে, যা তার সামনে বললে সে অসন্তুষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে, তাহলে এসব কিছুই গিবত বা পরনিন্দা। কারও পিছনে বা অনুপস্থিতে কোনও সত্য নিন্দার বিষয় বলাটাও গিবত। হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, তোমরা কি জান যে, পরনিন্দা কী? সাহাবিরা বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (স.)-ই বেশি জানেন। তিনি বলেন, আপন ভাইয়ের অনুপস্থিতেতে তাঁর সম্পর্কে এমন কথা বলা যা তার অপছন্দ হয়, তা-ই পরনিন্দা। একজন জিজ্ঞেস করলেন আমি যদি আমার ভাইয়ের এমন দোষ আলোচনা করি যা বাস্তবিকই তার মধ্যে আছে, এটা কি পরনিন্দা? যদি ওই দোষ যা তুমি বর্ণনা করছ তার মধ্যে থাকে তবে তুমি তার গিবত বা নিন্দা করলে, আর যদি ওই দোষ তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার উপর অপবাদ আরোপ করলে।’ দুটোই অপরাদ।

তাই বলা হয়েছে, গিবত বা পরনিন্দা একটি জঘন্য পাপ। আল্লাহ পরনিন্দাকে ঘৃণা, চরম অপদার্থ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং এর জঘন্যতম তীব্রতা প্রকাশ করতে অসাধারণ উদাহরণের অবতারণা করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা কি তোমাদের মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে রাজি হবে? ভাইয়ের মাংস খাওয়া হারাম, মহাপাপ। তাছাড়া মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া তো আরও অনেক বড় পাপ এবং মানুষের রুচিবিরুদ্ধ। সুতরাং পরনিন্দা দ্বিগুণ পাপ, এটা অনেক বড় গোনাহ। রাসুল (স.) বলেছেন মেরাজে আমাকে যখন জাহান্নামে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি দেখলাম কিছু লোকের জিহ্বা তাদের পিঠের সঙ্গে আটকানো রয়েছে। তখন অনেক সাহাবি জিজ্ঞাসা করলেন তারা কে? তখন রাসুল (স.) বললেন তারা ওইসব লোক যারা পরনিন্দা করতো।’ নিন্দাচর্চা মানুষের কু-স্বভাবের অন্যতম। মানুষ যদি শুধু নিন্দা করা থেকে মুক্ত থাকতো তবে সমাজ অনেক উন্নতির দিকে এগিয়ে যেত। কিন্তু গঠনমূলক নিন্দার আমি বিরোধী নই। আমাদের সমাজে নিন্দার প্রচলন এত বেশি যে, এটাই একটি ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও কোনও রাজনীতিবিদের পতিপক্ষের নিন্দা না করলে তার পেটের ভাত যেন হজম হয় না। বক্তৃতার ছলে মঞ্চে দাঁড়িয়েই শুরু করেন প্রতিদ্বন্ধীর নিন্দা। হাটে-মাঠে নিন্দাই হয় প্রচারের মূল বক্তব্য। এই নিন্দুকশ্রেণি কবি, লেখক, সাহিত্যিক, ওস্তাদ, মা-বাবা, ভাই-বোন এমনকী আল্লাহর প্রেরিত পয়গম্বরদেরও নিন্দা করে। এই পেশাদার নিন্দুকের জন্য বেহেশতের পথ বন্ধ। কুরআন এর সাক্ষ্য দেয় ‘প্রত্যোক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য রয়েছে দুর্ভোগ।’

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে নিকৃষ্টতম তারা, যারা পরোক্ষ নিন্দা করে, বন্ধুদের মধ্যে বিবেদ সৃষ্টি করে, এরা নিরপরাধ লোকদের দোষ খুঁজে ফিরে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যখন আমি মেরাজে গেলাম তখন আমি এমন কিছু লোকের উপর দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ তামার ছিল। ওই নখ দিয়ে তারা নিজ নিজ চেহারা ও সিনা আঁচড়ে জখম করছিল। আমি হযরত জিব্রাইল (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা ? জিব্রাইল (আঃ) বলেন, এইসব লোক মানুষের মাংস খেত অর্থাৎ মানুষের গিবত করতো ও তাদের সম্মান নষ্ট করতো। ’ যখন তিনি বললেন, ‘গিবত ব্যভিচার থেকে বেশি মারাত্মক। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে রাসুলুল্লাহ (স.) গিবত করা ব্যভিচার থেকে বেশি মারাত্মক কীভাবে ? রাসূল (স.) বললেন মানুষ যদি ব্যভিচার করে ফেলে অতঃপর তওবা করে প্রত্যাবর্তনের দৃঢ় সংকল্পে করে নেয় আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করেন। কিন্তু পরনিন্দাকারীকে যতক্ষণ পর্যন্ত ওই ব্যক্তি ক্ষমা না করে যার নিন্দা সে করেছে ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমা করা হয় না। তাই পরনিন্দা একটি নিকৃষ্ট পাপ। পরনিন্দাকারী এবং পরনিন্দা শ্রবণকারী বা সুযোগপ্রদানকারী উভয়ই একই পাপে পাপিষ্ট। পরকালে উভয়ই সমান শাস্তি ভোগ করবে। পরনিন্দার ফল খারাপই হয় মারাত্মকভাবে। কেননা, কেউ কারও সাক্ষাতে অথবা অসাক্ষাতে নিন্দা করলে যার নিন্দা করা হয় স্বভাবতই তার ক্রোধ হয়। ফলে তাদের মধ্যে ঘটে অপ্রীতিকর ঘটনা। এছাড়া নিন্দা করলে মানুষ সাধারণত নিরুৎসাহ ও লজ্জিত হয়ে পড়ে। তার দ্বারা যে মূল্যবান কার্য সম্পাদন হওয়ার কথা, সে ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, কোনও কবি, লেখক, বৈজ্ঞানিক বা দেশপ্রেমিক সমাজের জন্য বা পরকালের জন্য যদি কিছু দান করতে যান বা ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য কিছু রেখে যেতে চান, আর নিন্দুকের দল যদি তার বিরূপ সমালোচনা করে তার কার্য বন্ধ করে দেয়, তবে সে নিন্দুক কি সমাজের শত্রু নয় ? অনেক,অনেক প্রতিভাবান ব্যক্তি এ নিন্দুকের পাল্লায় পড়ে ধ্বংস হয়ে গেছেন। তাই পরনিন্দা থেকে সাবধানতা অবলম্বন করা একান্ত কর্তব্য।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন